স্বাধীনতারও আগে অনুমোদন দেওয়া বাগড়ি মার্কেটের ‘স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং’ খুঁজে বার করল কলকাতা পুরসভা। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই বাগড়ি মার্কেটের নকশা খোঁজার জন্য তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন দফতরে। শেষ পর্যন্ত একটি নকশা হাতে এসেছে পুরসভার।
বাগড়ি মার্কেটের পোড়া কাঠামো এখন কী অবস্থায় রয়েছে, তা যাচাই করে দেখতে চলতি সপ্তাহেই আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা শহরে আসছেন। পরিদর্শক দলের হাতে কাঠামো সংক্রান্ত তথ্য তুলে দেওয়ার জন্যই ৭২ বছর আগের নকশা খুঁজে বার করেছে পুরসভা।
পুরসভা সূত্রের খবর, ১৯৪৫-’৪৬ সালের ওই নকশায় প্রাথমিক ভাবে চারতলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানাচ্ছেন, নকশা অনুযায়ী ওই মার্কেটটি পুরো লোহার কাঠামোর উপরে নির্মিত। আভিধানিক ভাষায় বাগড়ি মার্কেটের কাঠামোটি হল, ‘এনকেসড আরএসজে স্ট্রাকচার।’ অর্থাৎ, লোহার বিমকে ক্ষয় ও দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে কংক্রিটের বর্ম দেওয়া হয়েছে। এমনিতে আরএসজে বা যে কোনও স্টিলের নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘রোলড স্টিল জয়েস্ট’ ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত ভাবে একে ‘আই বিম’-ও বলা হয়। বাগড়ি মার্কেটের কাঠামোর ক্ষেত্রে ও রকম ‘রোলড স্টিল জয়েস্ট’ ব্যবহার করা হয়েছে বলে নকশায় ধরা পড়েছে। পুরসভার একাধিক দফতরের কাছে বাগড়ি সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই খোঁজ চলছিল।
শুধু এটুকুই নয়, বাগড়ি মার্কেটের আরও দু’টি তল, অর্থাৎ, পাঁচ ও ছ’তলার নকশার অনুমোদনও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে পুরসভা। তথ্য অনুযায়ী, ওই দুই তলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল বাগড়ি মার্কেটের প্রথম নকশার অনুমোদনের তিরিশ বছর পরে, অর্থাৎ, ১৯৭৬ সালে। সে বছরই ওই দু’টি তলের নকশার নবীকরণ করা হয়। পুর কর্তৃপক্ষ আপাতত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ওই নকশার প্রতিলিপি খতিয়ে দেখছেন। তবে ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক অনুমান, ওই নকশা সঠিক। তাঁদের বক্তব্য, যখন বাগড়ি মার্কেটকে প্রাথমিক ভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তখন সমস্ত নিয়ম মেনেই তা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই মার্কেটে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা যে ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে যে রক্ষণাবেক্ষণ বা নজরদারির প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘৭২ বছর আগে বাগড়ি মার্কেটের নকশার প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ার সময়ে বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা সে ভাবে ছিল না। কারণ, তখন শহরে এত বাড়ি বা মার্কেট ছিল না। ফলে চট করে বেআইনি নির্মাণ করাটা
সহজ ছিল না।’’
নকশায় বাগড়ি মার্কেটের কাঠামোর যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অগ্নিকাণ্ডের আগে পর্যন্ত তা যথেষ্ট শক্তপোক্ত ছিল বলেই মনে করছেন পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। তবে এই মুহূর্তে কাঠামোর কী অবস্থা, তা নিয়ে কিছু বলতে নারাজ কর্তারা। এ ব্যাপারে আইআইটি বিশেষজ্ঞদের উপরেই ভরসা করতে চাইছেন তাঁরা। আইআইটি-কে মার্কেট পরিদর্শন করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘যে কোনও নির্মাণের দু’টি ড্রয়িং হয়। একটি স্ট্রাকচারাল এবং আর একটি আর্কিটেকচারাল। আমরা স্ট্রাকচারাল ড্রয়িংটি খুঁজে পেয়েছি। আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’
এই পরিস্থিতিতে আজ, মঙ্গলবার শহরের একাধিক মার্কেট ঘুরে দেখবে পুর প্রতিনিধিদল। পুরসভার একাধিক দফতরের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখবেন, সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা-সহ সার্বিক নিরাপত্তা রয়েছে কি না। সেই অনুযায়ী
রিপোর্ট প্রস্তুত করা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।