Advertisement
E-Paper

খুন হতে পারেন, ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন বৃদ্ধা

গত ৪ এপ্রিল লেক থানা এলাকার যোধপুর পার্কের এক চারতলা আবাসনের তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় শ্যামলী ঘোষের (৭৫) মৃতদেহ। ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০১:১৯
আবাসনের এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন ওই বৃদ্ধা। —ফাইল চিত্র

আবাসনের এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন ওই বৃদ্ধা। —ফাইল চিত্র

পঁচাত্তর বছরের এক বৃদ্ধার খুনের তদন্তে নেমে তাঁর ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই ডায়েরির একটি পাতাতেই নিজের প্রাণহানির আশঙ্কার কথা লিখে রেখেছিলেন ওই বৃদ্ধা। লেখাটি পুরনো হলেও সেটিকেই বৃদ্ধার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে দেখছে পুলিশ। আগামী মাসে ওই ডায়েরির পাতাকে সামনে রেখেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারে পুলিশ।

গত ৪ এপ্রিল লেক থানা এলাকার যোধপুর পার্কের এক চারতলা আবাসনের তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় শ্যামলী ঘোষের (৭৫) মৃতদেহ। ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি। বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে পড়শিরা খবর দিয়েছিলেন বৃদ্ধার এক বোনকে। তিনি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এসে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ওই ফ্ল্যাটের দরজা খুললে দেখা যায়, ভিতরে মাটিতে পড়ে রয়েছেন শ্যামলীদেবী। গলায় কাপড় জড়ানো এবং মুখে বালিশ চাপা দেওয়া ছিল। মাথার পিছনে ছিল আঘাতের চিহ্ন।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার দু’দিনের মধ্যেই আবাসনের মালি স্বপন মণ্ডল ও নিরাপত্তারক্ষী সঞ্জীব দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধৃতেরা জেরার মুখে জানিয়েছিল, পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে ওই বৃদ্ধাকে। ওই দিন সকালে ফুল দেওয়ার নাম করে শ্যামলীদেবীর ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল তারা। প্রথমে বৃদ্ধাকে সাঁড়াশি দিয়ে আঘাত করা হয়। তাতে শ্যামলীদেবী অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাঁর গলায় কাপড় পেঁচিয়ে ও মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।

তদন্তে নেমে পুলিশ ওই দু’জনের কথায় নানা অসঙ্গতি পায়। তখনই তাদের আটক করা হয়। তাদের পোশাকে রক্তের দাগও পান তদন্তকারীরা। পরীক্ষা করে জানা যায়, শ্বাসরোধ করার সময়ে বৃদ্ধার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়েছিল। সেই রক্তই লেগে যায় ওই দু’জনের পোশাকে। খুনের অভিযোগে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হলেও তদন্তকারীদের বিশ্বাস, গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে বৃদ্ধার পরিচিত এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার নির্দেশেই ওই খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ হাতে না থাকায় ওই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের মাসিক অপরাধ বৈঠকে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা শ্যামলীদেবীর খুনের তদন্তের বিষয়টি জানতে চান তদন্তকারীদের কাছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, ওই খুনের তদন্তভার লেক থানার হাতে থাকলেও গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা সহায়তাকারীর ভূমিকায় রয়েছে। এ দিনের বৈঠকে পুলিশের আধিকারিকেরা জানান, দু’জন গ্রেফতার হলেও মূল অভিযুক্ত পলাতক। একই সঙ্গে তাঁরা জানান, নিয়মিত ডায়রি লিখতেন শ্যামলীদেবী। তদন্তের সময়ে তাঁর ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছিল। যা লেখা হয়েছিল খুনের বেশ কিছু দিন আগে। সেখানে পরিচিত এক জন তাঁকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ওই বৃদ্ধা।

লালবাজার জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া ওই দুই অভিযুক্ত বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে। ঘটনার মূল চক্রীকে গ্রেফতার করা না হলেও ওই ডায়েরির সূত্র ধরেই তার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মূলত বৃদ্ধার তিন হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি হাতানোই উদ্দেশ্য ছিল সেই চক্রীর। ডায়েরির পাতাতেও তা লেখা রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

Murder Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy