Advertisement
E-Paper

সুরক্ষার পথ বেছে জীর্ণ বাড়ি ভাঙল পুরসভা

এক দিকে আইনি জটিলতা, অন্য দিকে মাথার উপরে ঝুলছে মৃত্যুভয়। এই অবস্থায় কোন পথে এগোবে প্রশাসন? আইন মানতে গিয়ে বিপদ এড়িয়ে যাবে? নাকি বিপদ নির্মূল করাকে অগ্রাধিকার দেবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ০০:২৯
ফেয়ারলি প্লেসে চলছে বাড়ি ভাঙার কাজ। শনিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

ফেয়ারলি প্লেসে চলছে বাড়ি ভাঙার কাজ। শনিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

এক দিকে আইনি জটিলতা, অন্য দিকে মাথার উপরে ঝুলছে মৃত্যুভয়। এই অবস্থায় কোন পথে এগোবে প্রশাসন? আইন মানতে গিয়ে বিপদ এড়িয়ে যাবে? নাকি বিপদ নির্মূল করাকে অগ্রাধিকার দেবে?

দ্বিতীয় পথই বেছে নিল কলকাতা পুরসভা। ফেয়ারলি প্লেসের ২৩ নম্বর এন এস রোডের তিন তলা বাড়িটির ক্ষেত্রে অন্তত তেমনটাই হল। আর তা করতে গিয়েই প্রতিরোধের মুখে পড়েন পুর-কর্মীরা। লাঠি চালায় পুলিশ। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয় জনা কুড়ি বাসিন্দাও।

২০১২ থেকেই মামলা চলছে বিপজ্জনক বাড়িটি ভাঙা নিয়ে। ২০১৪ থেকে একাধিক বার পৌঁছেছে পুরসভার নোটিসও। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি হয়নি— এই অজুহাত দেখিয়ে বাড়ি ছাড়ার নাম করছিলেন না ১৬০ জন ভাড়াটে। এ দিকে বুধবার সন্ধ্যায় ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে পড়ে স্ট্র্যান্ড রোডের দিকে বাড়িটির একাংশ। এর পর আর ঝুঁকি নিতে চায়নি পুরসভা। শনিবার সকালেই সদলবল এসে খালি করে দেওয়া হয় বাড়ি, শুরু হয় ভাঙাভাঙির কাজ।

বাড়ির সেক্রেটারি স্বপন চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি খালি করা যাবে না, এই মর্মে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চের নোটিসও এসে পৌঁছেছে আমাদের হাতে। তা-ও পুরসভা কোনও খবর ছাড়াই এখানে এসে বাড়ি খালি করতে শুরু করে।’’

বাড়ির নীচেই ছোট মুদির দোকান ছিল উমা রায়ের। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কিছুই জানতাম না। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ হঠাৎ পুলিশ এসে দোকান খালি করে দিতে বলে। দোকান থেকে টাকাপয়সা বার করারও সময়টুকু দেয়নি ওরা।’’ তাঁর ছেলে মনোতোষ কুমার রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সমস্যা তো নতুন নয়। ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ লেখা বহু নোটিস নজরে পড়ে কলকাতা শহরে। বছরের পর বছর লটকে থাকা সেই নোটিস শুধু নোটিস হয়েই ফিকে হয়ে গিয়েছে ভগ্নপ্রায় বাড়ির দেওয়ালে। মানিকতলা মোড়ের কাছে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের মুখে রাস্তার উপরেই কয়েক বছর ধরে বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে এমনই একটি বাড়ি। নীচে দু’তিনটি দোকান। গাড়ি বারান্দার স্তম্ভগুলির ভগ্ন দশা। এ নিয়ে আতঙ্কে এলাকাবাসীও। বড়বাজার সংলগ্ন পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট, বা মধ্য কলকাতায় এস এন ব্যানার্জি রোডেও গোটা কয়েক বাড়ি রয়েছে বিপজ্জনক অবস্থায়। ক্রিক রো-এ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে ঢোকার মুখে দু’পাশের ভগ্ন বাড়ির মাঝখান দিয়ে যেতে গিয়ে মনে হয় এই বুঝি ভেঙে পড়বে হুড়মুড়িয়ে! কলকাতা পুরসভার সরকারি হিসেবেই শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে খুবই বিপজ্জনক শ’পাঁচেক।

বাড়ির বাসিন্দাদের তো বটেই, পথচলতি মানুষকেও ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় ওই সব বাড়ির পাশ দিয়ে। এত দিন ধরে বারবার অভিযোগ উঠেছে, কলকাতা পুর-প্রশাসন চোখে ঠুলি এঁটে রয়েছেন। পুর-প্রশাসন যুক্তি দিয়েছে, বাড়িতে যাঁরা বাস করেন তাঁদের তো আর জোর করে সরিয়ে দেওয়া যায় না। কিছু ক্ষেত্রে মামলা চলে অনন্তকাল ধরে। তাই কিছু করার থাকে না। এমতাবস্থায় মানবিকতা এবং আইন— এই দুয়ের ফেরে বারবারই আটকেছে বাড়ি ভাঙার কাজ। বিপদের আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।

সেই ধারাকেই এ বার ভাঙল পুরসভা। স্থানীয় বোরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল সরকারের বক্তব্য, ‘‘ওই বাড়িটির হাল খুবই খারাপ ছিল। বুধবারের ঝড়ে স্ট্র্যান্ড রোডের দিকে একটি অংশ ভেঙেও পড়েছে। সৌভাগ্যবশত কেউ আহত হননি।’’ তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সাল থেকেই একাধিক বার নোটিস দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন ধারায়। বারবার বলা সত্ত্বেও কর্ণপাত করেননি বাসিন্দারা। তবে সাম্প্রতিক নোটিসে বাসিন্দাদের থাকার স্থগিতাদেশ দিলেও হাইকোর্ট এটাও উল্লেখ করেছে, যে বাড়িটির যে অবস্থা তাতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘এই অবস্থায় জনসুরক্ষার দিকটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছি আমরা। সব দিক বিবেচনা করেই ব্যবস্থা নিয়েছি। ওই বাড়িটির পাশেই স্ট্র্যান্ড রোড। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে তো পুরসভাকেই দায় নিতে হবে। তাই বাড়িটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

Dilapidated House Kolkata Municipality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy