কোমর থেকে কম উচ্চতার নর্দমা পরিষ্কার করতে ম্যানহোলে নেমে বালতিভর্তি পাঁক তুলে দিচ্ছেন এক কর্মী। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অপর জন সেই বালতি তুলে একধারে রেখে দিচ্ছেন। ম্যানহোলের ভিতরে নেমে যিনি কাজ করছেন, তাঁর হাতে গ্লাভস বা পায়ে বুটের বালাই নেই। নেই অন্য কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থাও। নর্দমার কটু গন্ধ ঢাকারও কোনও ব্যবস্থা নেই। দক্ষিণ দমদম পুরসভার অধীনে যশোর রোড লাগোয়া একটি এলাকায় সম্প্রতি ফের এমন ছবি দেখা গিয়েছে। এ ভাবে ম্যানহোলে মানুষ নামিয়ে কাজ করানোর ক্ষেত্রে নানারকম বিধিনিষেধ রয়েছে। অথচ তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, কোনও রকম সুরক্ষা ব্যবস্থার বালাই না রেখে এ ভাবেই কাজ চলছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুরসভা অবশ্য জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।
দমদম পুর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এমন দৃশ্য সেখানে প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা শুভেন্দু দাস বলছেন, ‘‘রাস্তার ধারে অনেক ক্ষেত্রেই নর্দমার পাঁক তুলতে দেখেছি। কিন্তু নর্দমার ভিতরে কটু গন্ধ ঢাকার ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। অনেক ক্ষেত্রে নর্দমার ভিতরে খালি পায়েও কাজ করতে দেখা যায় কর্মীদের। এতে তাঁদের বিপদের ঝুঁকিও থাকে। প্রশাসনের এ দিকে নজর দেওয়া দরকার।’’ যদিও এই অভিযোগ পুরোপুরি মানতে নারাজ দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভা। তাদের দাবি, নর্দমা সাফাইয়ের দায়িত্ব বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া হয়। বড় নিকাশি নালার ক্ষেত্রে মূলত যন্ত্রের সাহায্যে সাফাই করা হয়। ছোট নর্দমাগুলির ক্ষেত্রে (যেগুলির উচ্চতা কোমরসমান) সংস্থাগুলি কর্মীদের ব্যবহার করেই সাফাইকাজ করে থাকে। তবে সেই সব দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলিকে শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখেই কাজ করার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। তবে সেই নিয়ম বরাত পাওয়া সংস্থাগুলি মানছে কি না, তা দেখার জন্য কোনও নজরদারি আদৌ আছে কি, সেই প্রশ্ন উঠছে। দুই পুর কর্তৃপক্ষেরই দাবি, এ বিষয়ে নজরদারি রয়েছে। যদিও বাস্তবের সঙ্গে পুরসভার দাবি যে মিলছে না, তা দক্ষিণ দমদমের ম্যানহোলে নেমে সাফাইকাজের ছবিটিই বলে দিচ্ছে।
দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট জানান, পুর এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া রয়েছে যে, নর্দমা সাফাইয়ের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সব রকমের সুরক্ষা ব্যবস্থা যেন বলবৎ করা হয়। এবং সে দিকে নজরও রাখা হয়। দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক চেয়ারম্যান পারিষদ পার্থ বর্মা বলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটে থাকলে পদক্ষেপ করা হবে। নর্দমা সাফাই সংস্থার মাধ্যমে করা হয়। শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়ে তাদের নির্দেশ দেওয়া আছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে দিকে জোর দেওয়া হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)