দুরবস্থা: ভেঙে গিয়েছে সেতুর রেলিং। কোনও রকমে ঘিরে রাখা রয়েছে হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর একাংশ।
সমীক্ষা-রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গিয়েছে। রিপোর্টে যা যা পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তার সিকিভাগও মানা হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজ্য প্রশাসনেরই একাংশের। ফলে মাঝেরহাট সেতুর পরে শহরে আরও বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নও উঠেছে!
কারণ, ২০১৬ সালে পোস্তা উ়ড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরপরই শহরের উড়ালপুল ও সেতুগুলির অবস্থা কেমন, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা রাইটস-কে দিয়ে তা সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথমে শহরের ২৩টি উড়ালপুল ও সেতুর সমীক্ষা করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাঁচটি উড়ালপুল ও সেতু পরীক্ষা করবে রাইটস, এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো রাইটস বাঘা যতীন সেতু, অম্বেডকর সেতু, শিয়ালদহ উড়ালপুল, চিংড়িঘাটা উড়ালপুল ও হাওড়ার বঙ্কিম সেতু পরীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দেয়। এর পাশাপাশি, ঢাকুরিয়া সেতু নিয়েও রাইটস নিজের মতামত জানিয়েছিল। কারণ, ইঁদুরের আক্রমণে একাধিক বার ওই সেতু বসে গিয়েছিল। সাময়িক ভাবে তা মেরামতিও করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও পুরোপুরি সমস্যামুক্ত হয়নি ঢাকুরিয়া সেতু।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাইটসের জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব উড়ালপুল ও সেতুগুলি মেরামত করতে হবে। সেগুলির নিয়মিত তদারকিও প্রয়োজন। কারণ, পুরনো উড়ালপুলগুলির অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। কোথাও বেয়ারিংয়ের সমস্যা রয়েছে, কোথাও বা উড়ালপুলের উপরে গর্ত হয়ে গিয়েছে। কারও গার্টারের ক্ষমতা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। যেমন চিংড়িঘাটা উড়ালপুলে গার্টারে চিড় ধরার ঘটনা তো রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করেছিল বছর দুই আগে। যদিও সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, তাতে আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্তু সেটা ছাড়াও উড়ালপুলগুলির সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে যে পড়েনি, প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশই তা জানাচ্ছেন।
ফাটল ধরেছে চিংড়িঘাটা উড়ালপুলের একটি অংশে।
এমনিতে শহরের উড়ালপুল ও সেতুগুলির বেশির ভাগই পুরনো। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ক্রমাগত যান চলাচলের কারণে সেগুলির কাঠামোয় ‘ফ্যাটিগ’ বা ক্লান্তি জমা হয়েছে। আর এই ক্লান্তি জমতে থাকলে কোনও উড়ালপুল বা সেতুর ভার বহনের ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ক্লান্তি দূর করার জন্য উড়ালপুলগুলির নিয়মিত তদারকির প্রয়োজন। এক কর্তার কথায়, ‘‘কোনওটার বয়স ৬০ বছর, কোনওটার বা ৪০। ফলে উড়ালপুল ও সেতুগুলির ভার বহনের ক্ষমতা সময়ের সঙ্গে কমবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কাঠামোগত কোনও ত্রুটি থাকলে তা নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। সেটা সব জায়গায় করা হয়েছে কি?’’
আরও পড়ুন: প্রকাণ্ড সেতুটা ঝুলে রয়েছে ‘ভি’-এর আকারে
আরও পড়ুন: খোঁজ মিলছে না মেট্রোর ৩ ঠিকা শ্রমিকের
প্রশাসন সূত্রের খবর, এর পাশাপাশি আর একটি সমস্যার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, উড়ালপুল ও সেতুগুলির ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’র জন্য একটি বিশেষ দল তৈরি করা দরকার। যাদের কাজই হবে শুধু উড়ালপুল পরীক্ষা করা। যেমনটা রেলের রয়েছে। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘রেলসেতুগুলি পরীক্ষার জন্য রেলের একটা আলাদা দলই রয়েছে। তারা ঘুরে ঘুরে সেতুগুলি পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়। সেই অনুযায়ী কাজ হয়। কিন্তু শুধুমাত্র উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এমন কোনও দল তো নেই। যে উড়ালপুল যে দফতরের, তারাই সেটা দেখভাল করে। ফলে তাতে একটা খামতি তো থেকে যায়ই।’’
—ফাইল চিত্র।
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy