প্রতীকী ছবি
ভাগাড়ের মৃত পশুর মাংসে রয়েছে একাধিক ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়া। বজবজের ভাগাড় থেকে তুলে আনা মাংস পরীক্ষার পরে বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ভাবে এমনটাই দাবি করেছেন বেলগাছিয়ায় প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের পরীক্ষাগারে কর্মরত গবেষকেরা।
ওই দফতর সূত্রের খবর, বজবজ থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসে অতিরিক্ত মাত্রায় টক্সিন মিলেছে। যা খেলে যে কেউ যে কোনও সময়ে স্নায়ুঘটিত জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। পুলিশ জানিয়েছে, ভাগাড় থেকে তুলে আনা মৃত পশুর মাংস ফর্মালিন মাখিয়ে সংরক্ষণ করা হত নারকেলডাঙার এক হিমঘরে। তার পরে তা পাঠানো হত শহরের বিভিন্ন রেস্তরাঁয়। বজবজের ব্লক প্রাণিসম্পদ বিকাশ আধিকারিক ভাগাড় থেকে সংগ্রহ করা ৫০০ গ্রাম মাংস নমুনা হিসেবে সল্টলেকে দফতরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। সেখান থেকেই ওই মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল বেলগাছিয়ার পরীক্ষাগারে।
দফতর সূত্রের খবর, সাত গবেষকের একটি দল ওই মাংস পরীক্ষা করেছেন। চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও তৈরি না হলেও প্রাথমিক ভাবে মাংসে একাধিক ব্যাক্টিরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন তাঁরা। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যে নমুনা এসেছিল, তা গবাদি পশুর পচা মাংস। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দু’দিনের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে জমা দেওয়া হবে।’’ অন্য দিকে, বুধবার রাতে সোনারপুরের পাঁচপোতা থেকে ভাগাড়ের মৃত পশু পাচার-চক্রের মূল পাণ্ডা বিশ্বনাথ ঘড়ুই ওরফে বিশুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে বৃহস্পতিবার আলিপুরের অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বিশুকে জেরা করে বারাসত থেকে পাকড়াও করা হয়েছে তার শাগরেদ শেখ সিকন্দরকেও।
পুলিশ সূত্রের খবর, বিশু বছর দশেক আগে নারকেলডাঙার হিমঘরে দু’টি গুদাম ভাড়া নিয়ে মাংসের ব্যবসা শুরু করেছিল। তার পারিবারিক মাছের ব্যবসা থাকলেও ওই সময়ে তা ছেড়ে দেয় সে। মধ্যমগ্রাম ও পাঁচপোতায় বাড়ি রয়েছে বিশুর। তার দুই স্ত্রী। ভাগাড়-কাণ্ডে একের পর এক অভিযুক্ত ধরা পড়ার পরেই গা-ঢাকা দিয়েছিল বিশু।
আরও পড়ুন: ১০ বছর ধরে চলছিল ভাগাড়ের মাংসের কারবার, যেত ভিন্ দেশেও
তদন্তকারীরা জানান, দিন তিনেক আগে বিশুর ছেলে ও জামাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তার পরেই বুধবার পাঁচপোতায় নিজের বাড়িতে আসা মাত্রই খবর চলে যায় ডায়মন্ড হারবার পুলিশের কাছে। ওই রাতেই বিশুর বাড়ি ঘিরে ফেলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঘণ্টা চারেক দফায় দফায় বিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় সে জানিয়েছে, বেশ কিছু ব্যবসায়ী তার কাছ থেকে মাংস কিনে কলকাতার বহু জায়গায় বিক্রি করত।
পুলিশ জানায়, বিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বসিরহাট-সহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সেই সূত্রে এক পরিবহণ ব্যবসায়ীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করেছে পুলিশ। কারণ, তদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁর সাহায্যে নেপালেও ওই মাংস সরবরাহ করা হত। ভাগাড়-কাণ্ডে এ পর্যন্ত বিশু-সহ ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন নারকেলডাঙা হিমঘরের দুই নিরাপত্তারক্ষী।
অন্য দিকে, নিউ টাউনের একটি মুরগি খামারের মাংস সরবরাহের খাতা পরীক্ষা করে ডানলপের এক রেস্তরাঁয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হানা দেন বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক ও চেয়ারম্যান পারিষদ দিলীপনারায়ণ বসু। সেখানে ফ্রিজারে প্যাকেটবন্দি পচা মাংস মিলেছে বলে অভিযোগ। অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘অন্যান্য রেস্তরাঁতেও অভিযান চলেছে। তবে এই রেস্তরাঁর কোনও রকম অনুমোদন নেই। তাই পুলিশ সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। সব জায়গা থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।’’ এ দিন হাওড়ার বিভিন্ন রেস্তরাঁয় তল্লাশি চালিয়ে মাংসের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy