Advertisement
০৪ মে ২০২৪

উত্তেজনা কমাতে অন্য বিষয় নিয়ে ভাবুন প্রার্থীরা

কোনও প্রার্থী ধ্যানে বসছেন, কেউ ফল প্রকাশের পরেই কোথাও ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন! 

চাপ কমাতে ধ্যান করুন,গান শুনুন, বেড়িয়ে আসুন

চাপ কমাতে ধ্যান করুন,গান শুনুন, বেড়িয়ে আসুন

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ১০:০৮
Share: Save:

কোনও প্রার্থী ধ্যানে বসছেন, কেউ ফল প্রকাশের পরেই কোথাও ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন!

ফল প্রকাশের চূড়ান্ত লগ্ন আসতে একটা দিন। এ বার শুধুই ফলের প্রত্যাশা। তার আগে প্রার্থীদের এমন নানা আচরণের কথা শুনে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ সব হল উদ্বেগ ও মানসিক চাপের সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা। এ সময়ে কোনও প্রার্থী এমন করছেন শুনলে বুঝতে হবে, গভীর চিন্তায় আছেন তিনি। তাই কিছুতে ব্যস্ত রাখতে চাইছেন নিজেকে। কারণ, এ রকম সময়েই শরীরের কিছু হরমোন বেশি কাজ করে। তাদের মধ্যে বেশি বল প্রয়োগ করে অ্যাড্রিনালিন, অক্সিটোসিন এবং কর্টিসল। ফলে শারীরিক এবং মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। এমনটা হতে দেওয়া উচিত নয়। অনেক পুরনো প্রার্থীই তা জানেন। তবে ভোট ময়দানে যাঁরা নতুন, তাঁদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, এ সময়ে অনেকের শরীরেই অক্সিটোসিন, অ্যাড্রিনালিন এবং কর্টিসল হরমোন বেশি ক্ষরণ হয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি থাকে। কারও কারও অত্যধিক ঘাম হয় এবং হাত-পা বেশি ঠান্ডা বা গরম হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘এ সবই হল মারাত্মক টেনশনের লক্ষণ। তা থেকে নিজেকে মুক্ত না রাখতে পারলে শরীরের পক্ষে খুবই খারাপ হয়।’’ নিউরোলজিস্ট তৃষিত রায় জানান, দুশ্চিন্তা বাড়লে স্নায়ুর উপরে চাপ বাড়ে। এ থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তাঁর ব্যাখ্যা, ব্রেনের টেম্পোরাল লোবের ভিতরে অ্যামিগ্ডালা বলে ছোট্ট অংশ থাকে। অতিরিক্ত চিন্তায় সেটি সক্রিয় হয়। তার জেরে অনেকেই রুক্ষ ব্যবহার করে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘এ সময়ে কোনও প্রার্থীর আচরণ অন্য রকম দেখলে, বুঝতে হবে তিনি চাপে রয়েছেন।’’

বুথ ফেরত সমীক্ষা যা-ই বলুক, আসল ফলের মুখোমুখি হতে হবে সবাইকেই। মনোরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, সমীক্ষায় জিতছেন জেনে কেউ শান্তিতে থাকেন না বা হারছেন জেনে হালও ছেড়ে দিতে পারেন না। এমন সময়ে শান্ত থাকার চেষ্টা করতেই হবে বলে মত তাঁদের। মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব যেমন মনে করান, কোনও জিনিস নিয়ে বেশি চিন্তা হলে অন্য বিষয়ে ভাবনা অভ্যাস জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘এই যে শুনলাম, কেউ বই পড়ছেন, কেউ বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবছেন— এটা খুব ভাল। চিন্তা হবেই। তা থেকে মুক্ত রাখা অভ্যাসের বিষয়।’’

সতীনাথবাবুর পরামর্শ, এই সময়ে মাথা স্থির রাখার জন্য যোগব্যায়াম করা উচিত। প্রাণায়াম আর ধ্যান করলে যে কারও উপকার হবে। লম্বা শ্বাস যে কোনও উত্তজনা কমাতে সাহায্য করে বলে মত চিকিৎসকের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার মনে করান, প্রত্যেক প্রার্থীর এক এক রকম শারীরিক এবং মানসিক গঠন। তাঁরা সেই অনুযায়ী চূড়ান্ত সময়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘মনে রাখা জরুরি, এই প্রার্থীরা অনেকটা লড়াই চালিয়ে এই জায়গায় এসেছেন। তাঁরা যেন তা ভুলে না যান। অর্থাৎ সত্যের মুখোমুখি হওয়ার মতো মনের জোর তাঁদের সকলেরই যথেষ্ট রয়েছে। এমন সময়ে চিকিৎসকেরাও পাশে থাকবেন।’’ তিনি মনে করান, প্রার্থীদের যত জনের সঙ্গে কথা বলে, ক্ষোভ-অভিযোগ শুনে এগোতে হয়, তাতে তাঁদের মন এমনিই শক্ত হয়ে যায়।

চিকিৎসকেরা সকলেই মনে করেন, দুশ্চিন্তা যে কোনও মানুষেরই হয়। তবে পাঁচ জনের মতোই প্রার্থীদেরও মনে রাখতে হবে, এটাই শেষ পরীক্ষা নয়। ভোটে হার-জিত, সবটা গড়তে বা নষ্ট করে দিতে পারে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE