এ ভাবেই অটোর মধ্যে আটকে পড়েছিলেন তাপসবাবু। নিজস্ব চিত্র
বাঁ পায়ের হাঁটুর হাড় গুঁড়িয়ে গিয়েছে। চোট রয়েছে কোমরের হাড়েও। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাঁটুতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। প্লেট বসাতে হবে। খরচ লাখখানেক টাকা।
কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে? সেই চিন্তা করেই দুর্ঘটনায় জখম অটোচালক তাপস গঙ্গোপাধ্যায়কে সরকারি হাসপাতালে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছেন তাঁর স্ত্রী দীপালি। তাঁর কথায়, ‘‘শনিবার রাতে ওকে এম আর বাঙুরে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, হাঁটুর হাড় গুঁড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেখানে ওই মুহূর্তে শল্য চিকিৎসক না থাকায় ওকে যাদবপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে এনে ভর্তি করি, যাতে তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করা যায়। কিন্তু আমাদের পক্ষে অত খরচ করা সম্ভব নয়।’’ তিনি জানান, অভিযুক্ত ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করায় ট্যাক্সির মালিক এসেছিলেন। তিনি চিকিৎসার খরচ বহনের মৌখিক আশ্বাস দিলেও টাকা হাতে পাওয়া অবধি ভরসা নেই।
কিন্তু অটোর মালিক হিসেবে তাপসবাবুর তো গাড়ি বিমা করা রয়েছে। সেখান থেকে চিকিৎসার কোনও খরচ পাবেন না? দীপালিদেবী জানিয়েছেন, গাড়ি অন্য এক জনের কাছ থেকে কেনা। রেজিস্ট্রেশনের নথিতে আগের মালিকের নামে থাকায় বিমাও তাঁর নামেই রয়ে গিয়েছে!
শনিবার সন্ধ্যায় নিজের অটো নিয়ে পাটুলির বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাপসবাবু। পিছনের সিটে ছিলেন স্ত্রী দীপালি ও শিশুপুত্র দেবেশ। যাদবপুর থানার মোড়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল লাল হওয়ায় একটি বেসরকারি বাসের পিছনেই দাঁড়িয়ে পড়ে তাপসবাবুর অটো। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সময়ে আচমকা পিছন থেকে এসে একটি ট্যাক্সি অটোটিতে এত জোরে ধাক্কা মারে যে, সেটি গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের গায়ে ধাক্কা খায়। তাতে অটোর সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আর তাতেই পা আটকে যায় তাপসবাবুর। প্রথমে অটোর ভিতর থেকে তাপসবাবুকে বার করা যায়নি। পরে দমকল এবং কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্যাস কাটার দিয়ে অটোর রড কেটে তাপসবাবুকে উদ্ধার করে এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে রাতে অস্ত্রোপচার না হওয়ায় তাপসবাবুর পা বাঁচাতে তাঁর পরিবার যাদবপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করে।
দীপালি বলছেন, ‘‘এখন কোথা থেকে খরচ জোগাড় করব, জানি না। আবার হয়তো সরকারি হাসপাতালেই নিয়ে যেতে হবে।’’ প্রশ্ন উঠেছে, এ সমস্ত ক্ষেত্রে খরচ বহন কে করবে?
পুলিশ জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। সাধারণত, যে গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটায়, তার মালিকের উপরেই দায় বর্তায় জখম ব্যক্তির চিকিৎসার খরচ বহন করার জন্য তাঁর বিমা সংস্থাকে জানানো। সে ক্ষেত্রে গাড়িমালিকের ‘প্যাকেজ বিমা’ না থাকলে ওই সুবিধা মিলবে না। এ ক্ষেত্রে ট্যাক্সির মালিক সর্বজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, তাঁর ট্যাক্সির ‘থার্ড পার্টি বিমা’ করা রয়েছে। যার অর্থ, তাঁর ট্যাক্সির কোনও যাত্রী চোট পেলে তিনি বিমা সংস্থার কাছ থেকে টাকা পেতেন। কিন্তু তাপসবাবু অন্য গাড়ির আরোহী হওয়ায় টাকা পাবেন না। যদিও সর্বজিৎ বলেন, ‘‘আমি নিজে যতটা পারব, খরচ দেব বলে তাপসবাবুর স্ত্রীকে জানিয়েছি। কিন্তু আমারও ওই একটাই ট্যাক্সি। ওটা থেকে যা আয় হয়, তাতে আমাকেও সংসার চালাতে হয়। এর বেশি দেওয়া সম্ভব নয়।’’
সে ক্ষেত্রে উপায়? আলিপুর আদালতের আইনজীবী অঙ্কনা পাল জানিয়েছেন, বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে লালবাজার থেকে একটা ফর্ম পূরণ করানো হয়। মৃত্যু হলে সরকারি ভাবে তা থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং জখম হলে ১০-১৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। না-হলে মোটর ভেহিক্লস আইনে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ক্লেম’ করে মামলা রুজু করতে হয়। তার ভিত্তিতে আদালত দুর্ঘটনাগ্রস্তকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেটাও পেতে পেতে বছর গড়িয়ে যায় বলেই তাঁর দাবি।
সোমবার রাতে গড়িয়া-গোলপার্ক রুটের অটো ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে যাদবপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের একটি চুক্তি রয়েছে, যেখানে অটোচালক, মালিক কিংবা পরিবারের লোকজনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ছাড় মেলে। বাকিটা আমরা ইউনিয়ন থেকে তুলে দেওয়ার কথা ভেবেছি।’’ তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ইউনিয়নের তরফে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন দীপালি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy