Advertisement
E-Paper

কমিটির রিপোর্টের উপরে ঝুলে উড়ালপুলের ভাঙা-গড়া: মন্ত্রী

মাথার উপরে ঝুলে রয়েছে সাক্ষাৎ বিপদ। আতঙ্কে অনেকেই পাড়া ছেড়েছেন। অন্যেরা আসা-যাওয়া করছেন ঘুরপথে। পোস্তায় ভেঙে পড়া উড়ালপুলের চারপাশে এ ভাবেই উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে এলাকাবাসীর।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০১

মাথার উপরে ঝুলে রয়েছে সাক্ষাৎ বিপদ। আতঙ্কে অনেকেই পাড়া ছেড়েছেন। অন্যেরা আসা-যাওয়া করছেন ঘুরপথে। পোস্তায় ভেঙে পড়া উড়ালপুলের চারপাশে এ ভাবেই উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে এলাকাবাসীর।

এই ভাঙা উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী? প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, সেতু ভেঙে পড়ার আট মাস পরেও সরকারি তরফে এ বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট ঘোষণা হয়নি। মেলেনি কোনও আশ্বাসও। তা হলে এ ভাবে আর কত দিন? রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ভাঙা উড়ালপুলের ভাগ্য নির্ধারণ করতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে আইআইটি খড়্গপুর, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ভারতীয় রেলের সংস্থা ‘রাইটস’-এর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যে কমিটি গড়া হয়েছিল, তাদের রিপোর্ট এখনও আসেনি। সেই রিপোর্ট পেলে তবেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘ওই কমিটির রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। ওই কমিটি যা সুপারিশ করবে, আমরা তা-ই করব। ওরা যদি উড়ালপুলের বাকি অংশ ভেঙে দিতে বলে, তা হলে আমরা তা ভেঙে দেব। আর যদি উড়ালপুলের কিছু অংশ রেখে দিয়ে স‌ংস্কার করতে বলে, তবে সেটাই করা হবে।’’

যদি পুরনো উড়ালপুল ভেঙে নতুন ভাবে তা তৈরি করতে হয়, তা হলে তো বিশাল অঙ্কের টাকা লাগবে। সেই টাকার সংস্থান রাজ্য সরকার কী ভাবে করবে? এই প্রশ্নের জবাবে নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগে তো কমিটি রিপোর্ট দিক। তার পরে সব ঠিক হবে।’’

পোস্তার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খুদে স্কুলপড়ুয়া থেকে অশক্ত প্রবীণ— ভেঙে পড়া উড়ালপুলের নীচের রাস্তা সচারাচর কেউই ব্যবহার করেন না। বাসিন্দারা জানালেন, গত ৩১ মার্চ গণেশ টকিজ মোড়ে উড়ালপুল ভেঙে পড়ার মাসখানেকের মধ্যে ভাঙা অংশটুকু পরিষ্কার হয়েছে কেবল। কিন্তু হাওড়া ব্রিজ থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ এখনও যে ভাবে ঝুলে রয়েছে, যে কোনও সময়ে বড় বিপদের আশঙ্কা করছেন পোস্তা, গণেশ টকিজ, বিবেকানন্দ রোডের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘উড়ালপুল ভেঙে পড়ার মাস দুয়েকের মধ্যে সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই হল না।’’

গণেশ টকিজ মোড়ে উড়ালপুল লাগোয়া একটি স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘হাওড়া স্টেশন থেকে বাসে কাদাপাড়ায় নেমে উড়ালপুলের নীচে আসতে ভীষণ ভয় করে। মনে হয়, আবার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে না তো!’’

উড়ালপুলের বাকি অংশ ভেঙে ফেলার দাবিতে সরব হয়ে আগেই আন্দোলনে নামে ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গড়া ওই সমিতির তরফে রুজু হওয়া মামলা এখন বিচারাধীন। সমিতির সম্পাদক বাপি দাস বলেন, ‘‘আমরা বরাবরই বলে এসেছি, গোটা উড়ালপুলটাই ভেঙে ফেলা হোক। উড়ালপুল নিয়ে আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। ঘটনার সাত মাস পরেও স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে শুরু করে সাংসদ— কেউই এ বিষয়ে আমাদের মতামত নিলেন না।’’

বিবেকানন্দ রোডের একটি ফ্ল্যাটের চারতলায় সপরিবার থাকেন প্রৌঢ় মনোজ সান্থালিয়া। মনোজবাবুদের ফ্ল্যাটের গা ঘেঁষে গিয়ে উড়ালপুলটি শেষ হয়েছে গিরিশ পার্কের মোড়ে। উড়ালপুল ও ফ্ল্যাটের মাঝে দূরত্ব মেরেকেটে দু’ইঞ্চি। ফ্ল্যাটের গা ঘেঁষে উড়ালপুল থাকায় যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা মনোজবাবুদের। ২০১৩ সালে এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর স্মিতা বক্সীকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। উল্টে গত ৩১ মার্চ নিজেদের ফ্ল্যাটের কাছেই উড়ালপুল ভেঙে পড়ায় তাঁর কাকা আতঙ্কে বিবেকানন্দ রোড ছেড়ে বালিগঞ্জে চলে গিয়েছেন। মনোজবাবুর কথায়, ‘‘একটা উড়ালপুলই আমাদের পরিবারে ভাঙন ধরিয়ে দিল। এত বড় দুর্ঘটনার পরেও সরকারের টনক নড়ল না!’’ শুধু নিরাপত্তার অভাবে বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল লাগোয়া বিভিন্ন বাড়ির প্রায় ৪০ জন ভাড়াটে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।

উড়ালপুল ভেঙে পড়ায় মার খাচ্ছেন এলাকার ব্যবসায়ীরাও। গণেশ টকিজ মোড়ে একটি ওষুধের দোকানের কর্ণধার শম্ভুনাথ রায় বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার সাত মাস পরেও গণেশ টকিজ মোড় দিয়ে কোনও বাস না চলায় লোকজন আসেন না। আগের তুলনায় বিক্রি অনেক কমে গিয়েছে।’’ একই কথা বিবেকানন্দ উড়ালপুল লাগোয়া ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘সাত মাস পরেও গণেশ টকিজ মোড়ে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারল না প্রশাসন। আমাদের ভুগতে হচ্ছে।’’

flyover
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy