Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দড়ি ধরার লোকই নেই, কে নিয়ম মানাবে পথচারীদের

একের পর এক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের একটি অংশকে দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল কলকাতা পুলিশ।

এ ভাবেই রাস্তায় পড়ে রয়েছে দড়ি। শোভাবাজার মেট্রোর সামনে। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই রাস্তায় পড়ে রয়েছে দড়ি। শোভাবাজার মেট্রোর সামনে। —নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০০:৪৩
Share: Save:

নিয়ম না মেনে লোকজনের রাস্তা পারাপার ঠেকাতে কলকাতা পুলিশ ঠিক করেছিল, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের খানিকটা অংশ গার্ড রেল ও দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। কিছু ক্ষণ অন্তর সেই দড়ি তুলে পারাপার করানো হবে পথচারীদের। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ভোটের বাজারে দড়ি ধরার লোকই নেই! ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে পুলিশের পথ-নিরাপত্তার এই আয়োজন। এমনটাই দেখা গিয়েছে উত্তর কলকাতার দুই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা শোভাবাজার ও শ্যামবাজারে।

একের পর এক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের একটি অংশকে দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল কলকাতা পুলিশ। একই রোগ ধরা পড়ে শ্যামবাজারের ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ে। গত মার্চে হওয়া কলকাতা পুলিশের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের পরে ওই দুই এলাকার ট্র্যাফিক গার্ডের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন ডিসি (ট্র্যাফিক)। তখনই জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন ওই অংশে গার্ড রেল বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।

কারণ হিসেবে বলা হয়, মেট্রো থেকে বেরিয়েই ট্র্যাফিক আইন না মেনে দ্রুত রাস্তা পারাপার করার প্রবণতা দেখা যায় পথচারীদের একাংশের মধ্যে। তাতেই ঘটে বিপদ। ঠিক হয়, মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোনোর পরে যাত্রীরা গার্ড রেলে ঘেরা অংশে দাঁড়াবেন। গার্ড রেলের গায়ে লাগানো থাকবে দড়ি। ট্র্যাফিক সিগন্যাল মেনে সেই দড়ি তুলে পথচারীদের রাস্তা পারাপার করাবেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। সেই প্রস্তাব প্রশংসিত হয় ট্র্যাফিক পুলিশকর্তাদের কাছে। একই পথে হেঁটে শ্যামবাজার মোড়েও গার্ড রেল বসিয়ে দড়ি দিয়ে ঘিরে দেয় পুলিশ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কিন্তু শ্যামবাজারে মানা হলেও শোভাবাজারে এই প্রস্তাব ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো’র পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ! গার্ড রেলের গায়ে লাগানো দড়ি ধরার লোকই থাকছে না। ফলে অফিসের সময়ে তো বটেই, দিনের অন্য সময়েও ট্র্যাফিক আইন না মেনে অবাধে চলছে রাস্তা পারাপার।

এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, গার্ড রেল রয়েছে নিজের জায়গায়। কিন্তু, তার গায়ে লাগানো দড়ি মাটিতে লুটোচ্ছে। সিগন্যাল মানার বালাই নেই। পথচারীরা মেট্রো থেকে বেরিয়ে দড়ি মাড়িয়েই অবাধে রাস্তা পেরোচ্ছেন। মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোনো এক জন সৌরভ জানা বললেন, ‘‘অত দেখলে হবে না। দড়ি মানতে গেলে সময়ে অফিস পৌঁছব কী ভাবে?’’ রাত ৮টার পরে সেই জায়গার চিত্রটা দাঁড়াল আরও ভয়াবহ। গার্ড রেল ঠেলে ওই ঘেরা অংশেই তখন অটোস্ট্যান্ড। ঘেরা জায়গায় দাঁড়িয়েই যাত্রী তোলা চলছে। সিগন্যাল খোলা থাকা অবস্থাতেই মাঝরাস্তায় ছুটে গিয়ে বাস, অটো ধরছেন অনেকে।

বিপদ ঘটলে দায় কার? পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ চলাকালীন পথচারীদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছিলেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলছেন, ‘‘লোকজন সাবধান না হলে বিপদ আটকানো কঠিন।’’ সিভিক ভলান্টিয়ার না থাকার ব্যাপারে তিনি কিছু না বলতে চাইলেও শ্যামপুকুর থানার (এলাকাটি ওই থানার অন্তর্গত) দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বললেন, ‘‘ভোটের বাজারে লোক কই? কোথাও দড়ি ধরার লোক পাওয়া গেলে ভাল হত।’’ জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের এক আধিকারিকও বলেন, ‘‘গার্ড রেল বসানোর পরিকল্পনা আমারই মাথায় এসেছিল। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা থাকেন। কিন্তু, বিকেলের পরে একটু ঢিলে হয়।’’

তবে সমাধান কী? উত্তর নেই কোনও মহলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic police KOlkata police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE