Advertisement
E-Paper

তথ্য গোপনেই বিপর্যয়ের বীজ

চিকিৎসকদেরই একাংশের অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুরসভার নির্দেশে চিকিৎসকদের অনেকেই ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যুতে ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ডেথ ডিউ টু হেমারেজিক ফিভার’ লিখলেও, ডেঙ্গি রোগের নামগন্ধ করছেন না। কসবায় বৃহস্পতিবার ডেঙ্গিতে ম্যালেরিয়ায় বাবা-ছেলের মৃত্যুর পরে কলকাতা পুরসভাও তথ্য চেপে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৫
পরীক্ষা: ড্রামে কি রয়েছে মশার লার্ভা, দেখছেন পুরকর্মীরা।

পরীক্ষা: ড্রামে কি রয়েছে মশার লার্ভা, দেখছেন পুরকর্মীরা।

পরজীবী বিশেষজ্ঞদের মতে, কারও সংক্রামক রোগ হলে তাঁর এলাকায় সংক্রমণের চরিত্রটি ভাল ভাবে জানা জরুরি। এটা না জানলে প্রতিরোধের পরিকল্পনা তৈরি করা অসম্ভব। এটা দেখাই জনস্বাস্থ্যের মূল কথা বলে মত ওই বিশেষজ্ঞদের।

অভিযোগ, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর বা নানা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ এই কথাটাই অগ্রাহ্য করে চলেছে। বছর কয়েক আগে উত্তরবঙ্গে অজানা জ্বরের রিপোর্ট প্রকাশের জন্য এক স্বাস্থ্য কর্তাকে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল। হালে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে জমা জলে মশার লার্ভা পাওয়ার পরেও গোপনে পরিদর্শন হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে সংক্রামক রোগ নিয়ে তথ্য চেপে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।

চিকিৎসকদেরই একাংশের অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুরসভার নির্দেশে চিকিৎসকদের অনেকেই ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যুতে ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ডেথ ডিউ টু হেমারেজিক ফিভার’ লিখলেও, ডেঙ্গি রোগের নামগন্ধ করছেন না। কসবায় বৃহস্পতিবার ডেঙ্গিতে ম্যালেরিয়ায় বাবা-ছেলের মৃত্যুর পরে কলকাতা পুরসভাও তথ্য চেপে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কখনও তারা বলছে, রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। কখনও বলছে, বাবা চেন্নাই থেকে ডেঙ্গি রোগ নিয়ে এসেছিলেন। কখনও বলছে, এক জনের হার্টের অসুখ ছিল, অন্য জন মৃগী রোগী। কিন্তু দু’জনের ডেথ সার্টিফিকেটেই ডেঙ্গিতে আক্রান্তের কথা লেখা আছে।
পরিবারের সদস্যেরাও জানান, দু’জনেই সম্প্রতি চেন্নাই যাননি।

এডিসের লার্ভা। শুক্রবার, কলকাতা মেডিক্যালে।

এক পরজীবী বিশেষজ্ঞ প্রশাসনের এ হেন প্রতিক্রিয়ায় বিস্মিত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘রোগটা যত ধরা পড়বে, ততই নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হবে। কোথায় কীটনাশক ছড়ানো দরকার, কোথায় টীকাকরণ প্রয়োজন তা নিশ্চিত করা যাবে।’’

পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা জানান, সংক্রমণের খবর চেপে রাখলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। এলাকায় কীটনাশক ছড়ানো হয় না। অসুস্থ ব্যক্তি ‘সুস্থ’ হিসেবে ঘুরে বেড়ান। জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্তা জানান, বছর কয়েক আগে শহরে ডেঙ্গির এতটা বাড়াবাড়ির মূল কারণ ছিল তথ্য চেপে রাখার প্রবণতা। উত্তরবঙ্গে অজানা জ্বরে মহামারীর কারণও তাই। দক্ষিণ দমদম পুরসভার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।

ওই প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্তা জানান, প্রতি বছর দেখা যাচ্ছে একই জায়গা থেকে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া শুরু হচ্ছে। ঠিক সময়ে রোগটা ধরা গেলে, ঠিক সময়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চালু হলে প্রতি বছর নিয়ম করে আতঙ্কে থাকতে হবে না মানুষকে। ‘‘তথ্য গোপন রাখার মধ্যেই নিহিত রয়েছে বিপর্যয়ের বীজ’’— মনে করিয়ে দিয়েছেন ওই প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্তা।

—নিজস্ব চিত্র।

Dengue Mosquitoes Vector Born
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy