Advertisement
১৭ মে ২০২৪

মরা মাছ ভাসছে সরোবরে, শুরু তদন্ত

দিন পাঁচেক আগে প্রথম কয়েকটি মরা মাছ ভাসতে দেখেছিলেন প্রার্তভ্রমণকারীরা। এর পর থেকেই সরোবরের জলে কোথাও না কোথাও মরা মাছ ভাসতে দেখা যাচ্ছিল।

তুলে আনা হচ্ছে মরা মাছ। রবীন্দ্র সরোবরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

তুলে আনা হচ্ছে মরা মাছ। রবীন্দ্র সরোবরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৬:১৯
Share: Save:

দিন পাঁচেক আগে প্রথম কয়েকটি মরা মাছ ভাসতে দেখেছিলেন প্রার্তভ্রমণকারীরা। এর পর থেকেই সরোবরের জলে কোথাও না কোথাও মরা মাছ ভাসতে দেখা যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে সমস্যা বড় আকার নেয়। সরোবরের পূর্ব দিকে ঢাকুরিয়ার কাছে অসংখ্য মৃত মাছ ভেসে উঠতে থাকে। এর পরেই টনক নড়ে প্রশাসনের। রবীন্দ্র সরোবর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ঘটনাস্থলে আসেন রাজ্য পরিবেশ দফতরের আধিকারিকেরাও। মাছ মরার কারণ খুঁজতে তদন্ত শুরু করেন তাঁরা।

কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ ( কেআইটি)-কর্তৃপক্ষ জানান, রবীন্দ্র সরোবরে অনেক মাছই মারা গিয়েছে। তবে কত মাছ মারা গিয়েছে, তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয়। পরিবেশ দফতর জলের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়াও অন্যান্য কোনও কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দিন রবীন্দ্র সরোবরের যে অংশে মরা মাছ ভেসে উঠেছে, সেখানে ঢুকতেই দুর্গন্ধ নাকে আসে। সকালে প্রার্তভ্রমণকারীরা সরোবরের পাড়ে মাছ ভেসে উঠতে দেখতে পান। বেলা বাড়ার সঙ্গে একে একে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক মাছ একটি নির্দিষ্ট দিকেই ভেসে উঠতে দেখা যায়। খবর দেওয়া হয় কেআইটি কর্তৃপক্ষকে। তাঁরা হাতে-টানা ছোট গাড়ি দিয়ে মরা মাছ তুলে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

কেআইটি সূত্রে খবর, রবীন্দ্র সরোবরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়া হয়। কেআইটি ছাড়াও মৎস্য দফতর, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মাছ ছাড়ে। বছরখানেক আগে ভুটান কনসুলেট থেকেও সরোবরে মাছ ছাড়া হয়েছিল। এই মুহূর্তে সরোবরে যে মাছ রয়েছে সেগুলি মূলত হল সিলভার কার্প, কাতলা, রুই, চারা পোনা। তবে সরোবর থেকে মাছ তোলা হয় না।

সরোবরে এই ভাবে মাছ মারা যাওয়ার কারণ কী? রবীন্দ্র সরবোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুধীন নন্দী বলেন, ‘‘এই ঘটনার পিছনে নির্দিষ্ট কোনও কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনও ভাবে সরোবরের জল দূষিত হয়ে থাকতে পারে। সেই কারণেই পরিবেশ দফতর জলের নমুনা পরীক্ষা করছে। এ দিন সরোবরের তিনটি জায়গা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও জলের নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সংলগ্ন কোনও নিকাশি নালা থেকেও সরোবরের জল দূষিত হতে পারে। জলের নমুনার রিপোর্ট যতক্ষণ পর্যন্ত না পাওয়া যায়, ততক্ষণ এই ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

প্রশ্ন ওঠে, সরোবরের জল দূষণ রোধে কেআইটি কর্তৃপক্ষ কী

ব্যবস্থা নেন? সুধীনবাবু জানান, প্রতি মাসেই পরিবেশ দফতর জলের নমুনা সংগ্রহ করে তার রিপোর্ট কেআইটি-কে দেয়। গত মাসেও জল পরীক্ষার রিপোর্টে কোনও রকম দূষণ পাওয়া যায়নি। তবে এ দিনের এই ঘটনার পরেই কেআইটি কর্তৃপক্ষ জলে চুন এবং ওষুধ দিয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

অধ্যাপক তথা মৎস্য বিশেষজ্ঞ সুমিত হোম চৌধুরী বলেন, ‘‘বাতাসে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকলে অনেক সময়ে তা জলকণার সংস্পর্শে এসে ‘অ্যাসিড’ বৃষ্টি ঘটায়। প্রাক বর্ষার বৃষ্টিতে এই ধরনের ‘অ্যাসিড’ বৃষ্টি বেশি হয়। বর্ষার আগে এই ধরনের বৃষ্টিতে অনেক সময়ে অনেক জায়গায় মাছ মারা যায়। এই ধরনের বৃষ্টি সরোবরের মাছ মরে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে জলে কোনও কেমিক্যাল আছে কি না, তাও দেখা দরকার। তার থেকেও মাছ মারা যেতে পারে।’’

রবীন্দ্র সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে যে কমিটি রয়েছে, তার অন্যতম সদস্য সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরোবররে জলের দূষণ থেকেই এই মড়ক লাগার আশঙ্কা বেশি। সরোবর পরিষ্কার রাখতে যে সমস্ত নির্দেশিকা রয়েছে, তা মানা হচ্ছে না। সরোবরে স্থানীয়দের স্নান বন্ধ করা যায়নি। সাবান এবং তৈলজাত দ্রব্য থেকে জলে দূষণ হতে পারে। পুলিশ ও কেআইটি কর্তৃপক্ষ এই কমিটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা করছি।’’

কেআইটি কর্তৃপক্ষও জানান, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি থেকেই গিয়েছে। সেগুলি জোরদার করার চেষ্টা হচ্ছে। আশা করা যায় আটোসাঁটো নিরাপত্তা থাকলেই এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করা যাবে।

রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘জলাভূমি রক্ষা করা এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন দফতরকে এক ছাতার তলায় নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা কার্য়কর করতে পারলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindra Sarabor Lake Fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE