Advertisement
E-Paper

সিন্ডিকেটের মানচিত্রে খাস কলকাতাও

এন্টালির পটারি রোডে শুক্রবার রাতে গুলিতে এক যুবকের জখম হওয়ার পিছনে সেই নির্মাণ ব্যবসা নিয়ে সিন্ডিকেটের লড়াই। প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই দাবি করছে পুলিশ। রাজারহাট, নিউ টাউনের পরে সম্প্রতি সল্টলেকেও সিন্ডিকেটের আঁচ লাগার কথা জানা গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদাদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০০:৪০

এন্টালির পটারি রোডে শুক্রবার রাতে গুলিতে এক যুবকের জখম হওয়ার পিছনে সেই নির্মাণ ব্যবসা নিয়ে সিন্ডিকেটের লড়াই। প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই দাবি করছে পুলিশ। রাজারহাট, নিউ টাউনের পরে সম্প্রতি সল্টলেকেও সিন্ডিকেটের আঁচ লাগার কথা জানা গিয়েছে। এ বার এন্টালিতে সেই একই সমস্যার জেরে গুলি চলল।

শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ পটারি রোডের ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন বাপ্পা মিত্র নামে এক যুবক। তাঁর পায়ে গুলি লাগে। এই নিয়ে গত ১৮ দিনে এন্টালিতে দু’বার গুলি চলল। লালবাজারের কর্তারা যখন বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের উপর জোর দিচ্ছেন, তখন এন্টালি যে কলকাতা পুলিশের পক্ষে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন বাহিনীর অফিসারেরাই। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে এন্টালির কনভেন্ট রোডে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। সেটিও ছিল দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে বিরোধের পরিণাম।

পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতের ঘটনায় যে দু’টি গোষ্ঠীর কথা জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে সিন্ডিকেট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকা দখলের লড়াই চলছে। একটির পাণ্ডা সুজয়, অন্যটির টোটন। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলিতে জখম যুবক বাপ্পা দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য ছিলেন না। দমদমের বাসিন্দা ওই যুবক পটারি রোডে তাঁর মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। বিবদমান দু’টি গোষ্ঠীর একটির চাঁই টোটনের বাড়ি বাপ্পার মামাবাড়ির পাশে। গণ্ডগোলের সময়ে সুজয়ের দলের লোকজন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাপ্পাকে ‘ভুলবশত’ গুলি করেছে বলে এলাকার মানুষের একাংশের বক্তব্য। বাপ্পা এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনার পরে সুজয়, বাপি ও চুনীলাল নামে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে চুনীলালকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানাচ্ছে, এর আগেও তিলজলা, কসবা-সহ কিছু এলাকায় সিন্ডিকেটের লড়াইকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। যাতে আহতও হয়েছেন কয়েক জন।

শুক্রবার রাতে এন্টালির ঘটনা নিয়ে পুলিশ জানাচ্ছে, পটালি রোড, মতিঝিল-সহ এন্টালি এলাকার বিভিন্ন তল্লাটে ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহ করা নিয়ে পুরনো গণ্ডগোল রয়েছে সুজয় ও টোটনের দলের মধ্যে। কোনও নির্মাণকাজ হলেই কারা ইট, বালি, সিমেন্ট সরবরাহের বরাত বাগিয়ে নেবে, তা নিয়ে দু’পক্ষের বিবাদ লেগেই থাকে। যদিও একটা সময়ে দু’জন একই সঙ্গে কাজ করত।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর দুই হল টোটন, সুজয় এবং তাদের সঙ্গীরা বেশির ভাগ সময়ে এলাকাছাড়া থাকলেও মাঝেমধ্যে সিন্ডিকেটের টাকা তুলতে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শুক্রবার বিকেল থেকে এলাকায় ঘুরতে দেখা যায় টোটনকে। ছিল তার সঙ্গীরাও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুক্রবার বিকেলে তাদের দাবি মতো টাকা না দেওয়ায় এক রাজমিস্ত্রিকে মারধর করে টোটনের দল। তার পরেই রাতের ওই ঘটনা।

পুলিশ জেনেছে, প্রথমে রাত ৯টা নাগাদ ৪ নম্বর পটারি রোডে কয়েক জন যুবকের মধ্যে বচসা শুরু হয়। ওই যুবকদের মধ্যে ছিল সুজয়, টোটন ও চুনীলাল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বচসার মধ্যেই ওয়ান শটার থেকে গুলি চালায় এক জন। তা গিয়ে লাগে বাপ্পার পায়ে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সুজয় ও তার দলের লক্ষ্য ছিল টোটন। তাই তারা এলাকায় ঢুকেছিল। কিন্তু অন্ধকারে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি লাগে জটলার পাশে দাঁড়ানো বাপ্পার পায়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, সুজয় ও টোটন— এই দু’জনের বিরুদ্ধেই পুলিশের খাতায় একাধিক অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বছর দুয়েক আগে এক অনুষ্ঠান বাড়িতে নাচগানকে কেন্দ্র করে চন্দন ঘোষ নামে এক যুবককে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে টোটনের বিরুদ্ধে। সুজয়ের বিরুদ্ধে পুলিশকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। তবে বাসিন্দাদের দাবি, পালিয়ে থাকলেও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায় করছে তারা।

শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা পুরো থমথমে। টহল দিচ্ছে পুলিশ বাহিনী। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এলাকাছাড়া হয়েও টোটন ও সুজয়ের এত দাপট।

এক পুলিশকর্তার দাবি, ‘‘আমরা বহু দিন ধরেই ওদের খুঁজছি। কিন্তু এলাকায় অল্প সময়ের জন্য ঢুকেই বেরিয়ে যাচ্ছে ওরা।’’

syndicate Kolkata crime police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy