Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Councilor

শুটিং বন্ধে কাউন্সিলরের ফতোয়া

ওই এলাকায় সিনেমা কিংবা সিরিয়ালের শুটিংয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্যানার লাগিয়েছেন কলকাতা পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহনকুমার গুপ্ত।

নিষেধাজ্ঞা: শোভাবাজারের একটি রাস্তায় এ ভাবেই ঝোলানো হয়েছে নির্দেশ। নিজস্ব চিত্র

নিষেধাজ্ঞা: শোভাবাজারের একটি রাস্তায় এ ভাবেই ঝোলানো হয়েছে নির্দেশ। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

সাইকেলে চড়ে এ গলি ও গলি ঘুরছেন অমিতাভ বচ্চন। মাথায় টুপি, পরনে খাকি ট্রাউজার্স আর পাঞ্জাবি। মাঝেমধ্যেই তাঁর ঘাম মুছিয়ে দিচ্ছেন জনা পাঁচেক তরুণ-তরুণী।

আরেক সন্ধ্যায় মত্ত যুবকের পিছু ছাড়াতে গড়াগ়়ড়ি খেয়ে মারপিট করছেন পরব্রত চট্টোপাধ্যায়। শেষে রাস্তায় পড়ে থাকা আদলা ইট দিয়ে শত্রুর মাথায় মেরে তাকে পরাস্ত করলেন তিনি। ঠিক পরের দিন, সুরমা লাগিয়ে বন্দুক হাতে পাড়া জুড়ে দৌড়োচ্ছেন দেব। পিছনে তাঁর সঙ্গীরা। কখনও দুর্গাপুজোয় সিঁদুর খেলছেন স্বয়ং বিদ্যা বালন।— শোভাবাজারের মসজিদ বাড়ি স্ট্রিট, ছিদাম মুদি লেন, কালী দত্ত স্ট্রিট, বেচারাম চ্যাটার্জি লেন জুড়ে এই সব দৃশ্যের কি যবনিকা পতন হতে চলেছে? কারণ ওই এলাকায় সিনেমা কিংবা সিরিয়ালের শুটিংয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্যানার লাগিয়েছেন কলকাতা পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহনকুমার গুপ্ত।

ব্যানারে লেখা, ‘সিনেমার ও সিরিয়ালের কোনও শুটিং মানুষের অসুবিধা করে রাস্তায় করা যাবে না। আবেদনে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর প্রতিনিধি মোহনকুমার গুপ্ত’। কাউন্সিলরের দাবি, নানা সময়ে শুটিংয়ের জেরে বাসিন্দাদের সমস্যা হয়। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতেই ব্যানারটি লাগানো হয়েছে। মোহনবাবুর কথায়, ‘‘এমনিতেই আমাদের এলাকায় অনেক সরু গলি। শুটিং হলে শয়ে শয়ে গাড়ি আসায় অনেক রাস্তা বন্ধ করে

দেওয়া হয়। এ সব নিয়েই প্রচুর অভিযোগ আসছিল।’’

পুরনো কলকাতার ছবি মানেই গলি-তস্য গলির শোভাবাজার। কড়িবরগা, রোয়াক, খড়খড়ি জানলার শ্যামবাজার ও শোভাবাজারের পুরনো বাড়ি। আর তাই টলিউড তো বটেই, বেশ কিছুদিন ধরে প্রথম সারির বলিউড এবং সাম্প্রতিক কালের দক্ষিণী সিনেমার শুটিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে শোভাবাজার এবং শ্যামবাজার এলাকা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি দক্ষিণী সিনেমার মারামারির শুটিং চলাকালীন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে গাছ ফেলা হয়েছিল। এর ফলে সমস্যা হওয়ায় শুটিং বন্ধ করতে রাস্তায় নামেন বাসিন্দারা। যদিও এলাকারই অন্য পক্ষের দাবি, শুটিং বাবদ মোটা টাকা কাউন্সিলর না পাওয়ায় ব্যানার লাগিয়েছেন তিনি। মোহনবাবুর জবাব, ‘‘কলকাতা তো ছেড়েই দিলাম। পাড়ার কয়েকটা ক্লাবকে দু’-পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মুম্বই, চেন্নাই থেকে এসে শুটিং করে যাচ্ছেন লোকে। মানুষ ভাবছেন আমি টাকা নিয়ে শুটিং করাচ্ছি। এ সবের দায় নেব কেন? লোকের অভিযোগে ব্যানার ঝুলিয়েছি। লোকে বললেই নিষেধাজ্ঞা উঠবে।’’

যদিও কাউন্সিলর এ ভাবে শুটিং বন্ধ করতে পারেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পরিচালক অনিক দত্ত বলেন, ‘‘শুটিংয়ের জন্য কখনও কখনও স্থানীয়দের সমস্যা হয় ঠিকই। আমাদের আরও একটু দায়িত্বশীল হতে হবে। তবে কাউন্সিলরের শুটিং বন্ধের কোনও অধিকার আদৌ আছে কি?’’ নিজের একটি অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এক কাউন্সিলর শুটিং বাবদ আমার থেকে টাকা চেয়েছিলেন। কাউন্সিলর বা পাড়ার ক্লাবে টাকা না দিলে অনেক সময়ে শুটিং করতে সমস্যা হয়।’’

যদিও রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘লালবাজার এবং রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে আগাম চিঠি দিয়ে জানিয়ে শুটিং করা যায়। কাউন্সিলর কোনও ভাবেই তা আটকাতে পারেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Councilor Poster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE