Advertisement
E-Paper

স্টিফেন কোর্টকে দেখেও শেখেনি উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র

আচমকা আগুন লেগে গেলে পালানোর কোনও পথ নেই। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের প্রধান দু’টি সিঁড়ি পাশাপাশি। সে দু’টি খোলা। রয়েছে আরও চারটি সিঁড়ি। যেগুলি আপৎকালীন প্রয়োজনে ব্যবহার করার কথা। সোমবার বিকেলে সেই আপৎকালীন পথে পালাতে গিয়ে আটকা পড়ে গিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষাকর্মী ও গবেষকদের অনেকেই।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০১:২৩
ঝুলছে তালা। বেরোনোর পথ বন্ধ। — নিজস্ব চিত্র

ঝুলছে তালা। বেরোনোর পথ বন্ধ। — নিজস্ব চিত্র

আচমকা আগুন লেগে গেলে পালানোর কোনও পথ নেই।

বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের প্রধান দু’টি সিঁড়ি পাশাপাশি। সে দু’টি খোলা। রয়েছে আরও চারটি সিঁড়ি। যেগুলি আপৎকালীন প্রয়োজনে ব্যবহার করার কথা। সোমবার বিকেলে সেই আপৎকালীন পথে পালাতে গিয়ে আটকা পড়ে গিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষাকর্মী ও গবেষকদের অনেকেই। কারণ, ওই জরুরি নির্গমন পথগুলির কোনওটি আবর্জনার স্তূপে ঠাসা। কোনওটিতে কোল্যাপসিব্‌ল গেটে ঝুলছে বড় তালা। বহু দিন যাবৎ তা খোলাই হয়নি। মঙ্গলবার সেই বন্ধ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছ’বছরের পুরনো স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ভিতরে তখন দাউদাউ আগুন জ্বলছে। প্রাণ বাঁচাতে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন ১৭ জন ভীত, সন্ত্রস্ত মানুষ। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন হাওড়ার সত্যজিৎ সেনগুপ্ত। সিঁড়ির মাথায় পৌঁছে দেখেন, কোল্যাপসিব্‌ল গেটে তালা মারা। পিছন থেকে সিঁড়ি বেয়ে তখন ছুটে আসছে আগুন। বহু চেষ্টা করে, লাথি মেরে, ঝাঁকিয়েও তালা খুলতে পারেননি সত্যজিৎ ও তাঁর অসহায় সঙ্গীরা। দু’দিন পরে তাঁদের পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া দেহগুলো উদ্ধার করেন দমকলকর্মীরা।

ঘটনাচক্রে আজ, বুধবার সেই স্টিফেন কোর্টের ঘটনার ছ’বছর পূর্তি হচ্ছে। পার্ক স্ট্রিটের সেই আগুন কেড়ে নিয়েছিল ৪৩টি প্রাণ। তার পরে ২০১১ সালে শহরের বুকে আমরি হাসপাতালে আগুন লাগে। মারা যান ৯১ জন। দুই অগ্নিকাণ্ডের পরে বিভিন্ন ভবনে অগ্নি-সুরক্ষার বিধি কড়া ভাবে কার্যকর করার জন্য একের পর এক নির্দেশ জারি করেছিল রাজ্য সরকার। বেশ কয়েক দিন তল্লাশি অভিযানও হয় শহর জুড়ে। তার পরে সব যে আবার আগের মতোই চলছে, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের ঘটনা থেকেই তা পরিষ্কার।

সোমবারের আগুনে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সংগ্রহশালাটি পুরো পুড়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে শতাধিক বছরের পুরনো প্রাণী সংগ্রহ, লুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীর ডিএনএ। আগুন আর কিছুক্ষণ আগে লাগলে কী হতো, মঙ্গলবার তা ভেবেই শিউরে উঠেছেন অধ্যাপকেরা। আপৎকালীন সিঁড়ি আটকে থাকার প্রসঙ্গ উঠতেই বিভাগীয় প্রধান পার্থিব বসু বলেন, ‘‘ফায়ার অ্যালার্মই নেই তো এখানে!’’ পাশ থেকে এক অধ্যাপকের মন্তব্য, ‘‘আগুনটা আর দু’ঘণ্টা আগে লাগলে কলেজে তিন হাজার ছাত্রছাত্রীর কী হতো, কে জানে!’’

অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ‘‘দু’টি খোলা সিঁড়ির মুখ পর্যন্ত চলে এসেছিল আগুন। দোতলায় তো বটেই, তিন-চার-পাঁচ তলায় হাতে গোনা যে কয়েক জন পড়ুয়া, শিক্ষক, কর্মী, গবেষকেরা ছিলেন, তাঁদের নীচে নেমে আসার পথ তখন পুরোপুরি বন্ধ। ভয় পেয়ে তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে যান।

অদ্ভুত সেই সমাপতন। স্টিফেন কোর্টের মতোই। সে দিন ছাদের সিঁড়ির কাছে গিয়ে আগুনে পুড়ে মৃত সত্যজিতের স্ত্রী সাধনা সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘এত কিছু পরেও কেন টনক নড়ে না এঁদের? এই সায়েন্স কলেজের আগুনটাও যদি স্টিফেন কোর্টের মতো বড় হতো, কী হতো তখন?’’ এই প্রশ্নের জবাব নেই সায়েন্স কলেজের অধ্যাপকদের কাছে। অ্যালার্ম নেই, স্প্রিঙ্কলার (আগুন লাগলেই সিলিং থেকে যে যন্ত্র চার দিকে জল ছেটায়) নেই, অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র নেই, পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই, যেন সাক্ষাৎ জতুগৃহ। বিভাগের অধ্যাপক এনা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ভাবতে পারেন, কোনও রকম ফায়ার ড্রিলই হয় না এখানে!’’

এই অব্যবস্থায় ক্ষুব্ধ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মারজিত নিজেই। সায়েন্স কলেজের দু’টি সিঁড়ি বাদ দিয়ে বাকি চারটি সিঁড়ি যে নিয়মিত পুরনো রদ্দি আসবাব ও বাতিল হয়ে যাওয়া যন্ত্র রাখার কাজে ব্যবহার হতো, সে সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে অদ্ভুত সব নিয়ম। আসবাব বা যন্ত্র বাতিল হলেও তা ফেলা যাবে না। বিক্রি করতে হবে। কবে বিক্রি হবে, তার ঠিক নেই। তাই ফেলে রেখে দাও!’’ আগুন বা যে কোনও বিপদ সম্পর্কে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, ছাত্রছাত্রী, দারোয়ান— সকলেরই যে আগাম সচেতনতার অভাব রয়েছে, তা-ও স্বীকার করে নিয়ে সুগতবাবু বলেন, ‘‘এপ্রিলের মধ্যে সব খোলনলচে বদলে ফেলা হবে। বিদ্যুতের লাইনের অবস্থাও খারাপ। সিইএসসি এবং দমকলের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’

fire control system Ballygunge Science College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy