Advertisement
০৩ মে ২০২৪

আগুন লাগলে ‘ভগবানই ভরসা’!

কোথাও দেওয়ালে ঝুলছে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। কোথাও আবার দীর্ঘ করিডর জুড়ে দেখাই মিলল না অগ্নি-নির্বাপক কোনও ব্যবস্থার। স্মোক ডিটেক্টর, ফায়ার অ্যালার্ম নেই বললেই চলে। কোথাও বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র।

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

কোথাও দেওয়ালে ঝুলছে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। কোথাও আবার দীর্ঘ করিডর জুড়ে দেখাই মিলল না অগ্নি-নির্বাপক কোনও ব্যবস্থার। স্মোক ডিটেক্টর, ফায়ার অ্যালার্ম নেই বললেই চলে। কোথাও বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। শহরের পাঁচ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে চোখে পড়ল এমনই আশঙ্কাজনক নানা ছবি। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এসএসকেএম এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল অগ্নি-যুদ্ধের পরিকাঠামো কার্যত নেই। আগুন লাগলে তবে কী হবে? একটি হাসপাতালের এক কর্মীর উত্তর, ‘‘ভগবানই ভরসা!’’

আর জি করের ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের মেঝেতে শুয়ে সোদপুর থেকে আসা এক বৃদ্ধ রোগী। তাঁর তিন দিকের দেওয়ালে ঝোলানো তিনটি অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। সবেরই মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখে। বারাসত থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয় শোভন হাজরা বলেন, ‘‘বড় দুর্ঘটনা না ঘটলে তো কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না।’’

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও বেশ কিছু অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে মাস খানেক আগে। গোটা চত্বরে চোখে পড়ে না ফায়ার অ্যালার্ম বা স্মোক ডিটেক্টরও। আগুন লাগলে এগুলি দিয়ে লড়বেন কী ভাবে, জানেন না কেউই। এক কর্মী বলেন, ‘‘সব ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিয়েছি।’’

ভাগ্যের উপরে ভরসা করেই দিন কাটছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। দোতলার ক্যাজুয়ালটি ওটি কমপ্লেক্সের বেশির ভাগ অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রের মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ। কোথায় ভূগর্ভস্থ জলাধার? কোথায় আপৎকালীন বেরোনোর দরজা বা স্মোক অ্যালার্ম? ক্যাজুয়ালটি ওটি কমপ্লেক্সের এক রোগীর আত্মীয় রাজু মজুমদার বলেন, ‘‘এই শহরে বছর কয়েক আগে আমরি হাসপাতালের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। তার পরেও যে কেন শিক্ষা নেয় না হাসপাতালগুলি?’’

আরজি করে রোগীর পাশেই মেয়াদ ফুরনো যন্ত্র। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

এসএসকেএমে যথেষ্ট সংখ্যক অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র আছে বলে জানালেন এক কর্মী। তাঁর কথা যে ঠিকই, তা মেন বিল্ডিংয়ে ডিপার্টমেন্ট অব অ্যানেস্থেশিওলজি, নিউরো সার্জারি বিভাগে ঘুরলেই চোখে পড়বে। কিন্তু বেশ কিছু বিভাগে আবার দেখা গেল, অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র বসানোর হুক থাকলেও যন্ত্র উধাও।

বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারে জামা-কাপড় ঝুলিয়ে রেখেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ব্লকের তিনতলার অর্থোপেডিক ওটি বিভাগের রোগীরা। তা থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগতে পারে জেনেও উদাসীন কর্তৃপক্ষ। রোগী কিংবা কর্মী, আপৎকালীন বেরোনোর রাস্তা চেনেন না অধিকাংশেই। প্রয়োজনের তুলনায় অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রের সংখ্যাও বেশ কম।

কেন এমন দশা শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলিতে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজার কাজ শুরু হয়েছে। কিছু দিনেই সব হাসপাতালে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Hospital Fire Fighting Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE