ফুটপাতের একাংশ জুড়ে পরপর খাবারের দোকান। বুধবার, ধর্মতলা চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
জনপ্রতিনিধি না পুর আধিকারিক, আসলে ‘দোষী’ কে? সম্প্রতি জারি হওয়া তিনটি নির্দেশিকার প্রেক্ষিতে এমনই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কলকাতা পুরসভায়।
ওই তিনটি ভিন্ন পুর নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, ফুটপাত দখল সংক্রান্ত তথ্য ঠিক সময়ে পুর কর্তৃপক্ষকে না জানালে বা সে সংক্রান্ত কাজে কোনও গাফিলতি থাকলে, বেআইনি নির্মাণ নিয়ে ঠিক সময়ে পদক্ষেপের ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকলে এবং দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় দেরি হলে সংশ্লিষ্ট পুর আধিকারিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। ওই সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার-সহ সংশ্লিষ্ট পুর আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সাসপেন্ড পর্যন্ত করা হতে পারে। আর এখানেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পুর আধিকারিকদের একাংশে। নিজস্ব বৃত্তে উষ্মা প্রকাশ করছেন তাঁদের অনেকেই।
পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, আধিকারিকদের একাংশের তরফে গাফিলতি যে একেবারেই থাকে না এমন নয়। কিন্তু একমাত্র দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি ছাড়া বাকি দুই ক্ষেত্রে (ফুটপাত দখল ও বেআইনি নির্মাণ) রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটা বড় প্রভাব রয়েছে। কারণ স্থানীয় কাউন্সিলরের অনুমতি ছাড়া বা তাঁকে অন্ধকারে রেখে তাঁর এলাকায় বেআইনি নির্মাণ বা ফুটপাত দখল হয়ে গেল, এমন সচরাচর হয় না। নিজের ওয়ার্ডে কোথায় কী হচ্ছে, তা কাউন্সিলরেরা সকলে ভালই জানেন। সেখানে জনপ্রতিনিধিদের কোনও দায় থাকবে না, তাঁদের কোনও দোষ নেই, আর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে শুধুই পুর আধিকারিকদের, এটা কেমন কথা!
আরও একটি বিষয় ভাবাচ্ছে পুর আধিকারিকদের। তাঁদের চিন্তা, ফুটপাত দখল বা বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট করা হলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে পুর কর্তৃপক্ষ কি আদৌ সেই অভিযোগ অনুযায়ী পদক্ষেপ করার মানসিকতা দেখাতে পারবেন? না কি কাউন্সিলরদের কিছু বলতে না পেরে কাঠগড়ায় তোলা হবে সেই পুর আধিকারিকদেরই— প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ফুটপাত দখল বা বেআইনি নির্মাণ, কোনওটাই কি কাউন্সিলরের অনুমতি ছাড়া বা তাঁকে অন্ধকারে রেখে হয়? ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে কী হয়, কাউন্সিলরেরা সেটা জানেন না?’’ আর এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিরোধীদের কথা না হয় বাদই দিলাম। শাসকদলের কাউন্সিলরদের যদি মদত থাকে, তা হলে তা নিয়ে রিপোর্ট করা যাবে তো? বাস্তবে কী হয় সকলেই জানেন।’’ বিজেপি প্রভাবিত সংগঠন ‘কেএমসি শ্রমিক কর্মচারী সঙ্ঘে’র সাধারণ সম্পাদক অশোক সিংহ আবার বলছেন, ‘‘এ একেবারে তুঘলকি কাণ্ড! কাউন্সিলরদের মদত ছাড়া কোথাও কিছু হয় না কি! শাসকদলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রাহ্য করবে তো পুরসভা? না কি শুধুই আধিকারিকদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে?’’
যদিও ৭ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান জীবন সাহা বলছেন, ‘‘অন্য বরোর কথা বলতে পারব না। তবে আমার বরোয় কাউন্সিলরেরা বেআইনি নির্মাণ বা ফুটপাত দখলে মদত দিয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটেনি।’’ ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলছেন, ‘‘এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এসব ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের কোনও ভূমিকা নেই।’’
পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছেন, বেআইনি নির্মাণ বা ফুটপাত দখলের ক্ষেত্রে কোনও কাউন্সিলরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অবশ্যই এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বা সংশ্লিষ্ট পুর আধিকারিকের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শোনা হবে। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কথায়, ‘‘বেআইনি কাজের ক্ষেত্রে রাজনীতির রং দেখার কোনও প্রশ্নই নেই! কেউ এসে আমায় বলুক ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, তা তিনি যে দলেরই হোক না কেন, বেআইনি নির্মাণ করেছেন বা ফুটপাত দখলে প্রশ্রয় দিয়েছেন, তখন আমি বিষয়টা দেখব। আমাকে সরাসরি বিষয়টা জানাতে পারেন সকলে। কিন্তু আধিকারিকদের আগে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ, তাঁরাই নিয়মের আওতায় রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy