Advertisement
E-Paper

চায়ে‌র কাপেই ছড়ায় স্মৃতির সৌরভ

পাঁচ বছর আগে ১১ নভেম্বর ৮৮ বছর বয়সে অনিলবাবুর মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই এই দিনটিতে বিনামূল্যে চা-বিস্কুট খাওয়ান অজিত। এক সময়ে সল্টলেকে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন অনিলবাবু।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৮
স্মরণ: ক্রেতাকে চা এগিয়ে দিচ্ছেন অজিতবাবু। রবিবার, সল্টলেকের এ-ই ব্লকে। নিজস্ব চিত্র

স্মরণ: ক্রেতাকে চা এগিয়ে দিচ্ছেন অজিতবাবু। রবিবার, সল্টলেকের এ-ই ব্লকে। নিজস্ব চিত্র

চায়ের পেয়ালা ভরে মন ভালো করে দেওয়া স্বাদ বিলি! বিনামূল্যে চা-বিস্কুট খাইয়েই বাবা অনিল রায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করলেন বাগুইআটি অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা অজিত রায়।

পাঁচ বছর আগে ১১ নভেম্বর ৮৮ বছর বয়সে অনিলবাবুর মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই এই দিনটিতে বিনামূল্যে চা-বিস্কুট খাওয়ান অজিত। এক সময়ে সল্টলেকে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন অনিলবাবু। পরে সল্টলেকে এ-ই মার্কেটে একটি দোকান পান। অজিত বলেন, “অনেক কষ্ট করে বাবা এই দোকান দাঁড় করিয়েছেন। খদ্দেরদের সঙ্গে বাবার আত্মিক যোগ গড়ে উঠেছিল। যাঁদের চা খাইয়ে বাবা আনন্দ পেতেন, তাঁদের আজকের দিনে বিনামূল্য চা-বিস্কুট খাইয়ে বাবার প্রতি সম্মান জানালাম।’’

দুই কন্যা এবং এক পুত্রের বাবা অজিতের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। তবে বাবার ছবি পোস্ট করে নয়, চায়ের কাপ হাতে ধরিয়েই লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের সুখ উপভোগ করেছেন অজিত। তাঁর ছেলে অনির্বাণ পদার্থবিদ্যার ছাত্র। এক মেয়ে অনিন্দিতা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পড়ছেন। বড় মেয়ে রনিতা স্নাতকোত্তর অবধি পড়েছেন। তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দাদুর স্মৃতির উদ্দেশে তাঁদের বাবার কাজে সন্তানেরা সকলেই গর্বিত। দোকানের সামনে টাঙানোর জন্য পোস্টার তৈরি করেছেন অনিন্দিতা। একটিতে লেখা, ‘‘টুডে নো পে ফর টি’’। আর অন্যটিতে লেখা, স্বর্গীয় অনিল রায়ের স্মৃতিতে রবিবার যাঁরা চা খাবেন, তাঁদের কোন‌ও টাকা দিতে হবে না। শুধু অনিলবাবুর আত্মার শান্তি কামনা করার অনুরোধ করা হয়েছে ওই পোস্টারে। অজিত জানান, রবিবার একবেলা তিনি দোকান বন্ধ রাখেন। কিন্তু এ দিন সারাদিন‌ই খোলা রেখেছেন দোকান।

পুজোর জন্য বাড়ি ফিরেছেন আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি অভিজিৎ ভৌমিক। চায়ে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে বললেন, “১১ নভেম্বর দিনটা ভুলব না। বাবাকে এক ছেলের সম্মান জানানোর দিন হিসেবে স্মৃতিতে থাকবে।” এ দিন চা খেয়ে জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মী প্রসূন বিশ্বাস পকেটে হাত দিতেই মাথা নেড়ে অজিতবাবু পোস্টারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আজ থাক।” ছুটির দিনে আড্ডার সঙ্গে অনেকেই একাধিক বার চা পান করেন। বারবার বিনা পয়সায় চা খেতে অনেকে কুণ্ঠিত বোধ করেন। কিন্তু অজিত অনড়। তাঁর বক্তব্য, “টাকা নিলে তো আমার

উদ্দেশ্য সফল হবে না।” এ কথা শুনে ধাপার মাঠপুকুরের বাসিন্দা ঝন্টু হাজরা বলেন, “আপনার দেওয়া শিক্ষা মনে রাখব।”

অজিত অবশ্য একা নন। রায় পরিবারে এমন শিক্ষক আর‌ও এক জন রয়েছেন। তিনি অজিতবাবুর ভাগ্নে, জগৎপুরের বাসিন্দা সমীর বিশ্বাস। তাঁর বাবা খোকন বিশ্বাসের তিন বছর মৃত্যু হয়েছে। পেশায় চিকিৎসক সমীর বাবার মৃত্যুর দিনে একবেলা বিনামূল্যে রোগী দেখেন। সুমিতের কথায়, “অন্য ভাবেও বাবাকে স্মরণ করা যেত। কিন্তু তাতে কিছু উদ্দেশ্য সাধন হত না। কেবল প্রচার‌ই হত। তাই বাবার মৃত্যুদিন আর ছেলের জন্মদিনে এখানকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে একবেলা রোগী দেখার টাকা নিই না।’’

সন্তানের হাতে বাবা-মা নিগৃহীত হচ্ছেন, এমন দৃষ্টান্ত এখন দিকে দিকে। বাবা-মাকে যাঁরা অবজ্ঞা করেন, তাঁদের কিছু বলবেন? কাপে চা ঢালতে ঢালতে অজিত বলেন, “বলার তো কিছু নেই। এটা নিজেকেই উপলব্ধি করতে হয়‌।’’

Spiritual Tea Stall Tea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy