বেশ কিছু দিন ধরেই শব্দবাজির বিরুদ্ধে সচেতনতা অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। নিয়মিত চলছে শহরের নানা প্রান্তে শব্দবাজি আটক। বি়জ্ঞপ্তি জারি করে শব্দবাজিকে নিষিদ্ধ ঘোষণাও করা হয়েছে পুলিশের তরফে। এত চেষ্টা যাতে বিফলে না যায়, এ বার তা নিশ্চিত করার পালা। কালীপুজোর রাতে শহরজুড়ে কড়া নজরদারি চালাতে এ বার কোমর বেঁধেছে কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ।
শহরের অলিগলি থেকে বহুতল বা়ড়ির ছাদ, কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির রমরমা থাকে সর্বত্রই। তা থেকে শিক্ষা নিয়েই পুলিশ এ বার বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা নিচ্ছে। শহরে এ সময়ে মোতায়েন করা হবে অতিরিক্ত বাইকধারী পুলিশ। অন্যান্য বছরের তুলনায় কালীপুজোর রাতে অতিরিক্ত সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হবে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) অশেষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘শব্দবাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোথাও শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে যাতে ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ, তার জন্য এই বাড়তি আয়োজন।’’
ডিসি জানান, গত দশ দিনে শহরে ৫ হাজার ৩০০ কেজি নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার বাজেয়াপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ শব্দবাজির পরিমাণ বেশি বলেই বক্তব্য তাঁর।
শব্দবাজির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বুধবার লালবাজারে কলকাতা পুলিশ ও দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে একটি সাংবাদিক সম্মেলন হয়। সেখানে উপস্থিত কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এইচ কে কুসুমাকর বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছনোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। কিন্তু শব্দবাজির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে কলকাতা পুলিশের তরফে এই মাধ্যমটিকে প্রচারের কাজে ব্যবহার করা গেল না। আমরা আশা করি, আগামী বছর থেকে ওই মাধ্যমটি আরও ব্যবহার করবে কলকাতা পুলিশ।’’
শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে সাদা পোশাকের অতিরিক্ত পুলিশ নামাচ্ছে বিধাননগর কমিশনারেটও। চলছে বাজি আটক, সচেতনতার প্রচারে রকমারি অভিযান। তবু সল্টলেক, নিউ টাউন, বাগুইআটির অলিগলিতে ইতিমধ্যেই সন্ধ্যার পরে মাঝেমধ্যে কানে আসছে বাজির শব্দ। আর তাতেই আশঙ্কা বাড়ছে বাসিন্দাদের। এখনই যদি এমন হয় তবে কালীপুজোর রাতে কী হবে, চিন্তায় অনেকেই। পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, সেই সব আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই এ বার বিশেষ পরিকল্পনা হয়েছে বিধাননগরে। অক্টোবরের শুরু থেকেই সাদা পোশাকে নজরদারি চলছিল। কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকে অভিযান আরও বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে গাড়ি পরীক্ষার পাশাপাশি, বিভিন্ন বাজারে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ।
এক সপ্তাহে কমিশনারেটের এলাকা ও জনসংখ্যার অনুপাতে বাজেয়াপ্ত বাজির পরিমাণ খুব বেশি না হলেও পুলিশকর্তাদের দাবি, সব দিক ভেবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। নজরদারির জন্য মোবাইল পেট্রোলিং থেকে শুরু করে নানা ধরনের ভাবনা আছে।
তবে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় বাজি তৈরি হয় না। বাইরে থেকে কিনে স্থানীয় বাজারগুলিতে বাজি বিক্রি হয়। আবার অনেকে সরাসরি চম্পাহাটি-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজি কিনে আনেন। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শব্দবাজির দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন পুজো কমিটি, স্থানীয় ক্লাব এবং বহুতল আবাসিক কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক চলছে। পাশাপাশি, সচেতনতার প্রচারও চালানো হচ্ছে জোরকদমে। বুধবার বিধাননগর পূর্ব থানা এলাকায় স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালায় পুলিশ। আজ, বৃহস্পতিবার লেকটাউনেও একটি বড় প্রচার মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে।
তবে বাসিন্দাদের একটি অংশের অভিযোগ, শব্দবাজির দৌরাত্ম্য হলে পুলিশকে অভিযোগ জানালে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে সমস্যা দেখা দেয়, তাই ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চান না। তবে পুলিশকর্তারা এই বিষয়ে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, নিশ্চিন্তে বাসিন্দারা অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগকারীর পরিচিতি গোপন রাখা হয়। শব্দবাজির দৌরাত্ম্য প্রসঙ্গে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘আনন্দ যেন অন্যের বিপদ তৈরি না করে, সে দিকে খেয়াল রাখতেই হবে। আইন মেনে চলতে হবে আমাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy