দিনে দিনে দিল্লি মেট্রোর ঔজ্জল্য যত বাড়ছে, ততই কমছে কলকাতা মেট্রোর। পাশাপাশি, রোজ বাড়ছে দিল্লি মেট্রোর যাত্রাপথ। অথচ কলকাতায় পথ বাড়া দূর অস্ত্, যেটুকু রয়েছে, সেই লাইনেই ঠিক মতো চালানো যাচ্ছে না মেট্রো। আলো নিভে, চাকা আটকে বার বার ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের। কিন্তু হেলদোল নেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের। যাত্রীদের বিদ্রুপ, ‘‘একটুতেই ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে, এ যেন হেঁপো রোগী।’’
গত সপ্তাহে পর পর দু’দিন থমকে গিয়েছিল মেট্রো। রবিবার দুপুরেও পর পর দু’বার দু’টি ট্রেন আটকে পড়ে যতীন দাস পার্ক স্টেশনে। প্রথম ঘটনায় দু’একটি কামরা টানেলের মধ্যে থাকলেও পরের ঘটনায় প্রায় গোটা পাঁচেক কামরা টানেলের মধ্যেই রয়ে গিয়েছিল। ফলে যাত্রীরা অল্প-বিস্তর আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছিলেন। সব মিলিয়ে এ দিনও যাত্রীরা ভুগেছেন প্রায় আড়াই-তিন ঘণ্টা।
মেট্রো সূত্রে খবর, রবিবার দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ আপ লাইন ধরে যাচ্ছিল একটি এসি মেট্রো। যতীন দাস পার্ক স্টেশনে ঢোকার মুখে সেটি আটকে যায়। তবে বেশির ভাগ কামরাই স্টেশনে থাকায় যাত্রীদের মধ্যে তেমন ভীতি তৈরি হয়নি। প্রায় ২০ মিনিট চেষ্টার পরে মেট্রোকর্মীরা ট্রেনটি ফের চালু করেন। মিনিট পনেরো ঠিক মতো ট্রেন চলার পরে ফের বিভ্রাট শুরু হয়। ৩-১০ নাগাদ যতীন দাস পার্ক স্টেশনে একই জায়গায় ফের আটকে যায় অন্য একটি রেক। ওই ট্রেনটির প্রায় পাঁচ-ছটি কামরা টানেলের ভিতরে ছিল, বিদ্যুৎ সংযোগও ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ফলে কামরায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই মেট্রোকর্মীরা তাঁদের অন্য দরজা দিয়ে বার করে আনেন।
মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র অবশ্য বলেন, “রেকের কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি। যতীন দাস পার্ক স্টেশনের বিদ্যুতের তৃতীয় লাইনে কোনও ত্রুটি হয়েছে। সেই জন্যই দু’টি ট্রেন একই জায়গায় আটকে পড়ে।” এ দিন দ্বিতীয় বার পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ার পরে দমদম থেকে ময়দান ও টালিগঞ্জ থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত মেট্রো চলেছে।
দেশে প্রথম মেট্রো চলে কলকাতায়। দিল্লি মেট্রো তার অনেক পরে। অভিযোগ, প্রথম থেকেই কলকাতা মেট্রোর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেনি মেট্রোকর্তা, কর্মী বা রেল বোর্ড। তাতেই বেড়েছে বিপত্তি। এখন কলকাতা মেট্রো যে ভাবে চলছে তা অনেকটা দিনগত পাপক্ষয়ের সামিল বলেই মত যাত্রীদের একাংশের। ‘ন্যাশনাল রোড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর একটি সমীক্ষাপত্রে সম্প্রতি বলা হয়েছে, দিল্লির মতো ব্যস্ত শহরে যেটুকু পথে মেট্রো চালানো যাচ্ছে তার জেরেই রাস্তা থেকে দিনে ১.১৭ লক্ষ গাড়ি কম চলছে। এতে এক দিকে কমেছে দূষণ, অন্য দিকে কমছে যানজট। এমনকী দিল্লি মেট্রো এখন দিল্লি ছাড়িয়ে (ন্যাশনাল ক্যাপটিভ রিজিওন মেনে) অন্যত্র ছুটতে চলেছে।
কলকাতার মেট্রো সম্প্রসারণ প্রস্তাবে আশার আলো দেখেছিলেন অনেকেই। ভাবা হয়েছিল, দিল্লির মতো এই মেট্রোও শহর ও শহরতলির যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। যেমন এখন করছে দিল্লি মেট্রো। কিন্তু জমিজটে সেই প্রকল্পও বর্তমানে বিশ বাঁও জলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy