Advertisement
E-Paper

‘পরিষ্কার’ জলেই গেল ২৭ লক্ষ!

সূত্রের খবর, ২০১৭-’১৮ সালে ১ কোটি ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করে মোট ৮৪০ মেট্রিক টন সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড কেনা হয়েছিল। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে আন্ত্রিক পরিস্থিতির সময়ে ২৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে অতিরিক্ত ২১০ মেট্রিন টন পরিমাণের ওই দ্রবণের অর্ডার দেওয়া হয়।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৩
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

পুরসভার সরবরাহ করা জলে কোনও সমস্যাই পাওয়া যায়নি! আন্ত্রিক পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত এই কথাই দাবি করে এসেছে কলকাতা পুরসভা। আন্ত্রিক পরিস্থিতিতে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় একাধিক বার দাবি করেছিলেন, পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জলে কোনও সমস্যাই পাওয়া যায়নি। উল্টে বোতলবন্দি জলে সমস্যা রয়েছে ধরে নিয়েই তা প্রমাণ করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পুরোদমে অভিযানে নেমেছে পুরসভা। কিন্তু পুরসভা সূত্রের খবর, আপাত সমস্যাহীন ওই জলকে জীবাণুমুক্ত করতেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্লোরিনের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে।

পুরসভা সূত্রের খবর, এমনিতে জল জীবাণুমুক্ত করতে ক্লোরিন দ্রবণ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়েই থাকে। তার মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। কিন্তু এমনই সময়ে জল জীবাণুমুক্ত করতে মাসে যেখানে ৪০ মেট্রিক টন লাগে ওই দ্রবণ, সেখানে আন্ত্রিক পরিস্থিতি চলাকালীন পরপর দু’সপ্তাহেই ওই দ্রবণ প্রায় ১২০ মেট্রিক টন লেগেছে। কারণ ধাপার জল কতটা ‘পরিস্রুত’, তা নিয়ে সংশয় থাকার জন্যই অতিরিক্ত ওই দ্রবণ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুর প্রশাসনের একাংশ। এমনকী, আন্ত্রিক পরিস্থিতি সামলাতেই পুরসভার বাড়তি ওই ‘তৎপরতা’ বলে মনে করছেন অনেকে। ফলে জলে যে কোনও সমস্যা নেই, পুর কর্তৃপক্ষের সেই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পুর আধিকারিকদের একাংশই।

পুর অর্থ বিভাগ সূত্রের খবর, ২০১৭-’১৮ সালে ১ কোটি ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করে মোট ৮৪০ মেট্রিক টন সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড কেনা হয়েছিল। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে আন্ত্রিক পরিস্থিতির সময়ে ২৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে অতিরিক্ত ২১০ মেট্রিন টন পরিমাণের ওই দ্রবণের অর্ডার দেওয়া হয়। যা সারা বছরের প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত! এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘সব সময়েই জল পরিশোধন ও জীবাণুমুক্ত করতে ওই দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এগুলোকে জলের মেডিসিন বা জলের ওষুধ বলতে পারেন! কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে ওই দ্রবণের মাত্রা বাড়ানো হয়েছিল।’’ যদিও পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এটা নিছকই ঘটনাচক্র! কারণ, বার্ষিক বরাদ্দ ৮৪০ মেট্রিক টনের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ ওই দ্রবণ কেনার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল।

অথচ পুর আধিকারিকদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, সচরাচর তো এমন ব্যবস্থা চোখে পড়ে না! এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এক দিকে বলা হচ্ছে জলে কোনও সমস্যাই নেই। অথচ অন্য দিকে যে সময়ে পুরসভার সরবরাহ করা জলে সমস্যা রয়েছে বলে চারদিকে শোরগোল উঠেছে, সে সময়েই জল জীবাণুমুক্ত করতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা হচ্ছে। এটা যদি সমাপতনও হয় তা হলে বলতে হবে, খুবই আশ্চর্য সমাপতন!’’

প্রসঙ্গত, সব পরিশোধন প্রক্রিয়ার শেষে সরবরাহ করার আগের ধাপে জলকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তার আগে গঙ্গা থেকে যে অপরিশোধিত, ঘোলা জল প্লান্টে আসে, তা পরিশোধন করার প্রাথমিক পর্যায়ে সলিড অ্যালাম, লিকুইড অ্যালাম বা পলি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড (লিকুইড) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তার পরে নানা ধাপে তা পরিষ্কার করার পরে চূড়ান্ত পর্যায়ে জীবাণুমুক্ত করার জন্য কঠিন বা তরল রূপে জলে ক্লোরিন মেশানো হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিকে ‘ক্লোরিনেশন’ বলা হয়।

সে কারণে লিকুইড ক্লোরিন, সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড-সহ কঠিন বা তরল দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। ধাপা, গার্ডেনরিচ, পলতা-সহ একাধিক জলপ্রকল্পে ও বুস্টার পাম্পিং স্টেশনে জল পরিশোধন ও জীবাণুমুক্ত করার জন্য ওই দ্রবণগুলি ব্যবহার করে পুরসভা। যদিও এক পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘জল পরিশোধন ও জীবাণুমুক্ত করতে আমরা সব রকম প্রস্তুতিই নিয়ে রাখি। প্রয়োজনমতো কখনও-সখনও নিয়ন্ত্রিত ভাবে সেই মাত্রা বাড়ানো হয়। এর মধ্যে আলাদা কোনও ব্যাপার নেই। এটা রুটিন কাজ।’’

KMC sterilize water Drinking water
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy