প্রতীকী ছবি।
মহানগরের শব্দদূষণ নিয়ে আমজনতার অভিযোগের শেষ নেই। এ বার সেই শব্দের দাপটে অতিষ্ঠ খোদ জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি। বৃহস্পতিবার শব্দদূষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে বিচারপতি নিজেই সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ির পাশে মাইক বাজে। শব্দের দাপটে ঠিক মতো ঘুম হয় না।’’ যা শুনে পরিবেশকর্মীদের অনেকে বলছেন, শব্দদূষণের অভিযোগ এ বার আক্ষরিক অর্থেই আদালতের ‘কানে’ পৌঁছেছে।
শব্দদূষণ নিয়ে এমন ঘটনা অবশ্য আগেও ঘটেছে। বছর কয়েক আগে ট্রামের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে এজলাসে বসেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র। এর আগে শব্দবাজির বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় সল্টলেকে কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতির বাড়ির সামনে দেদার শব্দবাজি ফাটানো হয়েছিল।
শব্দদূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তার শুনানিতেই এ দিন শব্দের দাপটের কথা ওঠে। সুভাষবাবুর সওয়ালে ঠাঁই পেয়েছে মাধ্যমিকের সময়ে মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান এবং তেমনই এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের এক মন্ত্রী ও পুলিশের হাজিরার উপস্থিতির বিষয়টিও। সুভাষবাবুর বক্তব্য, রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষমতাশালীরাই বেশি শব্দদূষণ করেন। ফলে আমজনতা অভিযোগ জানাতে ভয় পায়। বস্তুত, এ বারের মাধ্যমিক চলাকালীনও মাইক বাজানোর অভিযোগ মিলেছে।
আমজনতার অভিজ্ঞতা বলছে, এই মাইকের দাপট নতুন নয়। পুজো বা অন্য কোনও উৎসব এলেই তার দাপট প্রবল ভাবে করে বেড়ে যায়। যে সব দিনে পুলিশ-প্রশাসনও অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ফি বছরই বিসর্জনের সময়ে শোভাযাত্রায় নিষিদ্ধ ‘ডি জে বক্স’ (পেল্লায় মাপের সাউন্ড বক্স) বাজানো হলেও পুলিশি ধরপাকড় চোখে পড়ে না। প্রশ্ন উঠেছে, এই শব্দের উপদ্রবের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কি নেই?
এ দিন বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বে়ঞ্চ বলেছে, শব্দদূষণ ঠেকাতে শুধু ধরপাকড় বা জরিমানা নয়, প্রশাসনের উচিত সমস্যার উৎসে গিয়ে সমাধান করা। মাইক ও সাউন্ড বক্স তৈরির কারখানা এবং দোকানে গিয়ে নজরদারি করতে হবে। বিকট শব্দ করে চলা ডিজেল জেনারেটরের ক্ষেত্রেও একই দাওয়াই দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশ, পরিবেশ দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে পুরো বিষয় খতিয়ে দেখে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সুভাষবাবু এ দিন আদালতকে জানান, কলকাতায় সাউন্ড লিমিটার ব্যবহারের চল নেই। ফলে এক দিকে তার যেমন চাহিদাও নেই, তেমন জোগানও নেই। আদালতের নির্দেশ, সাউন্ড লিমিটারের ব্যবহার কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা-ও প্রশাসনকে দেখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy