Advertisement
০৬ মে ২০২৪

এক চোরই সাফ করে দিল ব্যাঙ্কের ভল্ট

বলিউডের ‘ধুম ২’ ছবির সেই কুখ্যাত চোর ‘মিস্টার এ’-র কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কারও কারও। চলন্ত ট্রেন থেকে রানির রত্নখচিত মুকুট বা জাদুঘর থেকে মূল্যবান হিরে— সব হাতানোই যেন ‘এ’-র কাছে ছিল জলভাত। নিরাপত্তা ছিল তুচ্ছ। প্রথমে তার কোনও সহকারীও ছিল না।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫২
Share: Save:

ব্যাঙ্কের ভল্টে রাখা সমস্ত নোট সাফ করে দিয়েছে চোর। পড়ে আছে শুধু কয়েন। ধর্মতলার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ভল্ট কেটে পুজোর সময়ে ২৯ লক্ষ টাকারও বেশি চুরি হয়েছে বলে পুলিশ জেনেছে। সাম্প্রতিক অতীতে শহরের কোনও ব্যাঙ্কে এমন সিঁধেল চুরির ঘটনা ঘটেনি। রবিবার সিসিটিভি-র ফুটেজ ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, এটা কেবল এক জন চোরের কাজ!

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সেই চোরের মুখ ঢাকা ছিল না। দাগি চোরেদের ছবির সঙ্গে তার ছবি মিলিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

বলিউডের ‘ধুম ২’ ছবির সেই কুখ্যাত চোর ‘মিস্টার এ’-র কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কারও কারও। চলন্ত ট্রেন থেকে রানির রত্নখচিত মুকুট বা জাদুঘর থেকে মূল্যবান হিরে— সব হাতানোই যেন ‘এ’-র কাছে ছিল জলভাত। নিরাপত্তা ছিল তুচ্ছ। প্রথমে তার কোনও সহকারীও ছিল না।

কিন্তু ধর্মতলার ব্যাঙ্কের পুরু ইস্পাতের ভল্ট কী ভাবে কাটল চোর?

হলিউড কিংবা বলিউডের ছবিতে এ সব ক্ষেত্রে গ্যাস কাটার ব্যবহার হচ্ছে বলে দেখানো হয়। বাস্তবে ৭ নম্বর জওহরলাল নেহরু রোডে চোর ভল্ট কেটেছে সিঁধেল চুরি করার বিশেষ এক সরঞ্জাম দিয়ে। অপরাধ জগতের ভাষায় ‘গামছা’। এর সঙ্গে কাপড়ের সম্পর্ক নেই। লোহার তৈরি, দেখতে শাবলের মতো, তবে মুখটা ছুঁচলো। পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে সেই গামছা দিয়েই চোরকে ভল্ট কাটতে দেখা গিয়েছে।

অতীতে মাটির দেওয়ালে ছোট শাবল দিয়ে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকত পাকা চোরেরা। পরবর্তী সময়ে শহুরে সিঁধেল চোরেরা ‘গামছা’র ব্যবহার চালু করে। চাড় দিয়ে কোল্যাপসিবল গেট খোলা, তালা ভাঙার কাজে গামছা কার্যকর সরঞ্জাম।

পুলিশের বক্তব্য, ঘণ্টা চারেকের মধ্যে ভল্ট কেটে নোট সব ঝেড়েপুঁছে নিয়ে চোর ভেগেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ষষ্ঠী, মানে মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে। মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক খোলা ছিল। ওই দিন বিকেল পাঁচটার পরে লাখ চারেক টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়ে। তদন্তকারীরা বলছেন, ভল্টে প্রায় ৩০ লক্ষ নগদ টাকা রেখেই যে ছ’দিনের ছুটিতে ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়েছে, সেটা চোর জানত। তাই, ব্যাঙ্কের ভিতরের কারও জড়িত থাকার সম্ভাবনা গোয়েন্দাদের একাংশ উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

ঘটনাচক্রে একই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নাকতলা শাখায় গত ১৩ অগস্ট গভীর রাতে চুরির চেষ্টা হয়েছিল। সে বারও গ্রিল ভেঙে ঢুকে ভল্ট কাটার চেষ্টা হয়েছিল। তবে সে বার ব্যাঙ্কের ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি অকেজো করে দেওয়া হয়।

ব্যাঙ্কের একটি সূত্রের দাবি, জওহরলাল নেহরু রোডের শাখাটি দিনে সর্বাধিক ২৫ লক্ষ টাকা জমা রাখতে পারে। সেখানে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা জমা ছিল। ব্যাঙ্কের ওই সূত্রটির দাবি, বিমা সংস্থা থেকে ওই অতিরিক্ত লাখ পাঁচেক টাকা পাওয়া যাবে না। ছুটির পরে আজ, মঙ্গলবার ব্যাঙ্ক খোলার কথা। এ নিয়ে অশান্তির আশঙ্কা করছেন ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশ। তবে সীমার অতিরিক্ত টাকা জমা রাখার বিষয়টি ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার প্রতিভা ঠাকুর (মিশ্র) সোমবার অস্বীকার করেছেন।

এ দিন ডিসি (সেন্ট্রাল) মিতেশ জৈন ওই ব্যাঙ্কে যান। এই চুরির পরে এলাকার অন্যান্য ব্যাঙ্কে পাহারা ঠিক মতো আছে কি না, তা সরেজমিন দেখতে শুরু করেছে নিউ মার্কেট থানার পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE