Advertisement
E-Paper

স্টেশনে অভাব কর্মীর, ঘোষণায় নিত্য গোলমাল

স্টেশনে ঘোষণা করা হল, ট্রেন আসছে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু দেখা গেল, ট্রেনটি আসলে ‘থ্রু’। ওই স্টেশনে দাঁড়ানোর কথাই নয়। কখনও আবার কোনও একটি প্ল্যাটফর্মে যে লোকাল ট্রেন আসছে, তার কোনও ঘোষণাই হল না।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০০:৫৩
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

স্টেশনে ঘোষণা করা হল, ট্রেন আসছে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু দেখা গেল, ট্রেনটি আসলে ‘থ্রু’। ওই স্টেশনে দাঁড়ানোর কথাই নয়। কখনও আবার কোনও একটি প্ল্যাটফর্মে যে লোকাল ট্রেন আসছে, তার কোনও ঘোষণাই হল না। কিংবা যখন ঘোষণা হল, তত ক্ষণে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকে ছাড়ার জন্য হর্ন দিচ্ছে।

ট্রেন চলাচল সংক্রান্ত ঘোষণার ক্ষেত্রে এমনই অনিয়ম ও বিভ্রান্তির অভিযোগ উঠেছে বেলঘরিয়া স্টেশনের বিরুদ্ধে। ঘোষণার ভুলে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর অনেক ঘটনারও সাক্ষী এই স্টেশন। যার জেরে অবরোধ-বিক্ষোভও হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, তার পরেও কমেনি সমস্যা।

ওই স্টেশনের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মীদের একাংশের দাবি, স্টেশন মাস্টারের সংখ্যা কম বলেই এত সমস্যা হচ্ছে। অন্যান্য স্টেশনে সারা দিনের চার শিফটে দু’জন করে স্টেশন মাস্টার থাকেন। অথচ, বেলঘরিয়ায় থাকেন এক জন করে। প্রায় দেড় বছর ধরে এমনই চলছে। স্টেশন মাস্টারই প্যানেল কেবিনের দায়িত্বে থাকেন। ওই কেবিন থেকেই ট্রেনের গতিবিধি, সিগন্যাল, ঘোষণা— সব নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সমস্যাটি কেমন? দমদম থেকে বেলঘরিয়ায় আসতে একটি লোকাল ট্রেনের পাঁচ মিনিট সময় লাগে। দমদম থেকে ট্রেন ছাড়ার পরে ফোন করে তা জানানো হয় বেলঘরিয়াকে। সেই খবর শুনে সময় নথিবদ্ধ করে চারটি গেট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে তার পরে ট্রেন আসার ঘোষণা করতে হয়। এর সঙ্গেই প্যানেল বোর্ডে রেল রুট দিতে হয় এবং পরবর্তী স্টেশনে বার্তা পাঠাতে হয়। পুরো কাজটি করতে মিনিট তিনেক সময় লেগে যায়।

যাত্রীদের অভিযোগ, যখন ঘোষণা হয়, দেখা যায়, তত ক্ষণে ট্রেন বেলঘরিয়া স্টেশনে প্রায় ঢুকে পড়েছে। আর তখনই তাড়াহুড়ো করে ট্রেন ধরার জন্য বাধ্য হয়ে লাইন পারাপার করতে হয়। সমস্যা রয়েছে আরও। ধরা যাক, দমদমের দিক থেকে ট্রেন আসার ঘোষণা যখন হচ্ছে, তখনই সোদপুরের দিক থেকে একটি লোকাল ট্রেন এবং একটি দূরপাল্লার ট্রেনও বেলঘরিয়ায় ঢুকছে। একটির কথা ঘোষণা করে অন্যটির কথা ঘোষণার আর সময় পাওয়া যায় না। রেলকর্মীদের একাংশের দাবি, তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই ভুল ও দেরি হয়ে যায়। আর তাতেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। কিন্তু যাত্রীরা কেন লাইন পারাপার করেন?

যাত্রীদের অভিযোগ, বেলঘরিয়া স্টেশনে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্যটিতে যাওয়ার উপযুক্ত কোনও ব্যবস্থা নেই। যে ওভারব্রিজগুলি রয়েছে, সেগুলির সিঁড়ি প্ল্যাটফর্মে এসে নামেনি। নেমেছে প্ল্যাটফর্ম থেকে কয়েক মিটার দূরে। সব থেকে বিপজ্জনক অবস্থা দুই ও তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার সিঁড়িটির। ওই সিঁড়ি দু’টি লাইনের মাঝে এসে নেমেছে। অভিযোগ, সিঁড়ি থেকে নেমে রেললাইনের পাশের এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে উঠতে হয় প্ল্যাটফর্মে। সেখানেও রয়েছে সমস্যা। কারণ, প্ল্যাটফর্মের মুখেই তৈরি হয়েছে সাবওয়ের গেট। পাশে এক হাত সমান জায়গা পড়ে রয়েছে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামার জন্য। সেখান দিয়ে একসঙ্গে ওঠানামা সম্ভব হয় না। হুড়োহুড়ি করতে গিয়েও ঘটে বিপদ।

রেল সূত্রের খবর, বেলঘরিয়া স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। দৈনিক টিকিট বিক্রি হয় প্রায় দেড় লক্ষ টাকার। সারা দিনে প্রায় ৩৫০টি লোকাল ট্রেন এবং মালগাড়ি, দূরপাল্লা মিলিয়ে আরও ৫০টি ট্রেন চলাচল করে। এত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও সেখানে অব্যবস্থার শেষ নেই বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। সেখানে চার বছরেও কাজ শেষ হয়নি সাবওয়ের। যাত্রীদের জন্য প্রস্রাবাগার রয়েছে প্ল্যাটফর্ম থেকে বে‌শ খানিকটা দূরে দুই ও তিন নম্বর রেললাইনের মাঝে। স্টেশনে ঢোকা-বেরোনোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নেই। রেললাইনের পাশে কোনও রেলিং না থাকায় যে কোনও জায়গা দিয়েই লাইন টপকে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। আর লাইনের পাশেই জমে জঞ্জালের স্তূপ।

বেলঘরিয়া স্টেশনের বিভিন্ন রকম অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি জানলাম। ওই স্টেশনে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা কতটা বাড়ানো যায়, সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’’

Belgharia বেলঘড়িয়া Wrong Announcement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy