Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বোতাম ছুঁয়ে বিমানবন্দরে পথ চিনবেন ওঁরা

অধিকর্তা জানিয়েছেন, বিমান ধরতে এসে কলকাতা বিমানবন্দরে যাতে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে না-হয়, সে জন্য গত দেড় বছর ধরেই নতুন নতুন পরিষেবা চালু করা হচ্ছে।

নতুন: তৈরি হচ্ছে ট্যাকটাইল বসানো বিশেষ পথ। নিজস্ব চিত্র

নতুন: তৈরি হচ্ছে ট্যাকটাইল বসানো বিশেষ পথ। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে ঢুকলে তাঁদের প্রায়ই ঠোক্কর খেতে হয়েছে দাঁড় করিয়ে রাখা এসি মেশিন, সাজানো পাথরের মূর্তি বা বাহারি গাছের সঙ্গে। সেই দৃষ্টিহীন যাত্রীদের জন্য এ বার টার্মিনালের ভিতরে বসানো হচ্ছে বিশেষ পথ। ফুটখানেক চওড়া, টার্মিনালের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ওই পথে রুপোলি রঙের ছোট ছোট বোতাম বসানোর কাজ চলছে। সেখানে লাঠি ছোঁয়ালেই দৃষ্টিহীন যাত্রী বুঝে যাবেন, ওই পথ ধরেই তাঁকে যেতে হবে। একে ‘ট্যাকটাইল’ বলা হয়।

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এখন টার্মিনালের দোতলায় প্রধানত বিমানে চ়ড়ার জন্য নির্ধারিত এলাকায় প্রতিটি গেট থেকে ওই ট্যাকটাইল বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। মার্চে কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি গেট থেকে সেই পথ ধরে যাতে দৃষ্টিহীন যাত্রীরা বিমান সংস্থার চেক-ইন কাউন্টারে পৌঁছতে পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। কাজ এখনও চলছে। শেষ হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত জানিয়েছেন। পরে বিমানে করে এসে পৌঁছনোর নির্দিষ্ট এলাকাতেও সেই ট্যাকটাইল বসান হবে। অধিকর্তার কথায়, ‘‘টার্মিনালের কিছু জায়গায় একটি দু’টি ধাপও আছে। তার সামনেও ট্যাকটাইল বসানো হচ্ছে। আশা করি এ মাসেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’

অধিকর্তা জানিয়েছেন, বিমান ধরতে এসে কলকাতা বিমানবন্দরে যাতে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে না-হয়, সে জন্য গত দেড় বছর ধরেই নতুন নতুন পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। যেমন লিফটে ঘোষণার ব্যবস্থা রয়েছে। তেমনই লিফটের ভিতরে যে বোতাম রয়েছে, তা ট্যাকটাইলের বোতামের মতো উঁচু। যাতে হাত বুলিয়ে দৃষ্টিহীন ব্যক্তি বুঝতে পারেন, কী লেখা রয়েছে। হুইল চেয়ারে আসা যাত্রীদের জন্যও হাতের সামনে ফোন, পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে।

মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের টার্মিনালগুলিতে বছর খানেক আগেই এই ট্যাকটাইল বসে গিয়েছে। কিন্তু, ট্যাকটাইল দিয়ে হেঁটে যাওয়া দৃষ্টিহীন যাত্রীরা কী করে বুঝবেন, তাঁকে কোন টিকিট কাউন্টারে যেতে হবে? মুম্বই বিমানবন্দরের মুখপাত্র বলেন, ‘‘যাঁরাই হাতে লাঠি নিয়ে ট্যাকটাইল-পথ দিয়ে টার্মিনালের ভিতরে ঢোকেন, তাঁদের সঙ্গী থাকলে ঠিক আছে, নয়তো সাহায্য করার জন্য প্রতিটি বিমান সংস্থার এবং বিমানবন্দরের কর্মীরা থাকেন।’’

কলকাতায় ট্যাকটাইল প্রথম ব্যবহার শুরু করে মেট্রোরেল। আট বছর আগে মেট্রো স্টেশনগুলিতে দৃষ্টিহীনদের কথা ভেবে সেগুলি বসানো হয়েছিল। মেট্রো সূত্রের খবর, প্ল্যাটফর্মের ধারে যে হলুদ রেখা পেরিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তার আগেই ওই ট্যাকটাইল বসানো। দৃষ্টিহীনদের হাতের লাঠি ট্যাকটাইলস ছুঁলেই যাতে তাঁরা সতর্ক হয়ে যান।

দৃষ্টিহীনদের সুবিধার কথা ভেবে রাস্তার উপরে প্রথম ট্যাকটাইল বসানোর কাজ করেছিল জাপান। ১৯৬৭ সালে সে দেশের ওকাইয়ামা শহরে ট্যাকটাইল বসানো হয়। তার পরে নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় জাপান ছাড়াও আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে ট্যাকটাইল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

visually impaired passengers System Airport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE