Advertisement
০৬ মে ২০২৪
ছটের দূষণ ২

পুলিশের সামনেই শব্দবাজি, দোসর তারস্বরে ডি জে

ভাইফোঁটার রাতকেও বুঝি হার মানাল সোমবারের ভোর! মহানগরীর বিভিন্ন পাড়ায় এ দিন কাকভোরে মানুষের ঘুম ভেঙেছে ঘন ঘন শব্দবাজি আর পেল্লায় সাউন্ডবক্সের (চলতি ভাষায় ডিস্ক জকি বা ডি জে) আওয়াজে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

ভাইফোঁটার রাতকেও বুঝি হার মানাল সোমবারের ভোর!

মহানগরীর বিভিন্ন পাড়ায় এ দিন কাকভোরে মানুষের ঘুম ভেঙেছে ঘন ঘন শব্দবাজি আর পেল্লায় সাউন্ডবক্সের (চলতি ভাষায় ডিস্ক জকি বা ডি জে) আওয়াজে। এবং এ সব কাণ্ড ঘটছে খোদ পুলিশের সামনেই। শব্দবাজি ফাটলে কিংবা ডি জে বাজলে পরিবেশ আইন মোতাবেক পুলিশেরই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। ডি জে বাজালে পাঁচ বছরের জেল ও এক লক্ষ টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে আইনে।

কালীপুজো এবং দেওয়ালির আগে শব্দবাজি না ফাটাতে পাড়ায় পাড়ায় মাইক নিয়ে প্রচার করেছিল পুলিশ। তবে ছটের আগে সে রকম কিছু হয়নি। অথচ ছটপুজোর ভোরে বিস্তর শব্দবাজি ফাটানোটাই দস্তুর। তা সত্ত্বেও পুলিশ কেন প্রচারের সাহায্য নিল না, লালবাজার থেকে তার ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে ডি জে বাজানো যে নিষিদ্ধ এবং ডি জে ব্যবহার করলে গ্রেফতার করা হতে পারে, তা নিয়ে প্রচার কোনও সময়েই করেনি পুলিশ।

যে সব পাড়ায় পুকুর, ঝিল রয়েছে, কিংবা যে সব পাড়া গঙ্গার ঘাটের কাছে, সেখানে মানুষের ঘুম বরবাদ হয়ে গিয়েছে কাকভোরেই। দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি এলাকার এক বাসিন্দার আক্ষেপ, ‘‘প্রতিবারই ছটের ভোরে ঘুম বরবাদ করে দেয় শব্দবাজি। এ বার তার দোসর হয়েছে ডি জে। বাড়িতে অসুস্থ শাশুড়ি। শব্দ ঠেকাতে সকাল আটটা পর্যন্ত জানলা-দরজা বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’

কসবা এলাকার এক মহিলা বলছেন, ‘‘যেমন রবিবার বিকেলে, তেমনই এ দিন ভোরে, বাড়ির সামনে দিয়ে একের পর এক ছটের শোভাযাত্রা গিয়েছে। আর বাজি, ডি জে-র আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।’’ বেলেঘাটা সিআইটি রোড এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগ, শব্দবাজি আর ডি জে-র জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশকে ফোন করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু তার আগেই জানলা দিয়ে দেখলেন, রাস্তায় ব্যারিকেড করে পুলিশই জায়গা করে দিচ্ছে। পুলিশের সামনে দিয়েই ডি জে বাজিয়ে, শব্দবাজি ফাটাতে ফাটাতে যাচ্ছে সবাই!

ভাইফোঁটার রাতে কালীপুজোর ভাসানে যে হারে শব্দবাজি ফেটেছে এবং ডি জে বেজেছে, তাতে লালবাজারের যুক্তি ছিল, এ বছর তারা চেষ্টা করেছে। আগামী বছর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা দেখবে লালবাজার। কালীপুজোর ভাসানে ব্যর্থ হওয়ার পরেও পুলিশ কেন ছটপুজোয় সতর্ক হল না? রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার দাবি, কালীপুজোয় ডি জে, শব্দবাজির অভিযোগ পাওয়ায় ছটপুজো নিয়ে ফের পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তার পরেও এমন অবস্থা দেখে ওই কর্তার আক্ষেপ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ আদালতের নির্দেশই মানতে চায় না। আমরা তো কোন ছার!’’

লালবাজারের এক কর্তা অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরোবরে আমরা প্রচুর শব্দবাজি আটক করেছি। সেখানে তুলনামূলক ভাবে ডি জে-ও কম বেজেছে। পুলিশ হাত গুটিয়ে ছিল, এমনটা কিন্তু বলা যাবে না।’’ পরিবেশকর্মীরা অবশ্য বলছেন, রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছিল, তাই সেখানে পুলিশের উপরে চাপ ছিল। কিন্তু অন্যত্র পুলিশ সব কিছু দেখেও দেখেনি। তাই ছট পুজোকে এ বারেও শব্দদূষণ থেকে মুক্ত রাখা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Loud speaker Sound crackers Police silent
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE