Advertisement
E-Paper

বাসিন্দা ও পুরসভার উদাসীনতায় পুরনো বাড়ি যেন মরণফাঁদ

শতাব্দী প্রাচীন দোতলা বাড়িটি যে বিপজ্জনক, তা জানিয়ে একটি নোটিস ঝুলিয়েই দায় সেরেছিল কলকাতা পুরসভা। বেশ কিছু বছর আগে পুরসভার তরফে এই ঘোষণা করার পরেও তিনটি পরিবার সেই বাড়িতে নিশ্চিন্তে বসবাস করছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৭
আনন্দ পালিত রোডের সেই বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দ পালিত রোডের সেই বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।

শতাব্দী প্রাচীন দোতলা বাড়িটি যে বিপজ্জনক, তা জানিয়ে একটি নোটিস ঝুলিয়েই দায় সেরেছিল কলকাতা পুরসভা। বেশ কিছু বছর আগে পুরসভার তরফে এই ঘোষণা করার পরেও তিনটি পরিবার সেই বাড়িতে নিশ্চিন্তে বসবাস করছিল। দুই পক্ষের এই উদাসীনতা যে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা আরও একবার দেখিয়ে দিল শনিবার গভীর রাতের এই ঘটনা।

এন্টালির আনন্দ পালিত রোডে ওই দোতলা বাড়িটির একাংশ ভেঙে পড়ে শনিবার রাত পৌনে দুটো নাগাদ। তিনটি পরিবারের চোদ্দো জন মানুষ তখন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলেন ওই বাড়িতে। তাঁদের মাথার উপরে বাড়িটি ভেঙে পড়লে অনেকের প্রাণহানির সম্ভাবনা ছিল। যদিও এই ঘটনায় কেউ আহত হওয়ার খবর মেলেনি।

কলকাতা পুরসভার ডি়জি (বিল্ডিং) দেবাশিস চক্রবর্তী রবিবার জানান, কলকাতায় এরকম প্রায় ২৮০০-৩০০০টি প্রাচীন বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২৪০০টি বাড়িই রয়েছে উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরসভার পক্ষ থেকে নোটিস পাঠিয়ে বাড়ি খালি করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, পুরসভার সতর্কবাণী উপেক্ষা করে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই লোকজন থাকেন।

পুরসভা সূত্রের খবর, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে বাড়ি পুরো ভেঙে ফেলে সেখানে নতুন করে বাড়ি তৈরির আর্থিক সামর্থ্য নেই এই সব বহু পুরনো বাড়ির মালিকদের। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, শরিকি গন্ডগোলের জেরে নতুন করে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় কোনও থাকার জায়গার ব্যবস্থা না করতে পারায় বাড়ির মালিক এবং বহু দিন ধরে থেকে যাওয়া ভাড়াটেরাও থেকে গিয়েছেন ওই সব বিপজ্জনক বাড়িতে। অনেক ক্ষেত্রেই এটাও দেখা গিয়েছে, সামান্য ৫০-১০০ টাকা ভাড়ায় ওই সব বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরে থাকছেন ভাড়াটেরা।

কিন্তু, এ ভাবে থেকে যাওয়াটা কতটা বিপজ্জনক, যে কোনও মূহূর্তে প্রাণহানির আশঙ্কাও যে থেকে যায়, তারই প্রমাণ শনিবারের দুর্ঘটনা। যদিও এর পরেও ওই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেননি বাড়ির মালিক ও দুই ভাড়াটে পরিবার।

দমকল সূত্রের খবর, দোতলা ওই বাড়িটির কাঠের সিঁড়ি-সহ একাংশ ভেঙে পড়ে শনিবার গভীর রাতে। বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় উপরতলার বাসিন্দাদের। একতলা থেকে দোতলা ওঠার একটিমাত্র সিঁড়ি ভেঙে পড়ায় বাড়ি-মালিকের পরিবারের ৬ জন উপরে আটকে পড়েন। বাড়ির মালিক তপন দে এ দিন বলেন, ‘‘এক তলার ভাড়াটেরা পুলিশকে খবর দেন। রাত দুটো নাগাদ দমকলের কর্মীরা এসে আমাদের মই দিয়ে নামান।’’

রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল দোতলা বাড়িটির পুরোটাই বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুই ভাড়াটে পরিবার ছাড়াও নীচে একটি সব্জির দোকান রয়েছে। সেটি চালান বাড়ির মালিক তপনবাবুই। কেন থেকে গিয়েছেন এই বাড়িতে? ভাড়াটে সুকান্ত বসুর কথায়, ‘‘আর কোথায় যাব? বহুদিন ধরে এখানেই বাস করছি। বাড়িটি সংস্কারের বিষয়ে বাড়িওয়ালাকে বারবার বলেছি। কোনও লাভ হয়নি।’’ একই যুক্তি অন্য ভাড়াটে পরিবারগুলিরও। তপনবাবু জানান, অটো চালিয়ে তাঁর সংসার চলে। আর্থিক অনটন রয়েছে। এ ছাড়াও শরিকি ঝামেলার জন্য বাড়ি সংস্কারের কাজ করা হয়ে ওঠেনি।

Municipality Building
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy