সুষ্ঠু অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থেকে বিপদের সময় দ্রুত বেরনোর পথ— বহু হোটেলেই এ সবের বালাই নেই। করাও হয় না। কারণ হোটেল মালিকদের যুক্তি, নিয়ম মেনে সব ব্যবস্থা চালু করতে গেলে হোটেল বন্ধ রাখতে হবে। হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পূর্বাঞ্চলের সদস্য অরবিন্দকুমার সিংহের কথায়, ‘‘এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলতে চাই। বহু পুরনো হোটেলে নিয়ম মেনে সব চালু করতে গেলে হোটেল বন্ধ করে দিয়ে তা করতে হবে। আমাদের পুনর্বাসন দরকার।’’
আর এই যুক্তি দেখিয়েই শহরের বহু হোটেল ন্যূনতম সুরক্ষাবিধি মানে না। হো চি মিন সরণির গোল্ডেন পার্ক হোটেলে আগুনে দু’জনের মৃত্যুর পরে শহরের মাঝারি ও ছোট হোটেলগুলির চেহারা দেখতে গিয়ে এমনই ছবি উঠে এসেছে। সদর স্ট্রিটের একটি হেরিটেজ হোটেলের কর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের স্মোক অ্যালার্ম, জলাধার, পাইপলাইন থাকলেও স্প্রিঙ্কলার নেই। একই হাল ওই এলাকার বেশ কয়েকটি মাঝারি হোটেলের। ছোট হোটেলগুলির বেশির ভাগেই এ সবের কোনও বালাই নেই।
নেই-রাজ্য
প্রশ্ন দমকল বলল
• স্মোক ডিটেক্টর কাজ করেছিল? না
• ডাক্টের ধোঁয়া রুখতে ড্যাম্পার সক্রিয় ছিল? না
• এগজস্ট ফ্যান সময় মতো চলেছিল? না
• উদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত হোটেল-কর্মী ছিলেন কি? না
এগুলো যাদের দেখার কথা, সেই দমকলের নজরদারির হাল তথৈবচ। দমকলের এক কর্তার কথায়, ‘‘কোনও হোটেল বা অফিস ছাড়পত্র পুনর্নবীকরণ করতে না এলে আগে নিজে থেকে তদারকিতে যেত দমকল বিভাগ। সেই ব্যবস্থা অনেক দিন আগেই উঠে গিয়েছে।’’ তার সঙ্গেই রয়েছে প্রভাবশালীর চাপ। দমকলের প্রাক্তন এক কর্তা বলছেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে নিউ মার্কেট এলাকার দু’টি হোটেলকে গাফিলতির অভিযোগে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে কিছুই করা যায়নি।’’ দমকল কর্তাদের একাংশ বলছেন, পুরনো হোটেলগুলিতে অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই, মানাও হয় না। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র তো দূর, ঘিঞ্জি হোটেলগুলিতে আপৎকালীন পথ বা কোথাও দু’টি সিঁড়িও থাকে না। বেশির ভাগ মাঝারি হোটেলে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম পরিত্যক্ত আসবাবের মতো পড়ে থাকে। দমকল ছাড়পত্রের রীতিমাফিক সুরক্ষা মহড়াও কেউ করে না। থাকেন না অগ্নি-নির্বাপণের জন্য পেশাদার কর্মীও। প্রশ্ন উঠেছে, গাফিলতির জন্য যদি হোটেলগুলির দিকে আঙুল ওঠে, তবে নজরদারির অভাবের জন্য দমকল বিভাগের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন?
দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘দমকল বছরে এক বার পরিদর্শন করে। কিন্তু নিত্য দিন নজরদারি তো সম্ভব নয়।’’ কিন্তু বহু হোটেল তো দীর্ঘদিন ধরেই নিয়ম মানছে না? এ প্রশ্নের জবাব দেননি মন্ত্রী। এসি ডাক্টের মাধ্যমে ধোঁয়া ছড়িয়ে কী বিপদ হতে পারে, তা ২০১১ সালে দেখিয়েছিল আমরি হাসপাতাল। তার পরে শহরে অগ্নিসুরক্ষা লাগু করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হয়েছিল। সেই কমিটির ভূমিকা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন উঠে গেল।
নেই-রাজ্য