Advertisement
E-Paper

ছুটির ভাবনা মাম্পিকে, এখনও ডায়ালিসিস নাসরিনের

স্যালাইন-বিতর্কের মাঝেই গত ১২ জানুয়ারি রাতে ‘লাইফ-সাপোর্ট’ অ্যাম্বুল্যান্সে করে মেদিনীপুর থেকে এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়েছিল নাসরিন খাতুন, মাম্পি সিংহ ও মিনারা বিবিকে।

মাম্পি (দাঁড়িয়ে) ও নাসরিন (বসে) ধীরে ধীরে ফিরছেন স্বাভাবিক জীবনে। এসএসকেএমে।

মাম্পি (দাঁড়িয়ে) ও নাসরিন (বসে) ধীরে ধীরে ফিরছেন স্বাভাবিক জীবনে। এসএসকেএমে। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০৯
Share
Save

এসএসকেএম থেকে এ বার ছুটি পাওয়ার অপেক্ষায় মেদিনীপুর মেডিক্যালের প্রসূতি মাম্পি সিংহ। কিছু দিন আগেই বাড়ি ফিরেছেন মিনারা বিবিও। আজ, বুধবার এসএসকেএমে মিনারা আসবেন চেক-আপ করাতে। অন্য দিকে, আর এক প্রসূতি নাসরিন খাতুনকেও ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ক্রমশ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে মাম্পি ও নাসরিন, দু’জনেই। পরিকল্পনা করা হয়েছে, ছুটির পরেও মাম্পিকে কড়া নজরদারিতে রাখতে হাসপাতালের কাছেই সন্তান ও পরিজনদের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করবেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ।

স্যালাইন-বিতর্কের মাঝেই গত ১২ জানুয়ারি রাতে ‘লাইফ-সাপোর্ট’ অ্যাম্বুল্যান্সে করে মেদিনীপুর থেকে এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়েছিল নাসরিন খাতুন, মাম্পি সিংহ ও মিনারা বিবিকে। তিন জনেরই শারীরিক অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে, পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকেরাও। জানা যাচ্ছে, তিন জনেরই কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। সঙ্গে রক্তে সংক্রমণের মাত্রাও ছিল খুব বেশি। রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতাও প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিন প্রসূতির চিকিৎসায় ১০টি বিভাগের ১৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে তৈরি হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড।

জানা যাচ্ছে, কিডনি স্বাভাবিক ভাবে কাজ না করায় মিনারার শরীরে জল জমেছিল। তাঁকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। তবে সাত দিনের মধ্যে কিডনি কাজ করতে শুরু করায় আর ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন দিতে হয়নি। গত ২৮ জানুয়ারি তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, ১২ জানুয়ারি রাতে সব থেকে বেশি চিন্তা ছিল মাম্পিকে নিয়ে। ১০০ শতাংশ ভেন্টিলেশন দিয়েও তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের উপরে উঠছিল না। সারা রাত হাসপাতালে থেকে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত মাম্পি, ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ফেলিয়োর’ এবং ‘হার্ট ফেলিয়োর’-এ আক্রান্ত নাসরিনকে কড়া পর্যবেক্ষণে রাখেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক সুগত দাশগুপ্ত, আইটিইউ দেবজ্যোতি দাস-সহ মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকেরা। পরে সংক্রমণের কারণে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে শুরু করে মাম্পির। বার বার বুক থেকে জমা জল বার করা হয়। প্রায় চার লিটার রক্ত মিশ্রিত জল বার করা হয় পেট থেকে। তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করা সম্ভব হয় ২০ জানুয়ারি। গত ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯টি ডায়ালিসিস নেওয়ার পরে মাম্পির কিডনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কাজ করতে শুরু করে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর পর্যাপ্ত প্রস্রাব হচ্ছে, ডায়ালিসিস লাগছে না। স্বাভাবিক হাঁটাচলা থেকে খাওয়াদাওয়া করছেন তিনি।

অন্য দিকে, রক্তে সংক্রমণ, শরীরে জল জমার জেরে একাধিক সমস্যা ছিল নাসরিনের। সেই সব কাটিয়ে ওঠায় ২৯ জানুয়ারি তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হয়। তবে, এখনও কিডনির কার্যক্ষমতা ফিরে না আসায় চলছে ডায়ালিসিস। ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২২টি ডায়ালিসিস হয়েছে। চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘কিডনি কবে স্বাভাবিক কাজ করবে, সেটা নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ, চিকিৎসায় কোন রোগীর শরীর কতটা দ্রুত সাড়া দেবে, তা আগাম বলা যায় না।’’ সূত্রের খবর, ভেন্টিলেশনে থাকার সময়েই এমআরআই-তে ধরা পড়ে, নাসরিনের মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। তাতে মনে করা হচ্ছে, তিনি স্ট্রোকেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই কারণে এবং দীর্ঘ দিন ক্রিটিক্যাল কেয়ারে থাকার ফলে কথা বলায় ও হাত-পায়ের পেশিতে অসাড়তার সমস্যা ছিল। ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চিকিৎসায় এখন কথা বলা ও হাত নাড়াচাড়া করতে পারলেও হাঁটতে পারছেন না নাসরিন। তবে ক্রমশ পায়ের পেশির জোর ফিরে আসবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

আজ ওই তিন প্রসূতির এসএসকেএমে ভর্তি হওয়ার এক মাস পূর্ণ হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গুরুতর অসুস্থতার মধ্যেও তিন জনের একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সিসিইউ-তে মিনারার উল্টো দিকের শয্যায় ছিলেন মাম্পি। পরে মিনারাকে অন্য শয্যায় দেওয়া হলেও তিনি দাবি করতেন, মাম্পিকে সামনে রাখা হোক। যাতে কথা বলে মাম্পির মনের জোর বাড়াতে পারেন। তাঁর ছুটির পরে আইটিইউ থেকে নাসরিনকে আনা হয় সিসিইউ-তে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘মাম্পিকে মনের জোর জোগাতে দেখেছি মিনারাকে। আবার মাম্পিও দাবি করে, ‘ডাক্তারবাবু ওঁকে (নাসরিন) পাশে এনে রাখুন। ওঁর সঙ্গে কথা বলে সাহস দিতে হবে।’’

সিসিইউ-র ১৪ ও ১৫ নম্বর শয্যার দুই প্রসূতির এখন দিন কাটে একে অপরকে ভরসা জুগিয়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSKM Saline

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}