Advertisement
০২ মে ২০২৪

ভোটে দৃষ্টিহীনদের ভরসা নিজেদের তৈরি ব্রেল ব্যালট

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম বার দৃষ্টিহীনদের ভোটদানের কথা ভাবা হয়েছিল। সে বারই প্রথম ব্রেল পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার তৈরি করা হয়। সে দায়িত্বে কাজে লাগানো হয়েছিল দৃষ্টিহীনদের।

প্রস্তুতি: নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে চলছে ব্রেল ব্যালট পেপার তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে চলছে ব্রেল ব্যালট পেপার তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

নিজেদের সৃষ্টিতে নির্ভর করেই এ বারেও ভোটমুখী দৃষ্টিহীনেরা।

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম বার দৃষ্টিহীনদের ভোটদানের কথা ভাবা হয়েছিল। সে বারই প্রথম ব্রেল পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার তৈরি করা হয়। সে দায়িত্বে কাজে লাগানো হয়েছিল দৃষ্টিহীনদের। এর পরে ২০১৪ সালের লোকসভা এবং ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও এই পদ্ধতি চালু থেকেছে। এ বারও ছাপা হচ্ছে ব্রেল ব্যালট পেপার। ব্রেল ব্যালট পেপার ছাপাতে ওঁরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন পুরোদমে।

প্রতিবন্ধী অধিকার আইন, ২০১৬-র ১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দেশের প্রত্যেকটি বুথে প্রতিবন্ধীদের অবাধে ভোট দেওয়ার পরিকাঠামো রাখতে হবে। সেই মতো ২০১১ সাল থেকে ব্রেল পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার তৈরির ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই ব্যালট পেপার অনুসরণ করে দৃষ্টিহীনেরা ইভিএম বক্সে তাঁর পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেন।

দৃষ্টিহীনদের নিয়ে কাজ করা বেহালা, নরেন্দ্রপুর ও বারুইপুরের তিনটি সংস্থাকে অন্য বারের মতো এ বারেও ব্রেল ব্যালট পেপার ছাপাতে বরাত দিয়েছে কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী, ব্রেল পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার তৈরির মূল দায়িত্বে থাকেন দৃষ্টিহীনেরাই। বেহালার সখেরবাজারের প্রেসে দৃষ্টিহীন সুকুমার চক্রবর্তী, সোমনাথ পানি বা সমীর মণ্ডলদের হাতে তৈরি হবে ব্রেল পদ্ধতির ব্যালট পেপার। মেশিন থেকে ব্যালট ছাপানোর পরে ব্রেল পদ্ধতিতে তার প্রুফ দেখে তবেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির রিজিওনাল ব্রেল প্রেসে দু’জন দৃষ্টিহীন যুবক ওই ব্যালট পেপারের প্রুফ দেখাশোনা করেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র প্রদীপ ঢালি প্রেসের সিনিয়র প্রুফ রিডার। স্নাতক উত্তীর্ণ প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘২০১১ সালের আগে পর্যন্ত অন্যের ভরসায় বোতাম টিপে ভোট দিতেন দৃষ্টিহীনেরা। ব্রেল ব্যালট পেপার আসায় স্বাধীন ভাবে ভোট দিতে পারছেন দৃষ্টিহীনেরা।’’ প্রেসের জুনিয়র প্রুফ রিডার বিধান দাসের কথায়, ‘‘ব্রেল ব্যালট তৈরির কাজে শরিক হতে পেরে ভাল লাগছে।’’ নরেন্দ্রপুরের ব্রেল প্রেস ম্যানেজার অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ব্রেল পদ্ধতিতে বই ছাপানো হয় এখানে। পাশাপাশি, বিভিন্ন ভাষার বই ব্রেল পদ্ধতিতে অনুবাদের দায়িত্ব রয়েছে এখানকার কর্মরত দৃষ্টিহীনদের উপরেই।’’

কমিশন সূত্রের খবর, চলতি লোকসভা ভোট উপলক্ষে রাজ্যে প্রায় এক লক্ষ ব্রেল ব্যালট পেপার তৈরির দায়িত্ব পড়েছে ওই তিনটি সংস্থার উপরে। পাশাপাশি, এ বছর ত্রিপুরার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় সাড়ে ছ’শো ব্যালটের অতিরিক্ত বরাত মিলেছে বলে জানাচ্ছেন অরূপবাবু। বেহালার সখেরবাজারের সংস্থার কর্মকর্তা উৎপল রায়ের কথায়, ‘‘দৃষ্টিহীনেরা এখনও সমাজের একাংশের কাছে ব্রাত্য। নির্বাচন কমিশন ওঁদের স্বাধীন ভাবে ভোটদানের সুযোগ করিয়ে দেওয়ায় ওঁরা নিজেরাই ব্যালট পেপার তৈরি করতে পারছেন। এতে ওঁরা উৎসাহী-ও হচ্ছেন।’’ ইতিমধ্যেই ব্যালট পেপার তৈরি ও সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে ওঁদের হাত ধরে। ব্রেল ব্যালট পেপারে স্ট্যাম্প ও সই করতে দৃষ্টিহীনদের সাহায্য করছেন দু’জন শারীরিক ভাবে সক্ষম ব্যক্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Braille Paper Blind Voters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE