Advertisement
১০ ডিসেম্বর ২০২৪

দরজা অর্ধেক বন্ধ, সেই অবস্থাতেই ছুটল মেট্রো!

শরীরের কোনও অংশ ট্রেনের বাইরে থাকলে কী হত, ভাবতেই শিউরে উঠছেন। বড় ধরনের বিপদ যে হতে পারত, তা মেনে নিয়েছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

এক বার থমকে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মেট্রোর দরজা। সেই অবস্থাতেই কোনও মতে শরীরটাকে কামরার ভিতরে ঢোকাতে পারলেও কাঁধের ব্যাগটি আর ভিতরে আনতে পারেননি এক মহিলা যাত্রী। দরজা অর্ধেক বন্ধ অবস্থাতেই ছেড়ে দেয় ট্রেন। দমদম থেকে পার্ক স্ট্রিট— টানা ২০ মিনিটের যাত্রায় আর দরজা ছেড়ে নড়তে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিট পৌঁছে বাঁ দিকে মেট্রোর দরজা খোলার পরে কোনও মতে কামরার ভিতরে সরে আসার সুযোগ পান ওই যাত্রী।

ঘটনাটি মঙ্গলবার সকালের। মাঝের সময়ে কয়েক জন যাত্রী ওই মহিলাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেও কুড়ি মিনিটের যাত্রার ভয় এবং আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
শরীরের কোনও অংশ ট্রেনের বাইরে থাকলে কী হত, ভাবতেই শিউরে উঠছেন। বড় ধরনের বিপদ যে হতে পারত, তা মেনে নিয়েছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে মেট্রো স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের নজরদারি নিয়ে। তবে মেট্রোর কর্তারা বলছেন, অনেক সময়ে যাত্রীরাও মরিয়া হয়ে শেষ মুহূর্তে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন। সেই প্রবণতাও বিপজ্জনক।

ঠিক কী ঘটেছিল?

ওই মহিলা জানিয়েছেন, তিনি দমদমের বাসিন্দা। অধ্যাপনা করেন দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজে। রোজকার মতো কলেজ যাওয়ার জন্য দমদম থেকে মেট্রোয় যতীন দাস পার্ক যাচ্ছিলেন তিনি। সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ দমদমে একটি নন এসি রেকে ওঠার সময়ে ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনাচক্রে ওই দিন মহিলার দমদম স্টেশনে পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে মেট্রোর দরজা বন্ধ হওয়ার সময়ে কামরায় পা রাখেন তিনি। সেই অবস্থায় দরজা এক বার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে কনুইয়ের উপর থেকে মহিলার হাত এবং ব্যাগ আটকে যায়। সেই ধাক্কার জেরে দরজা ফের খুললে ওই যাত্রী কোনও ভাবে ভিতরে সরে আসেন। কিন্তু ব্যাগটি ঢোকাতে পারেননি। ব্যাগে ছিল বই, জলের বোতল, টাকা রাখার পার্স, মোবাইল ইত্যাদি।

দরজায় ব্যাগ আটকে যাওয়া অবস্থাতেই ছেড়ে দেয় ট্রেন। ডান দিকে একের পর এক স্টেশন এলেও বাঁ দিকের গেট ছেড়ে নড়ার সুযোগ পাননি ওই মহিলা। মেট্রো সূত্রের খবর, তাঁর অবস্থা দেখে কামরা থেকে মেট্রোর হেল্পলাইনে ফোন করেন এক যাত্রী।কর্তব্যরত আধিকারিক ট্রেনের সময়, নম্বর, কোন কামরা ইত্যাদি জানতে চান। ট্রেনের সময় বলতে পারলেও সেটির নম্বর স্বাভাবিক ভাবেই জানাতে পারেননি ওই যাত্রী। ওই আধিকারিক জানান, পার্ক স্ট্রিট আসার আগে বাঁ দিকের দরজা খোলা সম্ভব নয়। বহু যাত্রী যেহেতু দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাই বাঁ দিকে আচমকা দরজা খুললে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওই যাত্রীকে এক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। মিনিট ২০ পরে ট্রেন পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছলে দরজা খোলে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তিনি।

বুধবার ওই যাত্রী বলেন, ‘‘কলেজে পৌঁছনোর তাড়া ছিল। তাই ট্রেন ছাড়তে চাইনি। কিন্তু যে অভিজ্ঞতা হল, কোনও দিন ভুলব না।’’

মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘যাত্রীদের একাংশ অনেক সময়েই তাড়াহুড়ো করে, একেবারে শেষ মুহূর্তে ওঠা-নামা করেন। তবে সবাই ঠিক মতো উঠতে পারলেন কি না, প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত রেলরক্ষী বাহিনীর কর্মীরা এবং ট্রেনের গার্ড তা নজরে রাখেন। এ ক্ষেত্রে কোথাও বিষয়টি নজর এড়িয়েছে।’’

মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যিনি কন্ট্রোল রুমে ফোন করেছিলেন, তাঁর নাম-পরিচয়, কোন কামরা থেকে
বলছেন জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি শুধু ট্রেনের সময়টুকু বলে ফোন কেটে দেন। প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছি। বড় কোনও বিপত্তি ঘটেনি। তবে ওই যাত্রীও দরজা বন্ধ হওয়ার বেল বাজার পরে মরিয়া হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Metro Door Safety
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy