Advertisement
০১ মে ২০২৪

জলস্তরে আঘাত, মেট্রোর কাজ নিয়ে সংশয়

কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানস সরকার বলেন, ‘‘শহরের বহু জায়গায় মাটির নীচে এমন অ্যাকুইফার রয়েছে। সেগুলি বাঁচিয়েই আমরা কাজ করেছি। কিন্তু এখানে জলের চাপ অস্বাভাবিক বেশি ছিল।’’

বিপত্তি: মেট্রোর কাজের জেরে বাড়ির মেঝে এবং থামে গভীর ফাটল। রবিবার, বৌবাজারে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বিপত্তি: মেট্রোর কাজের জেরে বাড়ির মেঝে এবং থামে গভীর ফাটল। রবিবার, বৌবাজারে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৭
Share: Save:

মাটির যে স্তরে জল থাকে, অর্থাৎ ‘অ্যাকুইফার’, সেটা ঠিক কোথায়, তা সব সময়ে নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কোনও সুড়ঙ্গ বা পাইপলাইন তৈরির সময়ে যদি সেই ভূগর্ভস্থ জলের স্তরে আঘাত আসে, তা হলে অবিরল জলস্রোত নির্গত হতে থাকে। যেমনটা হয়েছে দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেন সংলগ্ন ভূগর্ভস্থ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ তৈরির ক্ষেত্রে। অন্তত এমনটাই অনুমান কলকাতা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষও এই বিপর্যের জন্য ‘অ্যাকুইফার’-এর কথাই উল্লেখ করেছেন। সুড়ঙ্গে জলের প্রবল আঘাতের কারণে মাটি নরম হয়ে গিয়ে এই এলাকার একাধিক বাড়ি বসে গিয়েছে। একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে, খসে পড়েছে চাঙড়।

কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানস সরকার বলেন, ‘‘শহরের বহু জায়গায় মাটির নীচে এমন অ্যাকুইফার রয়েছে। সেগুলি বাঁচিয়েই আমরা কাজ করেছি। কিন্তু এখানে জলের চাপ অস্বাভাবিক বেশি ছিল।’’ জল যে ভাবে বেরোচ্ছে, তাতে কি আর কাজ করা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরে মানসবাবু বলেন, ‘‘কাজের কথা এই মুহূর্তে ভাবছি না। মাটির উপরের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’’

তবে যে ভাবে ভূগর্ভস্থ জলস্তরে নাড়া পড়েছে, তাতে আদৌ ওই টানেলের কাজ সম্পূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। বিভিন্ন সময়ে জলের পাইপ বা নিকাশির লাইন পাততে গিয়েও তাঁদের এই অ্যাকুফারের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। যেমন, টালা-পলতা জলপ্রকল্পের পাইপ যখন পাতা হয়েছিল, তখন প্রধান চ্যালেঞ্জই ছিল ভূগর্ভস্থ জল-স্তরে যাতে আঘাত না আসে সেটা দেখা। পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, এমনিতে মাটির কোন স্তরে অ্যাকুইফার রয়েছে, তা চিহ্নিত করা দীর্ঘকালীন ও পরীক্ষাসাপেক্ষ বিষয়। বিদেশেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যাবতীয় পরীক্ষার পরেও অ্যাকুইফারকে নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গিয়েছে।

পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘কোথায়, কখন, কী অ্যাকুইফারকে আঘাত করবে বলা মুশকিল। আর এ তো এমন নয় যে, জল বেরোনো বন্ধ করে দেওয়া গেল। এক বার এমন হলে জল বেরোতেই থাকবে। ফলে ওখানে মেট্রোর সুড়ঙ্গের কাজ হবে কি না, সেই সংশয় রয়েছে।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক পঙ্কজকুমার রায় আবার বলছেন, ‘‘মাটির নীচে অনেক স্তরেই জল-পকেট থাকে। তার মধ্যে কিছু জল-পকেট স্থায়ী। সেই স্থায়ী জলস্তরের জলের চাপ স্বাভাবিক জলস্তরের চাপের থেকে অনেক বেশি। এ বার দেখতে হবে, এই ক্ষেত্রে টানেল সেই স্থায়ী জলস্তরকে আঘাত করেছে কি না। তেমন হলে পরবর্তীকালে সুড়ঙ্গে কাজ চালানো একটু মুশকিলই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Metro Tunnel Boring Aquifer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE