Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

৫০ হাজার টাকার জন্যই পিটিয়ে খুন

গত ৫ জুন উত্তর কলকাতার খন্নার হাট থেকে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে খবর পায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি ক্লাবঘরের দরজা ভেঙে রতনের মৃতদেহটি উদ্ধার করে তারা।

রতন কর্মকার

রতন কর্মকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০১:১২
Share: Save:

মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্যই মানিকতলার হরিশ নিয়োগী রোডে পিটিয়ে মারা হয়েছিল রতন কর্মকার নামে এক ব্যক্তিকে। টাকা চেয়ে রতনের পরিবারকে ধৃতেরা ফোনও করেছিল। গত ১৫ দিন ধরে তদন্তের পরে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। মানিকতলা থানা সূত্রের খবর, টাকা আদায় করতেই একটি ক্লাবঘরে রতনকে জোর করে ঢুকিয়ে চোর বলে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাতেই রতনের লিভার ফেটে যায়, কিডনিতে রক্ত জমাট বাঁধে এবং বুকের একটি পাঁজর ভেঙে যায় বলে ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে।

গত ৫ জুন উত্তর কলকাতার খন্নার হাট থেকে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে খবর পায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি ক্লাবঘরের দরজা ভেঙে রতনের মৃতদেহটি উদ্ধার করে তারা। এর পরে ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাসের নেতৃত্বে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়। হরিশ নিয়োগী রোডেরই বাসিন্দা তাপস সাহা, সুরজিৎ কুন্ডু ওরফে গৌর, সৌমেন সরকার, দিব্যেন্দু মল্লিকচৌধুরী এবং দীপ সরকার নামে পাঁচ জনকে শহরের আলাদা আলাদা জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এর পরে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেন তদন্তকারীরা। জানতে পারেন, সাতান্ন বছরের রতন হুগলির আদিসপ্তগ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রায়ই খন্নার হাটে যেতেন। ঘটনার দিন কয়েক হাজার টাকার ‘লেগিংস’ নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। খন্নার হাটে তাঁকে দেখতে পেয়ে অভিযুক্ত দীপ ফোন করে প্রতিবেশী বন্ধু গৌরকে ডেকে নেন। দু’জনে রতনকে মারধর করে মোটরবাইকে বসিয়ে ওই ক্লাবঘরে তুলে নিয়ে যান। সেখানেই ছিল তাপস, সৌমেন এবং দিব্যেন্দুরা।

পুলিশের কাছে জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছেন, টাকা আদায়ের জন্য রতনকে মারধর করে বাড়িতে ফোন করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি রাজি না হলে ব্যাট-উইকেট দিয়ে তাঁকে মারধর করে গৌর ও দীপ। তাতেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন রতন। এর পরে তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে কল লিস্ট দেখে ছোট মেয়ে অনামিকা দলুইয়ের এক বান্ধবীকে ফোন করে সৌমেন। অনামিকার দাবি, ‘‘আমার বন্ধুকে ফোনে প্রথমে ওরা বলে, বাবা অটো দুর্ঘটনায় পড়েছে। মেডিক্যালে ভর্তি। পরে আবার ফোন করে বলে বাবা চুরি করে ধরা পড়েছে। বন্ধু আমায় ফোনে জানায়। কিন্তু আমি গুরুত্ব দিইনি। এর পরে বাবার ফোন থেকেই আমার নম্বর বার করে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা চায় ওরা।’’ অনামিকার দাবি, ধৃতেরা আগেও অনেককে চোর বলে ওই ক্লাবে তুলে নিয়ে গিয়ে টাকা আদায় করেছেন।

পুলিশ অবশ্য জেনেছে, মাস দু’য়েক আগে রতনকেই টাকা আদায়ের জন্য ওই ক্লাবে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন ধৃতেরা। সেই সময়ে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে রতনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় তাঁর পরিবার। এ বার হয়তো তাই রতনকে ধরে রাখার খবর পেয়েও সে ভাবে তৎপর হননি তাঁর বাড়ির লোকেরা। অনামিকা অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে বলেন, ‘‘পুলিশকে মনের মতো গল্প শুনিয়েছে ওরা। আমরা কখনওই টাকা দিয়ে বাবাকে ছাড়াইনি। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন আমি আর মা দিল্লিতে দিদির বাড়িতে ছিলাম। বাড়ি ফিরে কয়েক দিনের মধ্যেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মা মারা যান।’’

রতনের খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যে আদিসপ্তগ্রামেও গিয়েছে কলকাতা পুলিশ। আগামী ২৪ জুন ধৃতদের ফের আদালতে তোলার কথা। তার পরে অনামিকার যে বান্ধবীকে ফোন করেছিল ধৃতেরা, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন তদন্তকারীরা। অনামিকা বলেন, ‘‘পুলিশ বলছে, গৌর আর দীপই বাবাকে মেরেছে। বাকিরা মারধর করেনি। কিন্তু আমি তা মানি না। সকলেই দোষী। ওদের কড়া শাস্তি চাই। চোর হলে পুলিশে দিতে পারত। মেরে ফেলবে কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Police Lynching Maniktala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE