সিন্ডিকেটের নানা ধরনের তোলাবাজির অভিযোগে নিউ টাউনে নির্মীয়মাণ বহুতলের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এ বার সেখানেই রক্তদান শিবিরের জন্য বড় অঙ্কের চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এক নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারীকে মারধরের অভিযোগ উঠল। আরও অভিযোগ, শুধু মারধরই নয়, চাঁদা না দিলে ইমারতি দ্রব্য ভর্তি গাড়ি এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। নিউ টাউন থানায় মারধর ও হুমকির অভিযোগ দায়ের করেছেন নুর ইসলাম মণ্ডল নামে ওই সরবরাহকারী।
নিউ টাউনে বহুতল তৈরির জন্য নির্মাণসামগ্রী বোঝাই গাড়ি থেকে নানা অজুহাতে জোর করে টাকা তোলার অভিযোগ আগেই ছিল। এলাকাবাসীদের দাবি, স্থানীয় দাদাদের ‘ভয়ে’ থানায় অভিযোগ করার সাহস করেন না অনেকেই। এই শনিবারের এই ঘটনায় নিউ টাউন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ায় তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নুর ইসলাম নামে ওই সরবরাহকারীর বাড়ি নিউ টাউন থানার নবাবপুরে। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, সাধারণত বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্মাণসামগ্রী বোঝাই লরি অ্যাকশন এরিয়া টু-র আকাঙ্ক্ষা মোড়ের কাছে জড়ো হয়। শনিবার সকালে এ রকমই একটি পাথর-বোঝাই লরি ওখানে পৌঁছয়। অভিযোগ, নবাবপুরেরই একটি স্থানীয় সংগঠন ওই চালকের কাছে এসে রক্তদান শিবিরের জন্য ২০০০ টাকা চায়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন ওই লরি চালক। এতেই গোলমাল বাধে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নুর ইসলাম। তিনি বলেন, “ওই লরি বোঝাই পাথর এক স্থানীয় সিন্ডিকেটকে সরবরাহ করার কথা আমার। চাঁদা নিয়ে গোলমালের প্রতিবাদ করাতে কয়েক জন যুবক আমাকে হুমকি দেয় চাঁদা না দিলে লরি সাইটে ঢুকতেই দেওয়া হবে না। কয়েক জনের সঙ্গে বচসাও শুরু হয়। তার মধ্যেই কয়েক জন আমাকে মারধর করতে থাকে।”এর পরে নুর ইসলামের পরিচিত কয়েক জন সরবরাহকারী এসে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় রেকজোয়ানি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওই এলাকায় ইমারতিদ্রব্য সরবরাহ ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ, স্থানীয় সিন্ডিকেটরা ট্রাকচালদের উপরে চাঁদার জুলুম থেকে শুরু করে নানা ধরনের তোলাবাজি সবই করে থাকে। সম্প্রতি রক্তদান শিবিরের নাম করে কয়েকটি সিন্ডিকেট এক এক জনের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলেছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, অনেক সময়ে চাঁদার রসিদ পর্যন্ত দেওয়া হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরবরাহকারী বলেন, “সিন্ডিকেটগুলোর সঙ্গে বেশি ঝামেলায় যাই না। বেশি ঝামেলা করলে যদি ওরা সাইটে ট্রাক ঢুকতে না দেয়? তা হলে তো আমাদের পুরোটাই লোকসান। তাই অনেক সময়ই বোঝাপড়া করে নিতে হয়।”
নুর ইসলামও বলেন, “বাধ্য হয়েই থানায় জানালাম। না হলে এই জুলুম বাড়তেই থাকবে। ওরা আমাদের লরির কাছ থেকে ২০০০ টাকা চাঁদা চাইলেও রসিদ দেয়নি। তবে আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করার সময়ে চাঁদার পরিমাণ উল্লেখ করেছি।”
যদিও রক্তদান শিবিরের নাম করে এ ভাবে চাঁদা তোলার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই সংগঠনের এক সদস্য আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,“মারপিটের ঘটনা চাঁদার জুলুম থেকে হয়নি। কারও কাছ থেকেই জোর করে চাঁদা তোলা হয় না। এই ঘটনা দু’জন সরবরাহকারীর নির্মাণসামগ্রী কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে।”
বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “আমরা বার বার বলেছি জুলুমবাজি হলেই অভিযোগ দায়ের করতে। কেউ নাম গোপন রেখেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। শনিবারের ঘটনার তদন্ত করে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy