Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Death

শিরা ফেটে মৃত্যু! আমহার্স্ট স্ট্রিট-কাণ্ডে দাবি লালবাজারের

লালবাজার থেকে এ দিন দাবি করা হয়, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী অশোকের মৃত্যু অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাঁর দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।

An image of the death person

অশোককুমার সিংহ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:১৯
Share: Save:

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় চোরাই মোবাইল ফোন জমা দিতে এসে বুধবার সন্ধ্যায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। যা ঘিরে তোলপাড় হয় এলাকা। ওই মৃত্যুর কারণ কি ক্যানসার? মস্তিষ্কের শিরা ফুলে ফেটে যাওয়ার কারণে কি এই ঘটনা? বৃহস্পতিবার ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জানিয়ে লালবাজার থেকে তেমনই দাবি করা হয়েছে। যদিও মৃতের পরিবার জানিয়েছে, এমন কোনও অসুখের কথা তাদের জানা নেই।

পুলিশ মর্গের বদলে কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে ময়না তদন্ত করা এবং ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তাদের দেখানোর দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে মৃত অশোককুমার সিংহের পরিবার। এই মামলায় প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনমের পর্যবেক্ষণ, কোনও ঘটনা ঘটলে সেটিকে ‘হাইজ্যাক’ করার চেষ্টা চলে। বুধবার রাস্তা অবরোধ হয়েছিল। তাতে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। আজ, শুক্রবার এই মামলার শুনানি হতে পারে।

২০০ টাকায় কেনা একটি চোরাই মোবাইল ফোন বুধবার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় জমা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন পটুয়াটোলা লেনের বাসিন্দা অশোক। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশি হেফাজতে মারধর করায় অশোকের মৃত্যু হয়েছে, এমন দাবি করেন উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির এক নেতা এবং কলকাতা পুরসভার এক বিজেপি পুরপ্রতিনিধি। রাস্তা অবরোধও হয়।

কিন্তু, লালবাজার থেকে এ দিন দাবি করা হয়, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী অশোকের মৃত্যু অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাঁর দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। পুলিশের অনুরোধে পুলিশ মর্গে তিন সদস্যের চিকিৎসকের বোর্ড গঠন করে ময়না তদন্ত হয়েছে। তার প্রাথমিক রিপোর্টে পুলিশ জেনেছে, অশোকের চামড়া এবং নখে কালো দাগ রয়েছে। তাঁর অণ্ডকোষের তলায় ঘা ছিল। মাথায় টিউমার মিলেছে। মাথার শিরা ফুলে ফেটে গিয়েছে। তাঁর ক্যানসার ছিল বলেও মনে করা হচ্ছে। তাই টিউমার এবং চামড়ার নমুনা বায়োপ্সির জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টিউমারের বায়োপ্সি রিপোর্ট আসার আগে কখনওই বলা সম্ভব নয়, সেটা ক্যানসার কি না। শিরা ফুলে ফেটে যাওয়া অন্য ব্যাপার। এটা রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যে কারও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা নির্দিষ্ট তথ্যের উপরে নির্ভর করছে।’’

এই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার কিছু ফুটেজ পুলিশ দেখিয়েছে। তবে অশোকের অসুস্থ হয়ে পড়ার সময়ের ফুটেজ তাদের কাছে নেই। যেখানে তাঁর সঙ্গে পুলিশকর্মীরা কথা বলছিলেন, সেখানে ক্যামেরা ছিল না কেন? লালবাজার থেকে দাবি করা হয়েছে, ফুটেজ অনুযায়ী, বুধবার বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে প্রথম থানায় ঢুকেছিলেন অশোক। মদনলাল গুপ্ত নামে স্থানীয় এক বিজেপি নেতাকে তিনি ফোনের বিষয়টি জানান। ওই নেতা থানায় তাঁর পরিচিত এক অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে বলেন অশোককে। সেই অফিসারকে না পেয়ে ৫টা ৪৫ মিনিটে অশোক থানা থেকে বেরোন। ৫টা ৪৬ মিনিটে ফের থানায় ঢোকেন। সিসি ক্যামেরায় তাঁকে দেখা যায়, তদন্তকারী অফিসারদের ঘরের দিকে যেতে।

কিন্তু, সেই ঘরে না ঢুকে একটি জায়গায় অশোক দাঁড়িয়ে যান। ওই অংশে সিসি ক্যামেরা নেই। অশোকের মোবাইল থেকে পুলিশ জেনেছে, ৫টা ৫৪ মিনিটে ফের মদনলালকে ফোন করেন তিনি। ১৩২ সেকেন্ড কথা হয়। অশোক মদনলালকে বলেন, অফিসারকে খুঁজে পাচ্ছেন না। পুলিশের দাবি, ৬টায় অফিসারকে ফোন করেন মদনলাল। কিন্তু নেটওয়ার্কের সমস্যায় কথা হয়নি। ফের ৬টা ২ মিনিটে মদনলাল অফিসারকে ফোন করে অশোকের কথা বলেন। ৬টা ৩ মিনিটে অফিসারের সঙ্গে অশোকের দেখা হলে তাঁকে তদন্তকারী অফিসারদের ঘরে ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়। পুলিশের দাবি, ওখানে ঢোকার এক মিনিটের মধ্যে অসুস্থ হন অশোক।

লালবাজার জানিয়েছে, পরিবারের তরফে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এখনও মামলা রুজু না হলেও এক জন ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে অনুসন্ধান দল গড়া হয়েছে। তারা ১৫ জনের বয়ান নথিভুক্ত করেছে। এ দিন সন্ধ্যায় তদন্তের দায়িত্ব লালবাজারের হোমিসাইড শাখার হাতে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, কলকাতা পুলিশের সাইবার বিশেষজ্ঞের একটি দল ওই থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করেছে। পরিবারের তরফে অভিযোগকারী শরৎ জায়সওয়ালকে আজ, শুক্রবার থানায় আসতে বলা হয়েছে।

ঘটনাটি নিয়ে এ দিন হাই কোর্টে মামলা করেন বিজেপির আইনজীবী-নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। তাঁর দাবি, ময়না তদন্ত কল্যাণী এমস-এর মতো কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে হোক। ময়না তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি এবং পরিবারের সদস্যদের থাকতে দেওয়ার দাবিও জানানো হয়। এমস জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে ময়না তদন্তের পরিকাঠামো নেই। আর্জি শুনে প্রধান বিচারপতি মামলা দায়েরের অনুমতি দেন। বিকেলে শুনানি শুরু হলে রাজ্য জানায়, ময়না তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিবারকে উপস্থিত থাকার লিখিত নোটিস দিলেও তারা গ্রহণ করেনি। মামলাকারী আর্জি জানান, প্রয়োজনে ফের ময়না তদন্তের অনুমতি দেওয়া হোক। এই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘দ্বিতীয় বার, তৃতীয় বার ময়না তদন্ত করা বেদনাদায়ক। এটা করা যায় না।’’

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ অভিযোগে নাম না-থাকা সত্ত্বেও মানুষকে হেফাজতে নেওয়ার নামে অত্যাচার করে। এই থানার পুলিশই সজল ঘোষের বাড়িতে দরজায় লাথি মারে। তাতেই বোঝা যায় ওরা গুন্ডা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Illness Lalbazar sudden death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE