কিছু দিন আগেই একসঙ্গে ১৬টি কুকুরছানা খুনের সাক্ষী থেকে এ শহর। এ শহরই আবার ছুটে বেরিয়েছে মাঞ্জা সুতোয় আহত এক পাখিকে বাঁচাতে। যদিও অবশেষে মৃত্যু হয়েছে সেই চিলের। তবু কিছু তো শুশ্রূষা সে পেল! এটাই শান্তি।— বলছে পাখির ত্রাতা সেই পরিবার।
এনআরএসের কুকুর-কাণ্ডের সেই নিষ্ঠুরতা যেমন সংবাদমাধ্যমে ধরা পড়েছিল, তেমনই প্রচার পাওয়া উচিত ইতিবাচক এই ঘটনাগুলিও। যা দেখে কয়েক জন মানুষ অন্তত শিখতে পারবেন।— বলছেন মনোবিদেরা।
দিন কয়েক আগের ঘটনা। বাগানের বেশ কিছুটা জায়গায় চাপ চাপ রক্ত। বাড়ির বাসিন্দারা দেখেন, কিছু দূরে পড়ে ছটফট করছে একটি চিল। রক্ত মাখা তার শরীর। পেটের কাছে একের পর এক মাঞ্জা সুতোর প্যাচ! আলিপুর রোডের একটি বাড়ি থেকে সম্প্রতি এমন অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল চিলটি। প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে বাসিন্দারাই পাখিটিকে পশু হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ধারাল মাঞ্জায় ডান দিকের ডানা শরীর থেকে কেটে গিয়েছিল।
শহরের রাস্তায়, বিশেষ করে মা উড়ালপুলে মাঞ্জা সুতোয় আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে প্রায়ই। ধারাল সুতোয় পোশাক এমনকি, পিঠের শক্ত ব্যাগ এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়ে রক্তাক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকের। চলতি মাসের শুরুতেই শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় নামে অফিস ফেরতা হাওড়ার এক যুবক মাঞ্জা সুতোয় জখম হন। মা উড়ালপুলের নতুন র্যাম্পে সুতোর চাপে ওই যুবকের মুখে বাঁধা রুমাল ছিঁড়ে যায়। হাজার তৎপরতা সত্ত্বেও মাঞ্জা সুতোর ফাঁদ কাটতে পারেনি পুলিশ। মা উড়ালপুল সংলগ্ন তপসিয়া, বেনিয়াপুকুর, তিলজলা, কড়েয়া, ট্যাংরা এবং প্রগতি ময়দান থানার নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে। পাখিপ্রেমীরা বলছেন, ‘‘মানুষ আহত হলে শোরগোল হয়। কিন্তু, কত পাখির যে মাঞ্জা সুতোয় মৃত্যু হচ্ছে সে খবর কে রাখে!’’
চিলটিকে উদ্ধার করেছিল ভাদুড়ি পরিবার। বাড়ির বড় মেয়ে, পেশায় আইনজীবী অনামিকা ভাদুড়ি জানাচ্ছেন, তিনিই চিলটিকে আহত পড়ে থাকতে দেখে প্রাথমিক শুশ্রূষা করেন। অনামিকার বাবা বিশ্বজিৎ এবং মা অনুরাধা চিকিৎসক। তাঁরা আহত পাখির রক্ত ধুয়ে ডানায় ব্যান্ডেজ করে দেন। এর পরে চিলটিকে নিয়ে যাওয়া হয় আলিপুর চিড়িয়াখানায়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, বাইরের পশু-পাখির চিকিৎসা করা হয় না। এর পরে তাঁরা চিলটিকে নিয়ে দেশপ্রিয় পার্কের পশু ক্লিনিকে যান। সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হলে তাঁরা চিলটিকে নিয়ে মুকুন্দপুরের পশু হাসপাতালে যান। অস্ত্রোপচারে ডানাটি বাদ যায়। পরে চলতি সপ্তাহেই পাখিটির মৃত্যু হয়।
পাখি বিশেষজ্ঞ তথা প্রকৃতি সংসদের সভাপতি কুশল মুখোপাধ্যায় জানান, ঘুড়ির সুতোয় আহত হয়ে সবচেয়ে বেশি পাখি মারা যায় গুজরাতে। গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গেও এ ধরনের মাঞ্জা সুতোয় পাখি-মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। কুশলবাবুর কথায়, ‘‘চিল অনেক উপর দিয়ে ওড়ে। তার-ও নিস্তার নেই! এখনই এই চিনা মাঞ্জা বন্ধ করা না গেলে সমস্যা আরও বাড়বে।’’