Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের শহরে বেগুনি ঢেউ

মাথায় বেগুনি রিবন বাধা উন্মত্ত ভিড় চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘কেকেআর! কেকেআর!’’ শিশুর ঠাকুর দেখার উৎসাহ নিমেষে উধাও। ভয়ে চোখ জড়োসড়ো।

উন্মাদনা: ম্যাচের আগে কেউ ব্যস্ত জার্সি-পতাকা বিক্রিতে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

উন্মাদনা: ম্যাচের আগে কেউ ব্যস্ত জার্সি-পতাকা বিক্রিতে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

রেড রোডের এক দিকের ফুটপাত থেকে অন্য পারে যেতে দড়ি পড়েছে। দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে দুই পুলিশকর্মী। পিছনে বেগুনি রঙা পোশাকের ভিড়। বাবার কাঁধে চড়ে বসা এক শিশু ভিড়ের মধ্যে থেকেই বলল, ‘‘ঠাকুর দেখব। অসুর।’’ মাথায় বেগুনি রিবন বাধা উন্মত্ত ভিড় চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘কেকেআর! কেকেআর!’’ শিশুর ঠাকুর দেখার উৎসাহ নিমেষে উধাও। ভয়ে চোখ জড়োসড়ো।

আইপিএল মরসুমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম ম্যাচ ঘিরে রবিবার দুপুরে উন্মাদনার এমনই একের পর এক খণ্ডচিত্র তৈরি হল ইডেন গার্ডেন্সের বাইরে। সন্ধ্যায় প্রিয় দলের জয় দেখে সেই উন্মাদনা মাঠের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেল ধর্মতলা মোড় পর্যন্ত। মাঝে অবশ্য তাল কেটেছিল বৃষ্টি। যদিও তা দর্শকদের উত্তেজনায় জল ঢালতে পারেনি। বাড়ি ফেরার পথে এক কলেজপড়ুয়া তো বলেই ফেললেন, ‘‘বৃষ্টির সময়ে একটু ভয় করছিল। শেষ ছয়টায় ভয় কেটে গিয়েছে। জয় দিয়ে শুরু হল। সব ম্যাচে আসতে হবে।’’

সব ম্যাচে আসতে চায় নিউ ব্যারাকপুরের রনি পালও। তবে অন্যদের মতো এখনই ম্যাচ দেখার সম্ভাবনা নেই তার। টানাটানির সংসারে আপাতত রনির লক্ষ্য টুপি, জার্সি বিক্রি করা। সে বলে, ‘‘আমার কাছে জার্সির দাম ১২০ টাকা। ভাল বিক্রি হলে শেষের দিকে টাকা জমিয়ে একটা ম্যাচ দেখা যেতে পারে।’’ জানাল, গত বারও সব ম্যাচে ইডেনে আসার ইচ্ছে ছিল তার। তবে তখন শিয়রে মাধ্যমিক থাকায় রনিকে ইডেনে আসতে দেননি বাড়ির লোক। এ বার সেই সমস্যা নেই। রনির কথায়, ‘‘মাধ্যমিক শেষ। এখন ছুটি চলছে। বাড়িতে বলে বন্ধুর সঙ্গে টুপি, জার্সি বিক্রি করতে চলে এসেছি।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কেউ আবার ব্যস্ত প্রিয় দলের নাম লেখাতে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

রনির মতই রোজগারের আশায় ধর্মতলায় এসেছে আর এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অভি রায়। দমদম লেনিনগড়ের বাসিন্দা অভি জানায়, ভাল বিক্রি হলে ১৫০-২৫০ টাকা লাভ হয়। রনির মতো সে-ও চায়, টাকা জমিয়ে অন্তত একটা ম্যাচ
দেখতে। এ ভাবেই জার্সি, টুপি, গালে রং করে দেওয়ার ব্যবসা জমে ওঠে ম্যাচের দিনগুলোতে।

এ দিন দুপুরের পর থেকে ইডেনের উদ্দেশে বোঝাই হয়ে ছুটেছে মেট্রো। খেলা দেখতে আসা যাত্রীদের
ভিড়ে ধর্মতলায় তখন পা রাখা দায়। মেট্রো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি দর্শকদের জন্য বাড়তি ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে পুলিশকেও। ধর্মতলা চত্বরে গাড়ি রাখার জন্য ছিল দু’টি পৃথক
জায়গা। ছিল নির্দিষ্ট লেন ধরে হেঁটে যাওয়ার ব্যবস্থাও। সেই লেনে ইডেনে যাওয়ার পথে শোভাবাজারের বাসিন্দা অপূর্ব বসু আবার বললেন, ‘‘ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে শহরের
রং তো সবুজ, গেরুয়া আর লাল। আইপিএল-যজ্ঞ শুরু হওয়ার পরে এ যেন এক অন্য জগৎ। বেগুনির ছড়াছড়ি..!’’ কথা শেষ হওয়ার আগেই অপূর্ববাবুর পুত্র অর্পণ বায়না ধরল, গালে বেগুনি রং করাবে।

হেসে অপূর্ববাবু বললেন, ‘‘দেখেছেন বেগুনির চাহিদা?’’ অন্তত এখনকার জন্য অন্য রংগুলো সব ফিকে লাগছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE