দুর্ঘটনার পরে জনরোষে তছনছ হকারদের স্টল। (ইনসেটে) শুভশ্রী। সোমবার। ছবি: অরুণ লোধ।
এক জনের গাড়ি চালানো শেখার ‘নেশা’ কেড়ে নিল বছর তিনেকের একটি শিশুর প্রাণ। পা হারালেন শিশুর মা।
সোমবার সকাল সাতটা। স্কুলে যাবে বলে মা শ্যামলী দাসের হাত ধরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল ছোট্ট শুভশ্রী (৩)। অপেক্ষা করছিল কখন স্কুলের গাড়িতে বন্ধুরা আসবে। কিন্তু আচমকাই একটি ট্যাক্সি ধেয়ে এসে শুভশ্রী এবং তার মাকে ধাক্কা মারে।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
পুলিশ জানিয়েছে, শুভশ্রী বেহালার ন্যাশনাল জেমস্ স্কুলের শিশু শ্রেণির ছাত্রী। এ দিন সকালে সরশুনা থানার বীরেন রায় রোড (পশ্চিম)-এর শিবরামপুর মোড়ের কাছে মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল সে। তখনই এক ট্যাক্সিচালকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে গা়ড়ি চালানো অভ্যাস করছিলেন বাবলু সাউ নামে স্থানীয় এক যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁর ট্যাক্সি ধাক্কা মারে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মা-মেয়েকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশুটির। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা ট্যাক্সিটিকে ঘিরে ফেলেন। শিশুটির মা শ্যামলীদেবীকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। একটি পা বাদ গিয়েছে তাঁর। পুলিশ এলে বাবলুকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, ট্যাক্সিচালকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তিনি ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন বাবলু। আসল ট্যাক্সিচালকের খোঁজ করছে পুলিশ।
এর পরে বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ ওই রাস্তার ফুটপাথে স্থানীয় হকারদের দোকান ভাঙচুর করতে শুরু করে এলাকাবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ফুটপাথে অত দোকান থাকার জন্যই মানুষ বাস বা গাড়ি ধরার জন্য ফুটপাথে দাঁড়াতে পারেন না। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতির অভিযোগ তুলে প্রায় আধ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধও করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিষয়টি নিয়ে কি বলছেন স্থানীয় কাউন্সিলর?
১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নীহার ভক্ত হকারদের পাশাপাশি আঙুল তুলেছেন বেআইনি পার্কিং-এর দিকেও। তাঁর অভিযোগ, হকারদের পাশাপাশি রাস্তার দু’দিকে সারি দিয়ে গাড়ি রাখা থাকে। ফলে বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ মানুষ দাঁড়াতেই পারেন না। রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘এই এলাকায় বাসস্ট্যান্ড গাড়ির গ্যারেজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেআইনি গাড়ি পার্কিং এবং ফুটপাথে বেআইনি ভাবে বসা হকারদের তুলে দেওয়ার জন্য বারবার পুলিশকে বলেও কোনও কাজ হয়নি।’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাস দেড়েক আগেই মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার পথে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কাশীপুরের নিউ ঝিল রোডের বাসিন্দা প্রথম শ্রেণির ছাত্রী স্নিধি পাণ্ডে-র (৭)।
ওই দিন সকালে একই ভাবে চিৎপুর থানা এলাকার চিড়িয়া মোড়ে রাস্তার পাশে গাড়ি ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিল স্নিধি। আচমকাই একটি লরি মোড় ঘুরতে গিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে তার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা আগুন লাগিয়ে দেয় ঘাতক লরিটিতে। গ্রেফতার করা হয় ওই লরির চালক সঞ্জয় যাদবকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy