বছর দু’য়েক আগে শহরে যে সমস্ত গাছ রয়েছে, সেগুলির অবস্থা সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার জন্য গাছ গণনার পরিকল্পনা নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। রাজ্য বন দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কথা ঘোষণা করা হলেও বন দফতরের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। ফলে প্রকল্পটি থমকে যায়। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা নিজেরাই এ বার শহরে গাছের গণনা শুরু করবে।
কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘শহরে প্রতি বছরই বনসৃজন হয়। তার পরে গাছগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, সেগুলির কোনও সরকারি তথ্য পুরসভার কাছে নেই। সেটা থাকা একান্ত জরুরি। বন দফতরের সঙ্গে গণনার কথা হলেও তারা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়নি। মাস তিনেকের মধ্যেই পুর কর্তৃপক্ষ গাছ গণনা শুরু করবে।’’
বন দফতরের এক কর্তার কথায়, কলকাতা পুরসভা ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে বন দফতর গাছের চারা বিতরণ করে ঠিকই। কিন্তু শহরের গাছ গণনার জন্য যে পরিকাঠামো থাকা দরকার, তা বন দফতরের নেই। তা ছাড়া, শহরের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি এলাকায় বন দফতর নিজেরা গাছ বসায়। ফলে, তাদের পক্ষে শহরে কোথায়, কত গাছ লাগানো হয়েছে সেই ব্যাপারে ধারণা করাও কার্যত অসম্ভব। তা ছাড়াও এ ব্যাপারে সরকারি কোনও নির্দেশও বন দফতরের কাছে ছিল না বলে জানান ওই কর্তা।
কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতরের এক আধিকারিক জানান, শহরের গাছের বিষয়ে তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন ঝড়ে কোন গাছগুলি পড়ে যেতে পারে, তা চিহ্নিত করা। সেই সব গাছ সরিয়ে নতুন গাছ পোঁতার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতি বছরই কালবৈশাখীর ঝড়ে বেশ কিছু গাছ পড়ে যায়। এর জেরে প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটেছে।
পুর কর্তৃপক্ষ জানান, শহরে বনসৃজন নিয়ে ইতিমধ্যেই পুরসভা নতুন নীতি ঘোষণা করেছে যে বট, অশ্বত্থ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া এবং কদমের মতো বড় গাছ শহরে লাগানো যাবে না। তার পরিবর্তে ছাতিম, জারুল, নিমের মতো গাছ লাগানো হবে। এ ছাড়াও, লাগানো হবে রঙ্গন জাতীয় কিছু ফুলের গাছ। পরিবেশবিদদের একাংশের অভিযোগ, প্রতি বছরে বনসৃজন হলেও সঠিক ভাবে গাছ পোঁতা হয় না। তাই সেগুলি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। অনেক সময়ে পুরসভার অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন সংগঠন বৃক্ষরোপণ করে।
উদ্ভিদবিদ রঞ্জিত সামন্তের কথায়, খুব নিচু জমি, যেখানে জল দাঁড়ায় সেখানে গাছের চারা পোঁতা উচিত নয়। একই ভাবে দু’টি গাছের মধ্যে ন্যূনতম ১০ ফুট দূরত্ব রাখা প্রয়োজন। তা ছাড়াও, যে কোনও গাছের শিকড় মাটির ভিতরে অন্তত আড়াই ফুট প্রবেশ করানো প্রয়োজন। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু পুরসভা গাছের গণনা করলেই হবে না, অন্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা কোথায়, কী গাছ লাগাচ্ছে তার তালিকাও পুরসভার কাছে জমা দিলে বনসৃজন প্রকল্প সফল হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy