Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Pritam Bera

‘নিজেকে আবিষ্কার করতেই ঘর ছেড়েছিলাম’, বলল প্রীতম

অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রীতম তার এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, অমৃতসরের একটি ওয়াইফাই জোন থেকে ফেসবুক ব্যবহার করা হয়েছে।

বাঁশদ্রোণী থানায় প্রীতম বেরা। ছবি: সংগৃহীত।

বাঁশদ্রোণী থানায় প্রীতম বেরা। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:১২
Share: Save:

জয়েন্ট এন্ট্রান্সে র‌্যাঙ্ক হয়েছিল ৩৮৯। উচ্চমাধ্যমিকে নম্বর ৯০ শতাংশেরও বেশি। তার পরেও বাড়িতে মন বসছিল না ১৭ বছরের প্রীতম বেরার। যোধপুর বয়েজ স্কুলের ওই ছাত্র চেয়েছিল নিজের পথে বাঁচতে। তার যুক্তি, বড় হলে যে কেউ স্বাধীন ভাবে নিজের পথে চলতে পারে। আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম। সে কারণেই কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল বাঁশদ্রোণীর প্রীতম।

পাঁচ মাস ধরে পায়ে হেঁটে, ট্রেনে-বাসে-মোটরসাইকেলে চষে বেড়িয়েছে পঞ্জাব এবং উত্তরাখণ্ডের নানা প্রান্ত। শেষে থিতু হয়েছিল অমৃতসর স্বর্ণ মন্দিরে। এ বছরের জুন মাস থেকে জায়গায় জায়গায় পুলিশের তল্লাশি সত্ত্বেও অধরা থেকেছিল এই কিশোর। শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল সক্রিয় করে এক বন্ধুকে মেসেজ পাঠাতেই, সেই সূত্র ধরে স্বর্ণ মন্দিরের পাঠাগার থেকে নিখোঁজ কিশোরের হদিশ পায় বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ।

শনিবার কলকাতায় ফিরে আসার পরেও মানসিকতার বিশেষ কোনও হেরফের হয়নি মেধাবী ওই কিশোরের। কেন সে বাড়ি ছাড়ল এবং কেন সে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স থেকে শুরু করে পঞ্জাব-উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন শিখ এবং হিন্দু তীর্থস্থান ঘুরে বেড়াল তার কোনও স্পষ্ট উত্তর দেয়নি। তবে সে বার বার একটা কথাই বলেছে, ‘‘প্রাণী জগতের নিয়ম খুব স্পষ্ট। শাবককে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাবা-মা বড় করে। তার পর সেই শাবক নিজের মতো স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারে।” সেই ধারণা থেকেই বাড়ি ছাড়ে প্রীতম। এর আগেও দু’বার সে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে পাওয়া যায় এলাকাতেই।

আরও পড়ুন: বাঁশদ্রোণী থেকে অমৃতসর! হাতে আঁকা ডায়েরির রুট ম্যাপই উধাও ছাত্রের খোঁজ দিল পুলিশকে

এ বছর ২৩ মে হঠাৎ বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় সে। বাবা প্রদীপ বেরা অভিযোগ জানান বাঁশদ্রোণি থানায়। এর পর ১ জুন অপহরণের মামলা শুরু করেন তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী বলেন, “একটি ব্যাগ, দু’টি পোশাক, মোবাইল এবং কিছু নথি নিয়ে উধাও হয়েছিল প্রীতম।”

প্রায় তিন মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর অগষ্ট মাসের ৩ তারিখ হঠাৎ করেই প্রীতমের বন্ধ মোবাইল সুইচ়়ড অন অবস্থায় পাওয়া যায়। সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই বাঁশদ্রোণী থানার আধিকারিকরা উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথের এক সাধুর ডেরায় হদিশ পান প্রীতমের সিমকার্ড, ব্যাগ, ডায়েরি এবং কিছু নথির। সেই সময় গ্রেফতার করা হয় ওই দুই সাধু— শীতল দাস এবং রবি মহারাজকে। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল প্রীতমের জিনিসপত্র।

আরও পড়ুন: শব্দ থেকে ‘সংসার’ বাঁচাতে সতর্ক আলিপুর

ওই দু’জনকে জেরা করে জানা যায়, জুলাই মাসের ২০-২২ তারিখ পর্যন্ত প্রীতম ওই আশ্রমে ছিল। তার পর সে ওই সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে চলে যায়। আশ্রম থেকে মেলা প্রীতমের ডায়েরি থেকে উত্তরাখণ্ডের অনেক দুর্গম রাস্তার হাতে আঁকা মানচিত্র পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে মেলে শুকরাজ সিংহ নামে পঞ্জাবের ভাতিন্ডার এক ট্রাকচালকের নম্বর। পুলিশ তাঁকেও জেরা করে। প্রীতমের ছবি দেখে তিনি পুলিশকে বলেন, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে অমৃতসর থেকে পঠানকোটের রাস্তায় একটি পেট্রোল পাম্পে কয়েক মিনিট কথা বলেছিলেন তিনি প্রীতমের সঙ্গে। তার পর প্রীতম পঠানকোটের দিকে চলে যায়। এ রকম টুকরো টুকরো তথ্য জুড়ে পুলিশ অমৃতসরে তল্লাশি চালায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই ফিরতে হয়।

আরও পড়ুন: বাজি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি প্রস্তুতি

এরই মধ্যে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রীতম তার এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, অমৃতসরের একটি ওয়াইফাই জোন থেকে ফেসবুক ব্যবহার করা হয়েছে। আর যে সিম ব্যবহার করা হয়েছে সেটি শুকদেব সিংহ নামে স্বর্ণমন্দিরের এক সেবাইতের। শেষ পর্যন্ত মন্দিরের পাঠাগার থেকে হদিশ মেলে প্রীতমের। মন্দিরের লঙ্গরে খাওয়াদাওয়া করে সেখানেই গত কয়েক মাস ধরে ছিল সে।

আর তার আগে সে চষে বেড়িয়েছিল পঞ্জাব আর উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্ত। আর সেই ভ্রমণকাহিনি শুনে তাক লেগে গিয়েছে বাঘা বাঘা পুলিশ আধিকারিকদেরও। বাড়ি থেকে বাসে করে হাওড়া স্টেশন। সেখান থেকে ট্রেনে সোজা অমৃতসর। তার পর কখনও ৪০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বাটালা। ট্রেনে ইতারসি, দেহরাদূন। ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স, কেদার-বদ্রী-ঋষিকেশ ঘুরে আবার ফিরে আসে অমৃতসর। সব কিছুর পর তদন্তকারীদের একটাই আশঙ্কা, ফের নিজের মতো উধাও হয়ে যেতে পারে এই পড়ুয়া।

(কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pritam Bera Bansdroni Pilgrimage Missing Boy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE