Advertisement
E-Paper

বৃষ্টি কমতেই জমা জলে বাড়ছে মশা

নিম্নচাপের জেরে টানা চার দিনের বৃষ্টির রেশ কিন্তু এখনও কাটেনি। জায়গায় জায়গায় জমে রয়েছে পরিষ্কার জল। বৃষ্টির জল নেমে যাওয়ায় রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত বোতল, ডাবের খোলায় জমে রয়েছে পরিষ্কার জল। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ওই আধারেই ডিম পেড়ে চলে যাবে ডেঙ্গির জীবাণুবাহক এডিস ইজিপ্টাই আর ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহক অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই মশা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০০:৩৫
বৃষ্টিতে জমা জলে বাড়ছে মশা। প্রতীকী ছবি।

বৃষ্টিতে জমা জলে বাড়ছে মশা। প্রতীকী ছবি।

বৃষ্টি কমেছে। টানা বৃষ্টি এখন নেই। আর এটাই ঘরের চার দেওয়ালের বাইরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মশার বংশবিস্তারের আদর্শ পরিবেশ বলে জানাচ্ছেন পতঙ্গবিদেরা।

কী ভাবে?

নিম্নচাপের জেরে টানা চার দিনের বৃষ্টির রেশ কিন্তু এখনও কাটেনি। জায়গায় জায়গায় জমে রয়েছে পরিষ্কার জল। বৃষ্টির জল নেমে যাওয়ায় রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত বোতল, ডাবের খোলায় জমে রয়েছে পরিষ্কার জল। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ওই আধারেই ডিম পেড়ে চলে যাবে ডেঙ্গির জীবাণুবাহক এডিস ইজিপ্টাই আর ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহক অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই মশা।

ম্যালেরিয়া মোটামুটি গা সওয়া হয়ে গিয়েছে শহরবাসীর। কিন্তু বাধ সেধেছে ডেঙ্গি। ডেঙ্গির জীবাণু নিত্যদিন তার চরিত্র বদল করে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা চিকিৎসকদের ধন্দে ফেলে দিচ্ছে। এর মধ্যেই শহরে এক ধরনের জ্বর ছড়াচ্ছে যার উপসর্গ অনেকটা ডেঙ্গির মতো হলেও রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি বা চিকনগুনিয়ার জীবাণু ধরা পড়ছে না।

ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার রোগের চিকিৎসার বিষয়ে অভিজ্ঞ শহরের এক চিকিৎসকের মন্তব্য, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, হাত পায়ের পেশীতে যন্ত্রণা, সঙ্গে ধুম জ্বর, মাথার পিছনে ব্যথা নিয়ে প্রচুর রোগী আসছেন। বিশেষ করে টানা বৃষ্টির সময়টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেই এই ধরনের রোগীরা আসতে শুরু করেছেন। কারও কারও সঙ্গে রয়েছে পেটে ব্যথা। এগুলি ডেঙ্গির উপসর্গ। অথচ ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষায় কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। এ সব থেকে রক্ষা পেতে কোনও চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল খাওয়ারই পক্ষে ওই চিকিৎসক।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, ‘‘যত দিন পর্যন্ত না ডেঙ্গির অ্যান্টিব়ডি পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ হচ্ছে, ততদিন ওই সব রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত।’’

কেন? ওই চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির অ্যান্টিবডি পরীক্ষা জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করা যায় না। চার-পাঁচ দিন পরে ওই পরীক্ষা করাতে হয়। তার আগে রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। কিন্তু রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু (অ্যান্টিজেন) সক্রিয় থাকে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এডিস ইজিপ্টাই মশা কামড়ালে রক্তের সঙ্গে ডেঙ্গির জীবাণুও শুষে নেয় মশা। এর পরে সেটি যাকে যাকে কামড়াবে, সকলের শরীরেই ঢুকবে ডেঙ্গির জীবাণু।

বৃষ্টি ধরতেই সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গা থেকে মশার প্রকোপ বৃদ্ধির খবর মিলেছে। বিশেষত ৩ নম্বর সেক্টর এলাকায় ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের পাড় ধরে ওই সেক্টরের বিস্তীর্ণ এলাকায় মশা বেড়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ইতিমধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও ডেঙ্গিতে আক্রান্তের কোনও খোঁজ নেই বলে দাবি পুরসভার। তাদের আরও দাবি, খালে নৌকা নামিয়ে বহু জায়গায় লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে।

কলকাতা শহরে এ বার ডেঙ্গি তেমন ভাবে দেখা না গেলেও লাগোয়া দক্ষিণ দমদমে যে ভাবে রোগটা ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে স্বাস্থ্য ভবন উদ্বিগ্ন। কলকাতার বিভিন্ন সরকারি ভবন, হাসপাতাল ছাড়াও বৃষ্টি কমে যাওয়ার পরে যে ভাবে বিভিন্ন জায়গায় মিষ্টি জলের আধার তৈরি হচ্ছে, তা চিন্তা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য কর্তাদের। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণ দমদম থেকে ডেঙ্গির জীবাণুবাহক মশার লাগোয়া কলকাতা পুরসভা এলাকায় চলে আসা কেউ রুখতে পারবে না। তাই দমদম, দক্ষিণ দমদম, সল্টলেক, বরাহনগর, কামারহাটি এবং কলকাতার পুরসভার লাগোয়া ওয়ার্ডগুলিতে জ্বরের রোগীদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, শুধু ডেঙ্গি বাহক মশাই নয়, লাগোয়া পুরসভা এলাকা থেকে ডেঙ্গি রোগীরাও চলে আসছেন কলকাতা পুর এলাকায়। তাতে সমস্যা হচ্ছে। ‘‘যত ক্ষণ না পর্যন্ত লাগোয়া পুরসভাগুলির পরিকাঠমো যথাযথ হচ্ছে, তত দিন আমাদের সব থাকা সত্ত্বেও ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া এড়াতে পারব না।’’

কলকাতাকে বাঁচাতে লাগোয়া পুরসভার কর্মীদের তাঁরা প্রশিক্ষণ দেবেন বলে জানিয়েছেন অতীনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের বাঁচানোর জন্য অন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব আমরাই দিয়েছি।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর যত ক্ষণ পর্যন্ত ওই পুরসভাগুলিতে পতঙ্গবিদ নিয়োগ না করছে, ততদিন কলকাতার সঙ্কট যাবে না বলেই মনে করেন মেয়র পারিষদ।

Rain Water Logged Mosquito Dengue ডেঙ্গি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy