Advertisement
E-Paper

সেনা বনাম পুলিশ নয়! ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্যই ট্রাক মহাকরণের সামনে আটকানো হয়, বলল লালবাজার

মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশ স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে যে, আইন লঙ্ঘন করে গাড়ি চালানো মেনে নেওয়া হবে না। কারও ক্ষেত্রেই নয়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৪২
মহাকরণের সামনে সেনার এই ট্রাক আটকানোর অভিযোগ উঠেছে।

মহাকরণের সামনে সেনার এই ট্রাক আটকানোর অভিযোগ উঠেছে। ছবি: পিটিআই।

মহাকরণের সামনে মঙ্গলবার সকালে সেনার একটি ট্রাক আটকানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক আবহে এই নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ওয়াই শ্রীকান্ত জগন্নাথ রাও জানালেন, এই ঘটনাকে সেনা বনাম পুলিশ হিসাবে দেখলে চলবে না। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্যই আটকানো হয়েছিল ট্রাকটি। যেখানে ট্রাকটিকে আটকানো হয়েছিল, সেখানে ডান দিকে বাঁক নেওয়ার নিয়ম নেই। তা সত্ত্বেও ডান দিকে ঘোরার চেষ্টা করেছিল ট্রাকটি।

ট্রাফিক পুলিশের অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২৮১ ধারায় সেনার ওই ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে হেয়ার স্ট্রিট থানায়। ওই থানা থেকে আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ওই ট্রাকের পিছনেই ছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার (সিপি) মনোজ বর্মার গাড়ি। সেই গাড়ি অল্পের জন্য বড় বিপদের মুখে পড়েনি। কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়, সেই সময় গাড়ির ভিতরে ছিলেন মনোজ। প্রশ্ন উঠেছে, তবে গাড়ির সঙ্গে কোনও রক্ষীর গাড়ি ছিল না কেন? কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সিপি কোনও অনুষ্ঠানে গেলে সঙ্গে একটা পাইলট বাইক থাকে। দফতর বা বাড়ি থেকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু থাকে না।

মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশ স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে যে, আইন লঙ্ঘন করে গাড়ি চালানো মেনে নেওয়া হবে না। কারও ক্ষেত্রেই নয়। শ্রীকান্তের কথায়, ‘‘আগের ক্রসিংয়ে ট্রাকটিকে সিগন্যাল (থামার) দেখানো হয়েছিল। ট্রাকটি এড়িয়ে যায়। লেন লঙ্ঘন করে। এটা অনুমোদিত নয়। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো (রাশ ড্রাইভিং) বরদাস্ত করা যাবে না।’’ তার পরেই পুলিশ স্পষ্ট করে দিল যে, কারও ক্ষেত্রেই ট্রাফিক নীতি লঙ্ঘনের বিষয়টি মেনে নেওয়া হবে না। শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে ডান দিকে বাঁক নেওয়ার সিগন্যাল নেই। ট্রাকটি সেই নীতিও লঙ্ঘন করে। ঘটনাচক্রে ট্রাকটি সেনার।’’ শ্রীকান্ত আরও বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে পুলিশ বনাম সেনা, বিষয়টি এ রকম হওয়া উচিত না। এটা বাকি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মামলার মতোই।’’

এই প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সেনা অফিসারেরা যখন রাস্তায় বার হন, তখন তাঁরা যাতে অবাধে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হয়। এ ক্ষেত্রে শুধুই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি উপজীব্য। শ্রীকান্তের কথায়, ‘‘এটা ট্রাফিক সুরক্ষার বিষয়। রাজনৈতিক নয়।’’ তিনি জানিয়েছেন, সেনার বাহনের ক্ষেত্রে আলাদা রেজিস্ট্রেশন থাকে। তাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে তাই চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার ট্রাকটিকে মহাকরণের সামনে আটকায় ট্রাফিক পুলিশ। পরে খবর দেওয়া হয় হেয়ার স্ট্রিট থানায়। ঘটনাস্থলে যান পুলিশ আধিকারিকেরা। পৌঁছোন সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের দফতর ফোর্ট উইলিয়ামের (বিজয় দুর্গ) কর্তারাও। হেয়ার স্ট্রিট থানায় বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে দুপুর ১টা নাগাদ সেখান থেকে বেরোন সেনার আধিকারিকেরা। ওই ট্রাকে থাকা সেনাবাহিনীর এক কর্মী অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, সিগন্যাল খোলা থাকায় ট্রাক ডান দিকে বাঁক নেয়। একই সঙ্গে ওই সেনাকর্মী এ-ও জানিয়েছেন যে, পিছনে কলকাতার সিপি-র গাড়ি ছিল, তা জানতেন না তিনি।

সোমবারই ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচির মঞ্চ খুলে দিয়েছিল সেনা। মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার খবর পেয়েই সোজা গান্ধীমূর্তির সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙা মঞ্চ থেকে তিনি এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তবে সরাসরি সেনাকে আক্রমণ করেননি মমতা। বরং সেনার কথা বলার সময় তাঁর ভাষা এবং সুর ছিল অনেকটাই সংযত। তিনি বলেন, ‘‘আমার আর্মির বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই। কারণ, আমরা সেনাকে নিয়ে গর্বিত।’’ মমতার মতে, সেনার এই মঞ্চ খোলার নেপথ্যে রয়েছে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘সেনাকে যখন বিজেপির কথায় চলতে হয়, তখন দেশটা কোথায় যায়, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে!” ঘটনাচক্রে, সেই ঘটনার পরের দিনই সেনার ট্রাককে আটকানো নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয় লালবাজার এবং ফোর্ট উইলিয়ামের মধ্যে। শ্রীকান্ত যদিও স্পষ্ট জানালেন, এটা ট্রাফিক সুরক্ষার বিষয়। রাজনৈতিক নয়।

Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy