Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ভোটের শহরে পরপর উদ্ধার টাকা-সোনা

নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরেই কলকাতার নানা প্রান্ত থেকে হিসেব বহির্ভূত টাকা বাজেয়াপ্ত করছেন রাজ্য ও কেন্দ্রের গোয়েন্দারা। গত কয়েক দিনে কলকাতা ও সল্টলেকের একাধিক জায়গায় হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স’ (ডিআরআই)।

বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনা। নিজস্ব চিত্র

বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

হাওড়া থেকে মোটরবাইকটির পিছু নিয়েছিলেন সিআইডি-র অফিসারেরা। রীতিমতো চোর-পুলিশ খেলতে খেলতে শরৎ বসু রোডে এসে বাইকটিকে আটকালেন তাঁরা। বিপদ বুঝে মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দিলেন চালক। ফেলে গেলেন পিছনের সিটে বসা আরোহীকে। সিআইডি-র দাবি, পিছনের সিটে বসা ওই আরোহীর কাছ থেকে টাকা ভর্তি একটি ব্যাগ মিলেছে। পুলিশ জানায়, তাঁর নাম রাজকুমার সাউ। হাওড়ার ছাঁট লোহার ব্যবসায়ী। ওই ব্যাগে থাকা নগদ সাড়ে ৩৯ লক্ষ টাকার কোনও বৈধ নথি দেখাতে পারেননি রাজকুমার। তাঁকে গ্রেফতার করে ভবানীপুর থানার পুলিশ। শনিবার আলিপুর আদালত থেকে জামিন পান তিনি। তবে টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরেই কলকাতার নানা প্রান্ত থেকে হিসেব বহির্ভূত টাকা বাজেয়াপ্ত করছেন রাজ্য ও কেন্দ্রের গোয়েন্দারা। গত কয়েক দিনে কলকাতা ও সল্টলেকের একাধিক জায়গায় হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স’ (ডিআরআই)।

কেন্দ্রের ওই সংস্থা সূত্রের খবর, ২৫, ২৬ ও ২৮ মার্চ কলকাতা ও সল্টলেকে হানা দিয়ে ১৬.৩৪ কিলোগ্রাম সোনা ও ৭৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনার বাজারদর ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। সোনা ও টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ার খবর নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে বলে সংস্থার এক কর্তা জানান।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ডিআরআই জানিয়েছে, প্রথম ঘটনা ২৫ মার্চের। সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে হানা দিয়ে ৪.৯৮ কেজি সোনা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত মহেশ রাই ও রেজিনা ফারচিনসুঙ্গি ওরফে রীতা মাইসাক মণিপুরের বাসিন্দা। জেরায় তারা জানিয়েছে, মায়ানমার থেকে মণিপুর হয়ে ওই সোনা এসেছে।

বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকা। নিজস্ব চিত্র

পরের ঘটনা ২৬ মার্চের। সল্টলেকের একটি অতিথিশালায় হানা দিয়ে ইশাক লালপেখলুয়া নামে এক যুবকের কাছ থেকে ৩.৩২৬ কেজি সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ওই যুবক মিজোরামের বাসিন্দা। সে জেরায় জানায়, মায়ানমার থেকে মিজোরাম হয়ে ওই সোনা আনা হয়েছে।

তৃতীয় ঘটনা বড়বাজারের হাঁসপুকুর লেনের। সেখানে একটি দোকানে তল্লাশি চালানোর সময়ে ভল্ট ও দোকানে আসা এক যুবকের কাছ থেকে ৮.০৪৮ কেজি সোনা ও নগদ ৭৫.৩০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। গ্রেফতার হয় রাজু দত্ত, চিরঞ্জিত দত্ত ও সুমন সাহা। সুমনের কাছে থাকা ব্যাগে কয়েক কেজি সোনা ও ওই পরিমাণ নগদ টাকা ছিল। ধৃতেরা জানায়, সোনা পাচার করে ওই টাকা মিলেছে।

পুলিশ জানায়, রাজকুমারের বাড়ি হাওড়ার হৃদয়কৃষ্ণ ব্যানার্জি লেনে। তিনি ছাঁট লোহার কারবারি। হাওড়ার বালিটিকুরিতে অফিস রয়েছে। রাজকুমার মোটা অঙ্কের নগদ টাকা নিয়ে কোথাও যাবেন জেনে গোয়েন্দারা তক্কে তক্কে ছিলেন। রাজকুমারের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। ওই টাকার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত লালবাজারের গোয়েন্দারা নগদ প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছেন শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে। গ্রেফতারও করা হয়েছে বেশ কয়েক জনকে। গোটা রাজ্যে বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকার পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। পুলিশের দাবি, গত বিধানসভা ভোটের থেকে এ বার বেশি পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক লেনদেনে কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য নগদে ওই টাকা পাচার করা হচ্ছিল। পুলিশের এক কর্তা জানান, বাজেয়াপ্ত ওই টাকা মূলত হাওয়ালার লেনদেনে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE