Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নেশা বন্ধ কী ভাবে, চিন্তায় যাদবপুর

গত ডিসেম্বর মাসেও বহিরাগতেরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মদ এবং মাদক সেবন সংক্রান্ত বিষয়ে সব পক্ষকে নিয়ে বারবার মিছিল, আলোচনাসভা করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

কয়েক মাস আগে এক মাদকবিরোধী মিছিলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ফাইল চিত্র

কয়েক মাস আগে এক মাদকবিরোধী মিছিলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

সূর্য ডুবলেই মাদক সেবনের মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিলের ধার, খেলার মাঠ, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের চাতাল। এ অভিযোগ বহু দিনের। তা নিয়ে যত কথাই হোক, পরিস্থিতি যে বিশেষ বদলায়নি, সে প্রমাণও মিলেছে বারবার। গত ডিসেম্বর মাসেও বহিরাগতেরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মদ এবং মাদক সেবন সংক্রান্ত বিষয়ে সব পক্ষকে নিয়ে বারবার মিছিল, আলোচনাসভা করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মাদক সেবন নিয়ন্ত্রণে তেমনই একটি আলোচনাসভায় এসে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘যাদবপুরের মতো দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সব কার্যকলাপ চলতে থাকলে তা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।’’ তা হলে উপায় কী? পরিস্থিতি বদলাতে কী করার কথা ভেবেছেন তিনি? এ বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য দৃঢ়। যে কোনও শাস্তির থেকে আলাপ-আলোচনাতেই বেশি বিশ্বাসী তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের আবার বক্তব্য, আলোচনার থেকেও বেশি জরুরি মাদকের জোগান বন্ধ করা। যত ক্ষণ তা না করা
যাচ্ছে, অন্য কোনও দাওয়াইতেই কাজ হবে না। সেপ্টেম্বরের পরে নভেম্বরে আবারও মাদক বিরোধী মিছিল আয়োজিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই কার্যক্রমের অন্যতম উদ্যোক্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম মাইতি সোমবার বলেন, ‘‘বাইরে থেকে মাদক সরবরাহ হয়। অতীতে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর কর্তারা ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে এই মাদক সরবরাহকারীদের ধরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশেই যে ড্রাগ চক্র সক্রিয়, তা নিয়ে বারবারই অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরে এ নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন।’’ বাইরে থেকে মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে প্রশাসনিক স্তরে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি বলেও মত গৌতমবাবুর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ জানালেন, ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ৩০০ ফুটের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা যাবে না। প্রশাসনকে এই বিষয়টি আগেও জানানো হয়েছে বলে বক্তব্য তাঁর। তবে মাদক দ্রব্য বিক্রি নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু জানানো হয়নি বলেই জানালেন তিনি।

এক বার কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব গিয়েছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি অ্যান্টি-ড্রাগ স্কোয়াড তৈরি করার। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের কোথায় বসে কে মাদক সেবন করছেন, তা চিহ্নিত করার কাজ করবে স্কোয়াড। ঠিক হয়েছিল, বহিরাগত কেউ ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের সময়ে ধরা পড়লে, তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আর যদি কোনও পড়ুয়া ধরা পড়েন, তবে তাঁর কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেই। প্রসঙ্গত, মদ-মাদকের দাপটে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে অ্যান্টি-ড্রাগ স্কোয়াড তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি বেশি দূর এগোয়নি।

যে কাজ এগোয়নি, তা এগোনোর দায়িত্ব নিতেও বিশেষ উদ্যোগী নন কেউ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে মাদক বিক্রি হওয়াটা একটি সামাজিক সমস্যা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তার ছোঁয়াচ এড়াতে পারছে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন সোমাশ্রী চৌধুরীর বক্তব্য, মাদক সেবন এক ধরনের সামাজিক ব্যাধি। বাইরে থেকে যদি এই ব্যাধি ক্যাম্পাসে ছড়ায়, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। রক্ষীদেরও আরও কঠোর হতে হবে। কিন্তু সে সবের দায়িত্ব নেবে কে, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। আর সে প্রশ্নের ফাঁক গলে অবাধেই নিয়মিত মত্ত হয়ে থাকছে সন্ধ্যার যাদবপুর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE