Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Chhath Puja 2022

পুলিশ চাইলে তা হলে পারে! দুই সরোবরের চিত্র দেখে প্রশ্ন নানা মহলে

রবিবার দুপুর থেকেই দুই সরোবর ঘিরে পুলিশের যে তোড়জোড় চোখে পড়েছিল, তা দেখা গেল সোমবার ভোরেও। কিছু ক্ষেত্রে আগের দিনের চেয়ে যেন আরও কড়া বিধি বলবৎ করার চেষ্টা চার দিকে।

নজরে: সুভাষ সরোবরের রাস্তায় পুলিশি পাহারা। সোমবার সকালে। ছবি: সুমন বল্লভ

নজরে: সুভাষ সরোবরের রাস্তায় পুলিশি পাহারা। সোমবার সকালে। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস, চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩৩
Share: Save:

চাইলে তা হলে পারা যায়! রবিবার দুপুর থেকে রাত এবং সোমবার ভোর থেকে বেলা পর্যন্ত রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবর ঘিরে পুলিশের যে ভূমিকা দেখা গিয়েছে, তাতে এমনটাই মনে করছেন অনেকে। আদালতের নির্দেশ মানতে ছটপুজোর পুণ্যার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করা তো হয়েছেই, সরোবরের আশপাশে পুণ্যার্থী বোঝাই লরিও ঘেঁষতে দেয়নি পুলিশ। সে সব ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে সরোবরের চার দিকের রাস্তার প্রায় দু’কিলোমিটার আগে থেকে। কিন্তু সরোবর রক্ষায় এতটা তৎপর পুলিশ তা হলে অন্য ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হয় কী করে? রবীন্দ্র সরোবরের সামনে সোমবার ভোরে হাজির এক প্রাতর্ভ্রমণকারী বললেন, ‘‘আসলে চেষ্টাতেই খামতি থাকে। চেষ্টা করলে যে সব হয়, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে দুই সরোবরের পরিস্থিতিতে।’’

রবিবার দুপুর থেকেই দুই সরোবর ঘিরে পুলিশের যে তোড়জোড় চোখে পড়েছিল, তা দেখা গেল সোমবার ভোরেও। কিছু ক্ষেত্রে আগের দিনের চেয়ে যেন আরও কড়া বিধি বলবৎ করার চেষ্টা চার দিকে। সূর্য ওঠার আগেই রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে পৌঁছে জানা গেল, রাত দু’টো থেকেই নতুন করে পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে। সরোবরের চার দিকে মধ্যরাত থেকেই দু’জন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার টহল দিচ্ছেন। প্রতিটি গেটের কাছে রাখা হয়েছে এক জন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারকে। রাত আড়াইটে থেকে শুধুমাত্র রবীন্দ্র সরোবরের জন্যই নিয়োগ করা হয়েছে অন্তত ৫০০ পুলিশকর্মী। ভোরে সেখানকার একটি গেটের কাছে পৌঁছে দেখা গেল, প্রাতর্ভ্রমণকারীদের বোঝানোর জন্যই আলাদা করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীকে। বাইরে পাহারার পাশাপাশি তাঁদের কেউ কেউ রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে ঢুকে টহল দিতে শুরু করেছেন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই। ওই সরোবরের যে জায়গাগুলি দিয়ে অন্যান্য বার লোক ঢুকে পড়ার অভিযোগ ওঠে, সেখানেও টহল দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্র সরোবরের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে।

সেখানেই প্রাতর্ভ্রমণে হাজির, পেশায় স্কুলশিক্ষিকা নীলাঞ্জনা দত্তগুপ্ত বললেন, ‘‘এক দিন বাইরে হাঁটতে সমস্যা নেই। সরোবরটা বাঁচুক, এটা আমরা সকলেই চাইছিলাম।’’ একই দাবি মাঝবয়সি প্রাতর্ভ্রমণকারী শক্তিপদ হাজরার। তিনি বললেন, ‘‘২০২১ সালে আমরা পরিবেশকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে সরোবর বন্ধ রাখার পক্ষে অবস্থান করছিলাম। তখন আমাদের দিকে ইট-পাথর ছোড়া হয়েছিল। এ দিন যতটা না হাঁটতে এসেছি, তার চেয়েও বেশি এসেছি পুলিশ ঢিলেমি দিচ্ছে কি না, সেটা দেখার জন্য।’’ পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে আর এক প্রাতর্ভ্রমণকারী তনিমা বসু মন্তব্য করলেন, ‘‘তার মানে চেষ্টা করলেই যখন পারা যায়, তখন বুঝিয়ে কার্যোদ্ধারের চেষ্টা অন্য ক্ষেত্রে করা হয় কেন? এই বুঝিয়ে কার্যোদ্ধারের নামেই অতীতে ভুগতে হয়েছে।’’

তাঁরাই জানালেন, ২০১৮ সালে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো বন্ধের নির্দেশ আসার পরেও তা মানা হয়নি। ২০১৯ সালে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ ওঠে। সেই বছরই আবার রবীন্দ্র সরোবরের প্রায় সব ক’টি গেটের তালা ভেঙে ফেলে ভিতরে ঢোকেন পুণ্যার্থীরা। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তেমন কিছু না ঘটলেও ২০২১ সালে ফের ঢিলেমি দেখা যায় বলে অভিযোগ। সেই বছরই রবীন্দ্র সরোবররে ঢুকতে না দেওয়ায় পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সুভাষ সরোবর ঘিরে এমন অভিযোগ এত দিন ছিল না। তা সত্ত্বেও চলতি বছরে এই সরোবরটিকেও কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। রাত দু’টো থেকে সেখানেও মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। সূর্যের আলো ফোটার আগে থেকে বেলা পর্যন্ত সব ক’টি গেটে টহল দিয়ে গিয়েছেন বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারেরা। ভোরে সেখানে হাজির হয়ে শোনা গেল, কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘আগের রাতে ১০টায় ফিরে আবার রাত দু’টোতেই ডিউটি ধরতে হয়েছে। এ বার মাছি গলতে না দেওয়ার নির্দেশ ছিল।’’ তবে কি প্রথম থেকে এমন কড়া হওয়ার স্পষ্ট নির্দেশ থাকে না বলেই ভুগতে হয়? ওই পুলিশকর্মী প্রথমে মন্তব্য করতে না চাইলেও পরে গলা নামিয়ে বললেন, ‘‘কালীপুজোয় বাজি নিয়ে যা হল, তার পরে ভাল রকমই চাপ ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chhath Puja 2022 Rabindra Sarovar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE