Advertisement
০১ মে ২০২৪
Alipore Zoological garden

ভিড়ের চাপে দলছুট বহু শিশু, চোখের জলে উৎসব মাটি

অনেক জায়গায় আনন্দের পরিবেশের মধ্যেও দেখা গিয়েছে শিশুদের ছলছলে চোখের ছবি। ভিড়ের মধ্যে অভিভাবকেরহাত ছাড়িয়ে তারা ছিটকে গিয়েছে এ দিক-সে দিক।

চিড়িয়াখানায় ভিড়।

চিড়িয়াখানায় ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২১
Share: Save:

দুপুর তখন ৩টে। ছলছলে চোখে কয়েক জন শিশু চেয়ে আছে ভিড়ের দিকে। যদি সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসেন মা-বাবা কিংবা পরিচিতেরা। ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে মুখগুলো। পাশে বসা ব্যক্তি সমানে মাইকে ঘোষণা করে চলেছেন বাচ্চাগুলির নাম। যদি তাদের আত্মীয়েরা সেই ঘোষণায় সাড়া দেন।

নতুন বছরের প্রথম দিন, সোমবার উৎসবের মেজাজে থাকা শহরে এই ছবি আলিপুর চিড়িয়াখানার।শীঘ্রই স্কুল খুলে যাবে। তাই সন্তানদের নিয়ে এ দিন অগুনতি অভিভাবক এসেছিলেন চিড়িয়াখানায়। এ দিন সরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল।ফলে ভিক্টোরিয়া, ময়দান, চিড়িয়াখানায় দর্শক উপচে পড়েছে। একই ছবি দেখা গিয়েছে ইকো পার্ক এবং নিক্কো পার্কে।

তবে অনেক জায়গায় আনন্দের পরিবেশের মধ্যেও দেখা গিয়েছে শিশুদের ছলছলে চোখের ছবি। ভিড়ের মধ্যে অভিভাবকেরহাত ছাড়িয়ে তারা ছিটকে গিয়েছে এ দিক-সে দিক। চিড়িয়াখানা কিংবা বিনোদন পার্কের ভিতরে দলছুট হয়ে তাদের কাঁদতে দেখেদর্শকেরাই পুলিশের জিম্মায় পৌঁছে দিয়েছেন। পুলিশকে বার বার দেখা গিয়েছে, শিশুদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সময়ে অভিভাবকদের ধমক দিতে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন আলিপুর চিড়িয়াখানায় ৩০-টিরও বেশি শিশুকে দলছুট অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে বার বার তাদের নাম মাইকেঘোষণা করার পরে পরিবারের লোকজনের খোঁজ মেলে। এ দিন চিড়িয়াখানায় অনুসন্ধান অফিসের সামনে পৌঁছে দেখা যায়, সাত-আট জন বাচ্চা কাঁদো কাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে। তাদের নাম মাইকে ঘোষণা করে অভিভাবকদের ডাকছেন পুলিশকর্মীরা। আবার সন্তান হারিয়ে যাওয়ায় সেখানে দাঁড়িয়েহাউহাউ করে কাঁদছেন মা, এমন ছবিও চোখে পড়েছে। সাঁকরাইলেরবাসিন্দা দীপালি অধিকারী নামে ওই মহিলা তাঁর ১২ বছরের ছেলে দেবজিৎকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। দীপালি বলেন, ‘‘বাঘের খাঁচারসামনে ভিড়ের মধ্যে ছেলের হাত ছেড়ে যায়। তার পর থেকে ওকে পাচ্ছি না।’’ শেষে অবশ্য দেবজিতের সন্ধান মেলে।

বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা সাহিন যাদব দীর্ঘ সময় থমথমে মুখে দাড়িয়েছিল বাঘের খাঁচার সামনে।তাকে কাঁদতে দেখে এক দর্শক অনুসন্ধান অফিসে পৌঁছে দেন। তার আত্মীয় এসে পৌঁছতেই কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক তাঁকে ধমকে বলেন, ‘‘বাচ্চা নিয়ে এলে খেয়াল রাখবেন না সে কোথায় যাচ্ছে? এখান থেকে বাচ্চাকে কেউ নিয়ে গিয়ে পাচার করে দিলে কী করতেন?’’

আবার শ্রীরামপুর থেকে আসা ছোট্ট শেখ শামিউল করিমকে খুঁজে পেয়ে মা খাদিজা বেগমঅনুসন্ধান অফিসে পৌঁছে জানান, ভিড়ের চাপে শামিউল তাঁর নাগাল ছাড়িয়ে যায়। হালতু থেকে স্ত্রী ও আট বছরের মেয়েকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া দেখতে এসেছিলেন সুপ্রতীক চক্রবর্তী। বললেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে সব চালু হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বছরের প্রথম দিন এত ভিড়।আমি মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি।’’ কলকাতার পাশে ইকো পার্কেও এ দিন দশটির বেশি শিশু দলছুট হয়ে পড়ে। তবে সবাইকেই উদ্ধার করা গিয়েছে।

শনিবার ছিল সপ্তাহান্ত। তার পরে রবিবার এবং সোমবার—দু’টি ছুটি পাওয়ায় নতুন বছর যাপন নিয়ে উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। লোকজনকে দেখা যায় নতুন বছরের ক্যালেন্ডারে উৎসবের দিনগুলিতে চোখ বোলাতে। কসবা থানার বাইরে চায়ের দোকানে বসে দুই নাগরিক হরিশঙ্কর দত্ত ও পেলবকুমার দত্তকে দেখা গেল ক্যালেন্ডারে দেখছেন, দুর্গাপুজো এ বছর কবে শুরু।

সাধে বলে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alipore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE