E-Paper

কাজ হয়নি মমতার কথাতেও, হারানো জমি ফিরে পেতে বিবাদ ভুলে কাছাকাছি সেই নির্মল-শান্তনু

রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নেপথ্যে থেকে ছড়ি ঘোরানোর অভিযোগ রয়েছে উত্তরবঙ্গ লবির বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী ওই গোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্তে অতিষ্ঠ চিকিৎসক মহলের অধিকাংশ।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ০৫:৫৯
MP physician Shantanu Sen and MLA physician Nirmal Maji are now planning to reunite together for regaining their lost property

শান্তনু সেন ও নির্মল মাজি। ফাইল ছবি।

দু’জনের অম্লমধুর সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। শাসকদলের সেই দুই চিকিৎসক-নেতাকে তাঁদের ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কথা বলেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও তাতে কাজ হয়নি।

কিন্তু আচমকা উলটপুরাণ! সাংসদ-চিকিৎসক শান্তনু সেন ও বিধায়ক-চিকিৎসক নির্মল মাজি এখন একযোগে এগিয়ে চলার সঙ্কল্প করছেন। শান্তনু বলছেন, ‘‘নির্মলদাকে আমি বড় দাদা বলে মনে করি।’’ নির্মল বলছেন, “ভাইয়ের সঙ্গে কখনও বিবাদ ছিলই না।” যা দেখে প্রশ্ন উঠছে স্বাস্থ্য শিবিরের অন্দরমহলে। ‘দুই ভাই’ এক হওয়ার পরেই আচমকা আর জি করের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে বিধায়ক-চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়কে সরিয়ে ফেরানো হয় শান্তনুকে। তাতে জল্পনা আরও বেড়েছে। কারণ, গত বছর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে আর জি কর থেকে শান্তনু ও কলকাতা মেডিক্যাল থেকে নির্মলকে সরিয়ে বসানো হয় সুদীপ্তকে।

সূত্রের খবর, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নেপথ্যে থেকে ছড়ি ঘোরানোর অভিযোগ রয়েছে উত্তরবঙ্গ লবির বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী ওই গোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্তে অতিষ্ঠ চিকিৎসক মহলের অধিকাংশ। সূত্রের খবর, এক সময়ে ওই গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন নির্মল। তখন লড়াই ছিল শান্তনু বনাম নির্মল তথা উত্তরবঙ্গ গোষ্ঠীর। তখন ওই দুই নেতার দ্বন্দ্ব এতটাই প্রকাশ্যে আসে যে, রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে দল। গত বছর ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) কলকাতা শাখার নির্বাচনে দুই নেতার অনুগামীরা মারামারিও করেন। এর পরেই দলের শীর্ষ স্তরের কাছে জমি হারাতে শুরু করেন নির্মল-শান্তনু। সেই জায়গায় তুলে আনা হয় সুদীপ্তকে। হেল্‌থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান, মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি থেকে সব পদেই বসানো হয় সুদীপ্তকে। এ বার মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনেও খুঁজে পাওয়া যায়নি শান্তনু-নির্মলকে। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁদের মনোনীত সদস্য করা হয়।

ওই দুই চিকিৎসক-নেতার ঘনিষ্ঠদের দাবি, “শান্তনু কখনও উত্তরবঙ্গ গোষ্ঠীর লোক ছিলেন না। তাই দলে নির্মলের নম্বর কমতেই ওই গোষ্ঠী সুদীপ্তকে ঘুঁটি করে একচ্ছত্র আধিপত্য চালাচ্ছিল। ওই গোষ্ঠীর প্রভাবেই সুদীপ্ত একের পর এক পদ পেয়েছেন।’’ আর তাতেই অবশেষে বোধোদয় হয়েছে নির্মল-শান্তনুর। তাই হারানো জমি ফিরে পেতে দু’জনে একযোগে উত্তরবঙ্গ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নেমেছেন বলে খবর। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন (পিডিএ) তৈরি করে নির্মলকে সভাপতি এবং শান্তনুকে সম্পাদক করেন মমতা। সূত্রের খবর, সে সময়ে নির্মল একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরির চেষ্টা করায় শান্তনুর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। শেষমেশ সম্পর্ক এতটাই তলানিতে ঠেকে যে, স্বাস্থ্য মহলের অধিকাংশেরই প্রশ্ন ছিল— ‘দুই নেতার চুলোচুলি থেকে কি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিস্তার নেই?’

কিন্তু বিবাদের অধ্যায় পিছনে ফেলে নির্মল বলছেন, ‘‘বিবাদ ছিল না। দলনেত্রী সব কিছু আমাদের দেওয়ায়, হিংসা থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী দু’জনের মধ্যে প্রাচীর তৈরি করেছিলেন।’’ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচনে শান্তনু ভোটে জিতলেও দলের নির্দেশে সভাপতি হন নির্মল। অন্য দিকে, ২০১৯ সালে আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি হন শান্তনু। ১০ বছর ধরে তিনিই ওই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক। এর আগে শান্তনুর সাহায্যে নির্মলও রাজ্য সভাপতি হন। কিন্তু ক্রমশ মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয় দু’জনের।

হালে সম্পর্ক জোড়া লাগতে নির্মলকে আইএমএ-র রাজ্য সভাপতি হতে সাহায্য করেছেন শান্তনু। বলছেন, “নির্মলদা অগ্রজ বিধায়ক। দু’জনেই অনুগত সৈনিক। দলনেত্রীর নির্দেশে একসঙ্গে কাজ করব।” সুুদীপ্ত কোনও বিষয়েই মন্তব্য করতে রাজি নন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Santanu Sen Nirmal Maji

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy