বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ১০টা। জওহরলাল নেহরু রোড-লেনিন সরণির মোড়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকে ট্রেলার, ট্রাক, বাস, ম্যাটা়ডর সব জট পাকিয়ে আছে। আধ কিলোমিটার লম্বা লাইন।
দেখা গেল, লেননি সরণির মুখে জ্বলছে লাল বাতি। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার কথা, কিন্তু রাজভবনের দিক থেকে বাস-মিনিবাস ঢুকেই যাচ্ছে লেনিন সরণিতে। লাল বাতি গ্রাহ্য করছে না কেউ। হর্ন বাজিয়েই চলেছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছ’চাকার লরি। মোড়ে কোনও পুলিশ নেই।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-যদুনাথ রোডের মোড়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে লরি, ট্রেলার। তার মাঝে হেলমেটহীন তিন সওয়ারি নিয়ে এঁকেবেঁকে ছুটছে বাইক। বিধান সরণিতেও একই চিত্র। ট্রাম লাইনে পড়ে বাইকের চাকা পিছলে গেল বলে! যাঁরা অন্য গাড়িতে বসে দেখছেন, তাঁদের বুক ভয়ে কেঁপে উঠছে। কিন্তু বাইক আরোহীদের কোনও ভ্রূক্ষেপই নেই। রাস্তার ফুটপাথে কিছু দূরে দূরেই পুলিশের কিয়স্ক। কিন্তু পুলিশের চোখে কিছুই পড়ছে না। লাল বাতিতে সচল গাড়ি কিংবা হেলমেটবিহীন বাইক আরোহী ধরতে উদ্যোগী হতে দেখা গেল না পুলিশকে।
কে বলবে সাধারণ মানুষ এবং পুলিশকে পথ নিরাপত্তার পাঠ দিতে বৃহস্পতিবার বিকেলেই রাস্তায় নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং! মুখ্যমন্ত্রীর সেই পাঠ যে নাগরিক কিংবা পুলিশ, কারও মাথায় ঢোকেনি তা পরিষ্কার হয়ে গেল কয়েক ঘণ্টায়। উপরের দু’টি চিত্র কলকাতার সেই বেলাগাম যান চলাচল ব্যবস্থার প্রতীক। শিয়ালদহ কিংবা পোস্তা, বড়বাজার কিংবা কাশীপুর, সর্বত্রই এক চেহারা। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর পোস্টারই সার। হেলমেট ছাড়া গাড়ি-বাইকে তেল দেওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লাগাম পরানো যায়নি নিয়মবিহীন যান চলাচলে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা পুলিশের অনুষ্ঠান শুরুর আগে মাইকে বাজছিল বাইকচালকদের সচেতন করার জন্য একটি গান। যার মর্মার্থ, রাস্তায় বাইক নিয়ে কাটাকুটি খেলতে গেলে বিপদ অনিবার্য।
সে বার্তা যে শহরের বাইকচালকদের অধিকাংশের কানেই পৌঁছয়নি, তা স্পষ্ট।
নির্বিকার কি পুলিশও? রাত ১১টা পর্যন্ত শহরের রাস্তায় থাকার কথা ট্রাফিক পুলিশের। সওয়া ১০টায় লালবাজারের অনতিদূরে ধর্মতলার মোড়েই দেখা মিলল না কোনও পুলিশের। লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ‘‘এ রকম তো হওয়ার নয়। কেন পুলিশ ছিল না, দেখছি।’’
১১টার পরেই বা যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার? বৃহস্পতিবার হেলমেটবিহীন বাইক আরোহী কিংবা লাল বাতি উপেক্ষা করা লরি-ট্রাক আটকাতে দেখা যায়নি কোনও পুলিশকর্মীকে। কিয়স্কের পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাঁদের নয়। লালবাজার জানাচ্ছে, সারা রাত শহরের রাস্তায় টহল দেয় ট্রাফিক পুলিশের গাড়ি। তারাই সব দেখে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বিধান সরণিতে তেমন কোনও গাড়িও চোখে পড়েনি।
এ দিন ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বিধাননগর ও হাওড়া সিটি পুলিশ। সল্টলেকে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ জানান, আগামী এক বছর এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে যাঁরা সবচেয়ে ভাল কাজ করবেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে। হাওড়ায় এই উপলক্ষে র্যালি, প্রশ্নোত্তর পর্ব ও হেলমেট প্রদান হয়।