Advertisement
১৬ মে ২০২৪

হয় নেই, নয় দু’হাজার, ব্যাঙ্কে তাই লাইনও কম

সপ্তাহ দুয়েকের চেনা ছবিটা একটু একটু করে বদলাচ্ছে। তবে এখনও তা শহরের সর্বত্র নয়। অধিকাংশ ব্যাঙ্কের সামনে লাইনটা ছোট হচ্ছে। তার কারণ লেনদেন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে বলে নয় মোটেও। বরং ব্যাঙ্কের কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণেই কমেছে লাইন।

আছে শুধু দু’হাজারি নোট। বৃহস্পতিবার, দক্ষিণ কলকাতার এক ব্যাঙ্কের দরজায়। — সুদীপ্ত ভৌমিক

আছে শুধু দু’হাজারি নোট। বৃহস্পতিবার, দক্ষিণ কলকাতার এক ব্যাঙ্কের দরজায়। — সুদীপ্ত ভৌমিক

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৭
Share: Save:

সপ্তাহ দুয়েকের চেনা ছবিটা একটু একটু করে বদলাচ্ছে। তবে এখনও তা শহরের সর্বত্র নয়।

অধিকাংশ ব্যাঙ্কের সামনে লাইনটা ছোট হচ্ছে। তার কারণ লেনদেন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে বলে নয় মোটেও। বরং ব্যাঙ্কের কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণেই কমেছে লাইন। কোথাও আবার টাকা থাকলেও রয়েছে শুধুই দু’হাজারের নোট। সেই টাকা নিয়ে আরও সমস্যা বাড়বে। কারণ, এ সময়ে খুচরো পাওয়া বড়ই সমস্যার। তাই ২০০০ টাকার নোট তোলার জন্য ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দেননি অনেকেই।

শহরের অধিকাংশ ব্যাঙ্কের সামনে সপ্তাহখানেক আগের লম্বা লাইন প্রায় দেখাই যায়নি বৃহস্পতিবার। তবে বিকেল হতেই ধীরে ধীরে ভিড় জমেছে এটিএমের সামনে। সন্ধ্যার আগেই বড় হয়েছে লাইন। এর নেপথ্যেও সেই টাকা না থাকার সমস্যা।

এ দিন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিবেকানন্দ রোড শাখার সামনে বেলা সাড়ে এগারোটার সময়েও দেখা গেল, দাঁড়িয়ে রয়েছেন মাত্র জনা সাতেক গ্রাহক। দু’দিন আগেও যেখানে ছিল তিন তিনটে লম্বা লাইন। টাকা বদল, জমা ও টাকা তোলা— সবের জন্য লাইন দিতে হয়েছিল আলাদা আলাদা করে। এ দিন সে সব উধাও। লাইন রয়েছে, তবে একটি। সেখানে যাঁরা অপেক্ষা করছেন, বেশির ভাগ ওই শাখার গ্রাহক। তাঁদের অধিকাংশই টাকা জমা দিতে এসেছেন। ভিড় কম থাকায় এ দিন বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। মাত্র মিনিট পনেরোতেই ব্যাঙ্কের কাজ শেষ হয়েছে নন্দনা বসুর। হাতিবাগানের বাসিন্দা নন্দনার কথায়, ‘‘দিন কয়েক আগে ব্যাঙ্কে এসেছিলাম। এত ভিড় ছিল যে কাজ করতেই পারিনি। কিন্তু আজ আর বেশি সমস্যা হয়নি।’’

ব্যাঙ্কের সামনে লাইন কমার কারণ হিসেবে যেমন ব্যাঙ্কের পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণ বলা হচ্ছে, তেমনই অনেকে আবার অন্য একটি কারণও বলছেন। সেটা হল, মাসের শেষ দিকে টাকা তোলার হিড়িক এমনিতেই কমে। শেষ সপ্তাহে অধিকাংশেরই রাশ টেনে খরচ করার অভ্যাস।

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে আর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে এ দিন গ্রাহকদের লাইনই দেখা যায়নি। ওই শাখার কর্তারা জানান, দিন দুয়েক হল লাইন কমে গিয়েছে। ব্যাঙ্কে আসা এক জন জানালেন, টাকা জমা করতে এলে সমস্যা হচ্ছে না, টাকা তুলতে গেলে অনেক সময় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বলছেন বিকেলের দিকে যেতে। তখন হেড অফিস থেকে টাকা আসে। বারবার টাকার জন্য ব্যাঙ্কে ঘুরতে হচ্ছে।

তবে উল্টো ছবিও আছে। মানিকতলা শাখার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে এ দিনও ছিল লম্বা লাইন। গত দু’সপ্তাহের মতো এ দিনও সকাল সাড়ে দশটা থেকে গ্রাহকদের ভিড় করেছিলেন ব্যাঙ্কের সামনে। ওই শাখায় বেশির ভাগ গ্রাহক এ দিন টাকা জমা দিতে এসেছেন। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সোমনাথ সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘মাসের শেষ হতে চলল। এখন হিসেব করেই খরচ করতে হয়। তাই টাকা তোলা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই আপাতত। শুধু বাতিল নোট জমা করে ফেলতে পারলেই হল।’’

দীর্ঘ লাইন রয়েছে এটিএমের সামনেও। তবে দিনে নয়, তা বাড়ছে বিকেলের পরে। শহরের বহু এটিএমে দিনভর ‘নো ক্যাশ’ দেখানোর পরে সন্ধ্যায় পরিষেবা চালু হচ্ছে। রাসবিহারী, গড়িয়াহাট, ধর্মতলা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, গিরিশ পার্ক, শ্যামবাজারের মতো বহু এলাকার এটিএমের সামনেই ‘নো ক্যাশ’ বোর্ড টাঙানো রয়েছে। তাই ভিড় নেই। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই ব্যাগ কাঁধে অফিস ফেরতাদের লম্বা লাইন দেখা দিচ্ছে। যেমন কলকাতা পুরসভার পাশে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমের শাটার দিনভর নামানো ছিল। লেনদেন করার মতো উপযুক্ত অর্থ না থাকায় পরিষেবা বন্ধ। কিন্তু বিকেল হতেই লোক ভিড় জমাতে শুরু করল বন্ধ এটিএমের সামনেই। বন্ধ এটিএমের সামনে লাইন দিয়ে কী হবে? সেখানে দাঁড়ানো এক জন জানালেন, ফি দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওই এটিএমে টাকা আসে। তাই ভিড় এড়াতে বিকেল হতেই লাইনে তাঁরা।

যে সব এটিএমে ৫০০ টাকার নতুন নোট রয়েছে, সেগুলির চাহিদা সব চেয়ে বেশি। যেমন চৌরঙ্গির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে দিনভর লম্বা লাইন ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা রমেন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘নতুন ৫০০ টাকার নোট খুব দরকার। ২০০০ টাকায় তো কিছু কেনা যাচ্ছে না। অত ১০০ টাকার নোট নেই। প্রতিদিনের দরকারি জিনিস কেনার জন্য হাতে ৫০০ টাকা প্রয়োজন। এই এটিএমে সে টাকা মিলছে। তাই এখানে ভিড় হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

2000 rs notes Banks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE