Advertisement
০৬ মে ২০২৪
বাগুইআটি

তরুণী হত্যায় বহু-সম্পর্কের দিকেই আঙুল

ঠিক কী কারণে কে বা কারা বাগুইআটির তরুণী সুভদ্রা হালদারকে খুন করেছে, বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি। তবে তাদের অনুমান, একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জেরেই খুন হতে হয়েছে বছর পঁচিশের ওই তরুণীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

ঠিক কী কারণে কে বা কারা বাগুইআটির তরুণী সুভদ্রা হালদারকে খুন করেছে, বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি। তবে তাদের অনুমান, একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জেরেই খুন হতে হয়েছে বছর পঁচিশের ওই তরুণীকে।

বাগুইআটির অশ্বিনীনগরের একটি ফ্ল্যাট থেকে মঙ্গলবার সুভদ্রার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজু সাউ নামে ওই তরুণীর ঘনিষ্ঠ এক যুবককে বুধবার রাতে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ ওই তরুণীর ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে। তাতে কয়েকটি ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে। সেই সূত্র ধরে আরও দু’তিন জন যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সুভদ্রার পরিচিত বেশ কয়েক জন জানান, একাধিক পুরুষের সঙ্গে ওই তরুণীর সম্পর্ক ছিল। এ ছাড়াও শহরের বেশ কয়েকটি পানশালায় নর্তকী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন সুভদ্রা।’’

কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশের অনুমান, উত্তর কলকাতার একটি যৌন পল্লির সঙ্গেও যোগ ছিল ওই তরুণীর। বহু পুরুষ-সংসর্গের সঙ্গেই সুভদ্রার বহু-নামের বৃত্তান্ত জেনেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে তারা জেনেছে, কুলতলির বাসিন্দা সুভদ্রাকে বছর দশেক আগে কাজ দেওয়ার নাম করে উত্তর কলকাতার যৌন পল্লিতে বেচে দেওয়া হয়েছিল।

সেখানেই বিকাশ সিংহ নামে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বিকাশকে বিয়ে করে মুম্বই চলে যান সুভদ্রা। সেখানে নাম বদলে তিনি হন সোনিয়া সিংহ। কলকাতায় ফেরার পরে জিতান সাহা নামে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। ফের বদলে যায় নামও। সোনিয়া সিংহ হয়ে যান সুনীতা সাহা।

পুলিশ জানায়, সুভদ্রার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল চারতলার একটি ফ্ল্যাটের চানঘরে। মৃতদেহের পাশে একটি বালিশও পাওয়া গিয়েছে। সুরতহালের পরে জানা যায়, তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে সেই আঘাত থেকে বাইরে রক্ত বেরোয়নি। পুলিশের সন্দেহ, মাথায় আঘাতের পরে সুভদ্রাকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়েছে। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরেও তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। সুভদ্রা মোবাইল ব্যবহার করলেও তাঁর ফোনটি পাওয়া যায়নি। আততায়ীরা তাঁর মোবাইল লোপাট করেছে বলেই পুলিশের সন্দেহ।

সুভদ্রার উপরে যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। গোয়েন্দা-প্রধান জানান, মৃতদেহে পচন ধরে গিয়েছিল। তাই খুনের আগে ওই তরুণীকে কেউ ধর্ষণ করেছিল কি না, তদন্তকারীরা এখনও সেই ব্যাপারে নিশ্চিত নন।

কলকাতায় ফিরে সুভদ্রা যাঁকে বিয়ে করেছিলেন, সেই জিতান সাহা থাকেন যাদবপুরে। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে জিতান তদন্তকারীদের জানান, সুভদ্রার সঙ্গে তিনি থাকতেন না। ফোনে অবশ্য তাঁদের যোগাযোগ ছিল। স্ত্রীর সঙ্গে রবিবার রাত দেড়টা পর্যন্ত তাঁর কথা হয়েছিল বলে তিনি মঙ্গলবার পুলিশকে জানান। জিতান ঠিক কথা বলছেন কি না, সেই ব্যাপারেও পুলিশ নিশ্চিত নয়। জিতান পুলিশকে আরও জানান, অশ্বিনীনগরে তাঁর স্ত্রীর যে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, তা তিনি জানতেন। কিন্তু তার ঠিকানা তাঁর জানা ছিল না। রবিবার রাত দেড়টার পরে সুভদ্রার ফোন বন্ধ হয়ে যায় বলে জিতানের দাবি। সোমবারেও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে না-পেরে তিনি মঙ্গলবার স্ত্রীর খোঁজে অশ্বিনীনগরে যান। সঙ্গে নিয়ে যান সুভদ্রার পরিবারের লোকেদেরও।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বাগুইআটির যে-ফ্ল্যাটে সুভদ্রার দেহ পাওয়া গিয়েছে, সেটি বিকাশের কেনা। একসঙ্গে মুম্বইয়েও থাকতেন তাঁরা। বিকাশ মহিলা পাচারের কাজে যুক্ত ছিল। সম্ভবত সেই কারণেই সুভদ্রা কখনওই বাগুইআ়টির ফ্ল্যাটে নিয়ে যাননি জিতানকে। তবে একাধিক পুরুষের সঙ্গে যে সুভদ্রার সম্পর্ক ছিল, জিতান-বিকাশ বৃত্তান্ত থেকে পুলিশের কাছে সেটা পরিষ্কার। তারা জানায়, বিকাশ এখন মুম্বইয়ে আছেন। তাঁর স্ত্রী-সন্তান আছেন। তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Baguiati Police Subhadra Halder Bidhannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE